রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

তন্ময় ধর



তন্ময় ধর
দৃষ্টিভ্রম ১
প্রথমে রঙিন শব্দ দিয়ে শুরু হলেও নীরবতা উড়ে গেল শাদা ল্যাম্পের দিকে। প্রথম লাফটাকে কেউ বলল, মায়াহরিণের ত্রিকোণমিতি। দ্বিতীয় লাফটায় কেউ কম্পাস স্থির রাখতে পারল না। ঘি-ঘাটের আশ্চর্য স্নান থেকে আমাদের শরীরে জড়িয়ে উঠল একটা রূপোলী ইলিশ।
তসর রঙের আমাদের অতিরিক্ত আলোয় সে মাছের মৃত্যুপরীক্ষা করতে গিয়ে আমরা অন্য এক আলোকবিজ্ঞানে ঢুকে যাই। জালকাঠির খুব কাছেই মিসক্যারেজের অন্ধ বিড়ালের দূরত্ব বদলে যাচ্ছে। নখের আলগা সফটওয়্যারে কিছুতেই জল শুকোচ্ছে না।
নখে-হলুদ একটাই গল্প চুল শুকিয়ে নিচ্ছে কমলা আলোয় মাখা চন্দ্রাবতী রামায়ণে। আমরা সেই গানের ঢেউ শুনতে শুনতে আবার দেখে নিচ্ছি হিংস্র পিঁপড়ের ডিম ও মাছের কৌশল। প্লুত একটি স্বর এবার অষ্টম পুরুষে ঢুকছে।



দৃষ্টিভ্রম ২
ফেনা অর্থে সেই দরজা বেহিসেবী খোলা। অর্ধেক বাদামীর এপাশে-ওপাশে আমি শীতের আলো রাখি। মৎস্যপ্রিয় এক পাখির ইতিহাস থেকে নড়াচড়া করে আনি সরলতা ও কাদামাটি। মাছের সমস্ত ডিমের ওপর আমার ক্ষতচিহ্ন ঘুমিয়ে পড়ে।
নিজেকে খুঁজতে গিয়েই একটি শিশুশব্দ ঠোঁট কামড়ে ধরে। তার সামান্য টক লেগে যায় জিভে, নাভিতে, ছায়া-চিৎকারে। আমার শীত অতিরিক্ত গোলাপী ঘটনায় ভেতর ধাক্কা খায়। চুমু খায় রক্তমাংসের অনিদ্রায়।
বসার অভ্যাসে ক্রমাগত শাদা রঙ করি আমরা। অভিনয়ের মুখোমুখি সেই দোলনাটা দোলাতে দোলাতে দ্রুত লয়ে শুনতে থাকি বেদেনী মহুয়ার কাহিনি। সাপের দেহবোধ কিছুটা অন্ধকার হয় যায়।




দৃষ্টিভ্রম ৩
সরু বরফের পাশ দিয়ে সেইসব মাছের খেলাধুলা চলে। অর্ধজন্মের এক আলোর মতো ঘুরে যায় আমাদের নোনতা চোখের জল। কাঁচের সতর্কবাণীতে আমাদের ঈশ্বর ভেঙে যায়। খয়েরি একটা শব্দের ওপর আমরা মাছের খাবার তুলে রাখি।
তারপর রান্নার অন্য আয়োজনে ত্রুটি হচ্ছে। দারুচিনি ও অন্যান্য মশলা ঘুরেফিরে সুখ হচ্ছে। ত্রিশিরা কাঁচের ভুলে আমরা ঢুকে যাই জীবাশ্মের শেষ রঙে, বর্ণিকাভঙ্গে, বর্ণবিপর্যয়ে। ধানদুখী এক শব্দ গোড়ালি উঁচু করে দেখতে থাকে আমাদের।
আমাদের পায়েসের বাটির বাদাম-এলাচের বৃদ্ধিগন্ধে ঢুকে পড়ে সেই শব্দের নীরবতা। আমাদের ওষ্ঠ্যবর্ণের শীতের ওপর দিয়ে অন্ধতার ঘুম ভেঙে যায়। আহত প্রক্রিয়ার গন্ধের মতো কেঁপে ওঠে সংরক্ষিত মাছ।




দৃষ্টিভ্রম ৪
কাঠচাঁপার গন্ধে আমরা গলার এক নরম অংশে দেখা করি। তার চেয়ে সামান্য উঁচু এক নিশব্দ অলঙ্কার থেকে হালকা নিদালীতে ঢুকে পড়ে তীব্র পশু। তোমার কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। সে রাতে অফুরান রঙ শাদা হয়ে ওঠে ভবিতব্যে।
পায়ের শব্দ দিক বদলায়। জাতিস্মর ব্যথার কাঁচা দেওয়াল পেরিয়ে কর্কশ হয়ে ওঠে আমাদের স্বর, ছাই ও নক্ষত্র। তোমার মুখের মতো পাগল এক কুয়াশায় ভিজে যাই আমি। অপ্রত্যক্ষ এক জন্ম থেকে দৈব ফর্সা আলো এসে পড়ে ভ্রূমধ্যে
শিল্পীর সমস্ত স্বাধীনতা জুড়ে সেই পশুর রঙ আর সময়ের আঁকশি থেকে ভেজা মটরলতা কোন একটা দিকশূন্যতায় যাবে তুমি। সংসারের আয় বুঝে একটু গহন করে দেবে মশলার গন্ধ। 




দৃষ্টিভ্রম ৫
জলরঙের বাইরে তোমার চোখ থাকে। তার নোনতা শব্দ কথা বলে জলজ গাছপালায় আমার জন্মরহস্যের সাথে। মিষ্টিজলের মাছের দ্রুততম ডিমে আমাদের সংসার জুড়ে যায়। হিসেবের ভেতর আর এক টুকরো নীরবতা ফেলে দাও তুমি।
সে হিসেব বড় নক্ষত্রখচিত। আলোকবর্ষ ধরে আমরা শস্যের বৃদ্ধিগন্ধে লুকোচুরি খেলি, টুকে রাখি রক্তমাংস, মৃগমথিত সাবানের বুদবুদ। টকজলের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরে আমি তোমার মতো হাঁটতে থাকি। নীচু হই ঐশ্বরিক অন্ধকারে।
হিসেবের গরমিলে তোমার পুনর্জন্ম হয়, পায়েসের বৃহত্তম মাটিতে উড়ে আসে নীল মাছির শব্দ। শব্দরূপ মুখস্থ করতে করতে আমি সরিয়ে নিই তোমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। দৃষ্টিভ্রম সম্পর্কে তুমি যা জানো, সংক্ষেপে লেখো।