রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

দেলোয়ার হোসেন



দেলোয়ার হোসেন

রাত বড় মায়াবী মাতাল

পৌষের হিম হলুদ শর্ষেতেও কাঁপন তোলে
টপটপ শিশিরের ঘায়ে ভেঙ্গে যায় লাউফুলের কুমারিত্ব
বাদুরপাখার দৌরত্বে সুপারি বাগানে দৈত্য নাচে
শিয়াল-কুত্তার খিস্তি-খেউড়ে ঘুম ভাঙ্গে মায়াবী চাঁদের!
রাত বড় মায়াবী মাতাল!
পান-বরজের নেংটি গুহায় চোখ জ্বলে, মন পোড়ে,
বিশ্রি ভারাক্রান্ত মন শরীরে টেকে না
বাওড়ের বেপরোয়া হাঁসের সাঁতার গলার কাছে দলা পাকায়
ভয়ানক বিবমিশায় গুলিয়ে ওঠে লেপ-কাঁথা
ফোঁসফোঁস শব্দে ঘুমানো সংসারে আগুন দিয়ে, দূ'হাতে চাঁদ
নিয়ে দলিত মথিত করি!
রাত বড় মায়াবী মাতাল!
চাঁদের কলংক নেই রাতের কাছে
পোড়ামন, কার্তিকের কুত্তার মতো বেঘরে সিঁদ কাটে!
আপন পুরুষ আর আপন পৌরুষে
রণ আর রমনের মর্মার্থ খোঁজে! জীবন জীবের ক্ষুরধার
জৈবিকতায় আত্মহুতি দেয়! নগ্ন চাঁদের গতরে
আঁচড় কাটে মাতাল ঈশ্বর!
রাত বড় মায়াবী মাতাল!






বাউল

সুর ভেসে আসে বাউলের
আঠারোবেকিতে ঢেউ ওঠে সেই সুরের মাতমে!
সুর মধুমতি থেকে ভৈরব হয়ে রূপসার ঘাটে পানসী ভিড়ায়
মিশে যায় ধানক্ষেতে!
মিলন-বিরহ-অনুতাপ
ইহকাল-পরকাল-পরবাস ভৈরবী লহরীতে
সুরের মোহে নাচে! জীবন-যৌবন সব হয়ে যায় নদী!
নারী ঘাসফড়িং প্রকৃতির সবুজ জমিন
লালনের আত্মাহয়ে অহরহ হাসে!







মাটির মানুষ

পৃথিবীর ভিড় ঠেইলে আগে বাড়াই
মানষির মধ্যি হারাই-পলাই
হাজার মানুষ লক্ষ মানুষ, মানষি মানষি সয়লাব
কিন্তুক এতোসব মানষির মধ্যিও রক্ত ডাইকে কয়-
তুই লালমিয়ার পোতা না?
চাঁদমিয়ার ছাওয়াল? হালকর্ষিত হাতে যে অবাধ কিষেণ
কোলে তুইলে নেতো তোরে! কোদাল কোপানি ঘাম-ক্লেদ
মাহা বুকি ঝাপায়ে পড়তি তুই পরম আস্থায়! আয়েশা বেগম
কিডা? তোর জন্মদাত্রী? পোড়াকপালির আশা-প্রত্যাশাগুলো
প্যাটের সাত সাতজন কীটে ছিন্ন-ভিন্ন কইরে ছাড়ছির না?
তোর বাপের ধান কাটার ছন্দ, মায়ের উনুনের গনগনে দুঃখগুলো
তোর কোন কবিতায় পাখির মতোন ওড়ে?
তোর বুকির মধ্যি পুষা কবি
চৈতন্যে-নিমগ্নে কোনোসুমা কি শোনে সেই কালা কিষেণের গান!
কষ্ট হয় তোর জন্যি, মায়া মায়া ঠেহে বুকি
যদি কবি পুষিস, তোর গতরে
কালা কিষেণের রোদি পুড়া তামাটে অক্ষরগুলো ক্যান দেহি না!






উভচর

বেশ আছি তো !
মানিয়ে নিয়েছি পোষমানা ভোঁদড়ের মতো উভচর জীবন
মালকোঁচা নেংটি পরে হালটের ধারালো লাঙ্গল ঠেলে
যারা সবুজ ধানের স্বপ্নবীজ ছড়ায় চিরকাল,
তাদের রক্তে আমার শরীর। ঢেঁকির যৌবনে
যে উদোম গীতরস ধানের সুপ্তিভাঙ্গে, সেই সুরের ঈশ্বর
আমাকে কবিতায় ডাকে ! কোর্ট-টাই ধুতি-পাঞ্জাবী
আধুনিক সাজসজ্জা, ভেলবেট জীবন-যাপন
মানিয়ে নিয়েছি সব স্প্রিংপুতুলের মতো।
উভচর, জল ও ডাঙ্গার প্রাণি সাজি আমি!
সময়কে বেসরম কোলে তুলি, জনকের চোখ বেঁধে!







কাল

আজ থাক
কাল না হয় কথা হবে।
এই আমাকে বড্ড বেমানান লাগছে তোমার পাশে আজ;
কাল না হয় জন্মাবো সবুজ ঘাস!
চিত্রল হরিণ, নয়তো জন্মাবো সুন্দরিগাছ-ধুন্দল-জোয়ারে সিক্ত গোলপাতা;
নয়তো জন্মাবো পশুরের স্রোত, দুবলার একাকী চর!
গভীর অরণ্য জন্মাবো নাহয়। নাহয় জন্মাবো সাগর অতল!
আজ থাক
কাল না হয় পাহাড় জন্মাবো।
প্রগলভা ঝর্ণা জন্মাবো বুকের খাঁদে !
নয়তো জন্মাবো ধানক্ষেত -আলহীন উন্মুক্ত জমিন ,
জন্মাবো তেপান্তরের মাঠ-শুভ্র কাশফুল-পদ্মফোটা বিল!
আজ থাক
কাল না হয় জন্মাবো আকাশ।
দু'চোখ যতদূর যায়, তার থেকে ঢের দূর দিগন্ত জন্মাবো কাল!
জন্মাবো তারকাটা ছেঁড়া স্বাধীন স্বদেশ!
আজ থাক,
কাল না হয় কথা হবে।
এই আমাকে বড্ড অমানুষ লাগছে তোমার পাশে আজ ;
কাল না হয় মানুষ জন্মাবো! জন্মাবো মানবিক পাখি-কবি,
জন্মাবো কবির অতন্দ্র পংক্তিমালা!






খন্ডিত সময়

মদিরেক্ষণা ঢেলে দিলো সব
শালা" বলে গালি দিলো বেতাল মদন;
রাখলি না? রাখলি না এক ফোট? বাংলা বোতলের
বেফাঁস আক্ষেপ ঝাড়ে বশীর! সময় যায়
কাঁচের গুলির মতো গড়িয়ে কিছুদূর,
মদেশিয়া উদোম নাচে তারপর
তারপর কিছু খন্ডিত সময়ে
খন্ডিত-কচুকাটা হয় মগজ ! তারপর
নাভিমূলে গজায় ফণীমনসার ঝোপ!
স্রষ্টার মহাজাগতিক সূত্রগুলো উল্টোরথে চড়ে
একসময় বাঁধা পড়ে
মদন আর বশীরের ক্ষুধার্ত খোঁয়াড়ে!