বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

রীনা তালুকদার


রীনা তালুকদার

কেশর বিহীন যৌবন

১।

ভেন্টনর -এর জোৎস্নাময়ী রাতের আকাশে
দীর্ঘকাল তারার হাট বসেছে
স্যাটেলাইট চোখ খুঁজে খুঁজে চলে উজ্জ্বল তারা
দরজার খিল লক দিয়ে চাবি নিয়ে উধাও
ফেসবুক বলে দিল এই নাও কাংঙ্খিত ছবিটি

বন্ধু হওয়া নয় সহজ
সুখ দুঃখকে ভালোবেসে চিরজনমের করে
ব্যাকুল হৃদয়ে গেঁথে চলতে হয় বিরহী ব্যথার রাগিনী

পাঁজরের হাড় কটা পরিচয় দেয়
অতলে লুকানো ছবি হারায় না কখনো
অনুভূতি অভিমান বুঝেনা এখন
কপট অনুরাগ বিরাগে

শিস তোলা বৈকালে হলুদ রোদ হাতে
দাঁড়িয়ে থাকে তেপান্তরের তোরণ

এই ঠোঁট কাঁপানো শীতে
বাঁধাকপির ভাঁজে ভাঁজে ভালোবাসা লুকোচুরি খেলে।





২।

বন্ধু হয়ে ওঠোনি
জীবনে সব যায় না করা জয়
বিজয়ের স্বপ্ন সূর্য মিতালীর আয়নায়
পূজোর নৈবেদ্যে কত ফাঁকি ঝুঁকি
পূজিত জানে কি-না জানিনা
হাসিমুখ বলে আহ্লাদি আবেশ
বৈভব সুখ দেয় সব সময়
এটা ভাবা ঠিক না।

সেদিনও মাড়িয়েছো স্টেশন আমার
ভুলেও পড়েনি মনে
কত শত স্মৃতি রেণু পায়ে পিসে গেছো
জেনে রাখা ভালো
সম্পর্কের দায় আছে
তুমি না চিনলে আমার দায় কিসের ?





৩।

তোমার ফেসবুক পাতায় যাই না আর
থাকুক সেখানে স্টার জলসার ছড়াছড়ি
কি লাভ দেখে দেখে তোমাকেই স্টার বানাবো
সেই ভালো তুমি দেখবে আমার পাতায়
হৃদয়ের কতো কতো রং বেরংয়ের আঁকা ছবি
সে সব নয় শুধু খোলা চোখে দেখা ছবি
আমাদের স্মৃতিময় জীবনের একেকটা প্রামাণিক দলিল

দেখবে ভাল করে হারানো মানিকজোড় নদীর ছবি
যার তটরেখায় আমাদের যৌবন পায়ের ছাপ
পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের আনাড়ি বিক্ষত ক্ষত
দু'পাড়ের গাছের ডাল ভাঙা পাতায় দৌঁড়ানোর দস্যিপনা
আর হ্যা, যেখানে দুটো নিমের গাছ ছিলো পাশাপাশি
ঠিক তার নীচে আমাদের বসে থাকার যন্ত্রণায় নীল ঘাস

দেখবে এখনো সেখানে পাখিরা উড়ে উদাস কোনো বিকেলে
যেতে যেতে ঝরা পালক ছেড়ে যায় শূন্যে
আমাদের জোড়া দৌঁড়ে গিয়ে উড়ন্ত পালক ধরার ছবিটি
তুলেছিল সেদিন আকাশের ক্যামেরায়

পাশের যে সরিষা, কোলাই আর মুগ মুসুরের ক্ষেত
সেখানে আজো হলুদের উৎসব জাগে দারুণ শীতে
মৌসুমী ঘুঙুর পরে মৌমাছি নাচে
মটরের কচি পাতার ঘ্রাণে ফড়িংয়েরা লুকোচুরি খেলে
ভুট্টার সবুজ পাতার ভেতর আমাদের হারিয়ে যাওয়া
সেই শ্বাসের সমরে না বলা কথা গুলো
আজো বুকের ভেতর হাইপ্রেসারে রক্ত নাচিয়ে তোলে
তুমিই বলো, এর চেয়ে সুখ আর কি হতে পারে ?





৪।

দেখা হলেই চুমুতে চুমুতে
ভরে দেবো দীর্ঘ বছর
যে সুধারসে জীবের প্রাণ থাকে
তেমনিই প্রেমেরও
কেউ কেউ সূর্যকে কেউ আগুনকে
পূজোর নৈবেদ্যে গাঁথে
সাপকে পূজো দিলে নিরাপদ
শীবের পূজায় ঘরময় উত্তপ্ত রমণীকূল
হাড় কাঁপানো শীতকালের শীত
লাউপাতা, লাউ কোনোটাই অরুচির নয়
বরং বেশ আয়েশী ভোজন রসনায়
সকাল বিকাল যখন ইচ্ছে যেমন ইচ্ছে
জল ঢালে লাউয়ের আগা পাছায়
সারা বছরই ভাল ফলন
শীতে বিশেষত্ব রুচির গুণে
সাধের লাউ তোমাকে পূজোর সবটুকু অর্ঘ
লহো আহলাদে অঞ্জলি।





৫।

খামোকা অনুযোগের মিছিলে ঘিরে থাকো
সময় ফেরারী হয় না বলেছি বহুবার
এ নিয়ে নিরীক্ষা ছিল না কখনো
বরফে জমিয়েছো নাবালক হৃৎপিণ্ড
চিৎকারে শীৎকারের ছবি আঁকো
অভিমানের মর্যাদা বুঝতে হয়
বন্ধ ডাক ঘরে ডাকলে কি
নীল পাখি উড়বে ?
বাস্তবতার গাণিত্যিক বন্ধন-
কচু পাতার আবেদনময়ী বর্ষার জল
যার কোনো ইতিহাস থাকে না

কোনো মৌসুমী দিনে উৎসুক চোখে
আশান্বিত চোখ রাখলে
না ওতো চিনতে পারে
রাঙা বসন্তে শিমুলের আগুন
হিমবাহ্ থেকে আলিঙ্গনের অনুযোগ মানায় না
তার চেভালো
বারান্দার টবে বেলীর চাষ করো
বিশ্বজুড়ে হাহাকার ঘুচবে অনাহারীর
শিমুল পরশ বিশ্বজনীন আভাস
হৃদয় কোণে যায় না রাখা
হৃদয়তো পাগলা উনুন
তুষ্ ছিটালেই দহনে দাহ করে সব উত্তাপ
চারদিকে তো উত্তাপেরই লড়াই!
এসো অনুযোগ রেখে উত্তাপে পুড়ে যাই !!
(অনুযোগের মিছিলে)





৬।

অপেক্ষার রাত শেষে
স্নিগ্ধ ভোরের ঘুম ভাঙে
পান খাওয়া পিচুটি ফেলা রাজপথ
পরিচ্ছন্ন কমীর সাথে
যারা শ্রমে ঘামে চার হাত পায়ে
মুছে যায় মধুময় রাতের
অসভ্য সুষমার চিহ্ন, ঝুলকালি

ঘুমহীন মন ছেঁড়া রাতের ছায়া সেলাই করে
অনাকাংঙ্খিত অন্ধকার ঢাকে

অপেক্ষার চসারে বসে আছি ;
কোনো এক দিনের আলোতে
ও চোখে জুড়িয়ে নেবো হাহাকার!

(হাহাকার )




৭।

লুকোচুরি বুঝি না; তা নয়
এখন ভালোবাসার হৃদয় প্লটে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি
গাদাগাদি বসবাস হরেক বিষয়ে
সাদাকে শাদা বলি, ভাল লাগে না যা
তা নিয়ে কোনো গোপন নেই
বলতে হয় যে কোনো ভাষায়
সত্য গোপন হলে থাকে না আর কিছুই
জীবন নিয়ে সোজাসাপটা
ছোট ছোট আবেগ, উচ্ছ্বলতা মরে গেলে
দেওলিয়া আসে মানুষের

জলভরা চোখ হজম করতে শিখে গেছে
কঠিনতম খুনের দৃশ্য
প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে বালকীয় চাওয়া পাওয়া
অবাধ্য জলকে নিয়ন্ত্রণ করতে নেই
বাধ্যবাধকতায় আগ্নেয় তাপ জ্বালিয়ে দেয়
সীমানা ছাড়িয়ে তৃতীয় ভূমিও

মনে রাখবে কোনো কিছুরই সীমা লঙ্ঘন করতে নেই।





৮।

এখনোতো ভাবি লাল গোলাপ হাতে
এসে দাঁড়াক ফাগুনের বাতাস
সাথে নিয়ে আসুক মিলিত ঝড়ের দমকা
লাল, নীল, হলুদ, সাদা, গোলাপী কাপর্ণ্যতায়
ভরে গেছে বোগেনবিলিয়ার বাগান
বার বার আমন্ত্রণ জানিয়ে যাই
এই পৃথিবীর সকল উচ্ছ্বলতাকে;
ছড়িয়ে যাক লোভী, হিং¯্র আর দানবীয় মনে মনে
ব্যস্ততা থামিয়ে পথের ধারের
সবুজ দূর্বা মাড়িয়ে যাক ভোরের ডাহুক
অপেক্ষায় থাকি একদিন হলুদ জারুল বনে
অপরাজিতা হেসে ওঠবে
আবেগের বাঁধভাঙা হাসিতে
দেখে দেখে হরবোলা ময়না
সময়ের রঙতুলিতে তুলে রাখুক
দহন কালের সাক্ষর।




৯।

ঘন শালবন হলুদ পাতাদের ঝরা উঠোনে
কলকাকলি মুখর প্রাণের সম্মিলন
শ্বাসের নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে
সবুজের অক্সিজেন-নাইট্রোজেন বিনিময় খেলা
গজারীর বনে কতো কতো সুন্দরীর একসাথে
হেসে ওঠা সূর্যের লুটোপুটি
চেনা অনেক চোখ মুখ আড় চোখে
শব্দের বর্হিপ্রকাশ ছিল না অনেকেরই
ইদানিং দূরত্ব বজায় রাখি মেকি ছলনা থেকে
রেষ্ট হাউজের রুমটায়
শূন্য শূন্যতার মৌনতা
যাইনি তাই অযথা সেখানে
দরজার বাইরে চারপাশে পায়চারি
ভুলে ভুলে ডাগর ডালপালা মেলা
সুন্দরীর বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ি
অনুভবে ভ্যাকুয়াম ভ্যাকুয়াম
শ্বাস নিতে পারি না স্বাধীনতায়
শ্বাস নিয়ে অদূরে আছো ভ্রুকুটি সময়।





১০।

যুগলবন্ধী দিন-রাত সূর্য রোদের আমন্ত্রণে
প্রভাত রাঙায় পৃথিবীর
শস্য ভান্ডার নিয়ে চরে বেড়ানো রাত শেষে
মুগ্ধতার স্নান সেরে উঠলেই রমণী
পার্কের বেঞ্চি, পুরনো ইতিহাসের শিল কড়ই
কতই লিখে যায় নিষিদ্ধ প্রণয় গাঁথা
বয়সের কাছে কৈশোর জাগিয়ে যুগল
সমুদ্রের সফেদ উর্মিমালা চোখের তারায়
কে কোথায় আঁড়ি পাতে দেখে না কেউ
মনের নিমন্ত্রণে পাজর প্রদেশের সাঁতার ঢেউ
ফেস ও বুক মিলিত রসায়নে নিউক্লিয়ার পাওয়ার
পাশ দিয়ে ফেরিওয়ালা ঢেকে ওঠে: চা-কফি ...
গ্রামীণ চেকের রূমালে বিন্দু বিন্দু ঘামের নির্যাস
এ এক অন্যরকম চাষাবাস
যেখানে ভয় এক নির্ভরযোগ্য সাহস।