বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯

কাকলি দাশ ব্যানার্জী



কাকলি দাশ ব্যানার্জী

ভোর আসবেই

অস্তগামী সূর্যের রক্তিম উদযাপনে ডুবছে তোমার শরীর,

অন্ধকার প্রথম রিপু নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে,

নিয়ম করে উদাসীন সঙ্গমে
নিরঙ্কুশ এক নিবেদন -

সুচারু ইঙ্গিতে রাত হেঁটে যায়
চারকোল হাতে নিয়ে,
মায়াময় জ্যোৎস্না জানে
নিশি যাপনে
চেরা জিভের এক হিংস্রতা -
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে
তার মোমপালিশ দেহের সৌন্দর্য,

উদগ্র কামনার আগুনের আঁধারে
অসহায়  তুমি উপুড় হয়ে শুয়ে আজন্মের বিশ্বাস নিয়ে
ভোর আসবেই







স্বপ্নভঙ্গ

মোকামে মেয়েটা রাখে বৃষ্টিভেজা ঠোঁট
উদ্ধত যৌবনের জাগ্রত দ্বীপ,
মোহিনী দৃষ্টি,
একটা সুতো আর একটা মাটির পায়রা, ওটা পিকদানি

নিবেদন করে রোজ
বিষধর সাপের অবিনীত ফণার সামনে,

ভ্যাপসা দীর্ঘায়ু জীবন এখন বীতশোক
রোজ এভাবেই হাঁটু গেড়ে বসে -
যাতে নিঃশ্বাস আয়ু পায়,

সুড়ঙ্গে ছায়া পড়ে, স্নান হয়,
প্রথম তিনটি ব্যতীত আর দুটি কাজে লাগে না কারো।

এখন সেও সাপ হতে পারে
বেমানান শঙ্খ লাগে
মনের ভিক্ষাপাত্রে আলোছায়ার কিতকিত খেলা
পাতালের ধাপ বেয়ে ফসল গন্ধ ছুঁতে চায়

বিক্ষত শরীরও চলকে ওঠে হঠাৎ,
মেয়েটা সুতোটা বেঁধে আসে ঠাকুরের থানে

পাপবোধের খোসা ছাড়িয়ে
রোদ দিয়ে রিফু করে সে
ফালা হওয়া নদীমাতৃক স্বপ্নদের,


নুড়ি পথ পেরিয়ে আসা
প্রতিশ্রুত ভোর এলো অভিধানে কান্না নিয়ে
আট প্রহর ধরে জমানো স্বপ্নরা প্রসব করেছে
এক বিকলাঙ্গ সন্তান

মাথার উপর দিয়ে জলটা বইয়ে দেবার আগে
নিজের চেরা জিভের বিষ ঢেলে দিল
দেহের মাংসপিণ্ডটাকে,

তারপর এক আছাড়ে ভেঙ্গে ফেলল মেয়েটা
মাটির পায়রাটাকে,
প্রথম প্রতারিত প্রেমের সরীসৃপ স্মৃতি
শেষ সাক্ষাতে স্বপ্নভঙ্গের নিশানায় পাওয়া উপহার 
যেটা ওকেই পিকদানি বানিয়েছিল








একটি গোলাপের মৃত্যু

ছাদের বাগানে একটা পূর্ণযৌবনা  লাল গোলাপ
শরীর জুড়ে গন্ধ আর রঙের বিলাস দিয়ে
নিজেকে সাজিয়ে তোলে
হৃৎপিণ্ডকে বেতালা করবে বলে,

তার এই নগ্ন পূর্ণতার মাদকতায়
মধুপের বুকে ওঠে ঝড়,

উত্তেজিত প্রজাপতির শরীরে
জড়ো হয় তাকে ছুঁয়ে দেখার অনাবিল ইচ্ছা,

ওপর থেকে মেঘেরা সব আলস্য কাটিয়ে
তাকে একবার ভিজিয়ে দেবার ছুতোয় ইঙ্গিত দেয় বৃষ্টির,

সবুজ পাতারা টের পায় দুর্বিনীত ইচ্ছেদের এই তীব্র কামনা,
ওরা অমোঘ ঘেরাটোপ রচনা করে।

কিন্তু প্রথামত উন্মত্ত যৌবন যে বেপরোয়া,
প্রদর্শনের চূড়ান্ত কৌশলেই তার আত্মতৃপ্তি
বৃষ্টির দুরন্তপনায় তিরতির নেচে ওঠা যৌবন
খুলে দেয় শরমের আবরণ

উন্মুক্ত শরীরী ছন্দ ডেকে আনে
রঙে ভেজা যুবা প্রজাপতি
মধু পানের অনন্ত বাসনা মেপে নেয়
গোলাপের প্রগলভ উন্মাদনা

রাতের আঁধারে আসে ছাই রঙা কীট
রূপসী গোলাপ খিলান খুলে দেয়
তীব্র রঙ্গে লুঠ হয় তার দেহের বাঁধন

নির্জন ভোরের আলো
নষ্ট হওয়া অশান্ত জীবনে
বরাদ্দ করে আর্দ্র মাটির কোলে নিসর্গ প্রশান্তি