বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

ইন্দ্রাণী সরকার


ইন্দ্রাণী সরকার

মায়াবতী

কবে থেকে মায়ায় জড়িয়েছিস
তোর প্রিয় বোন হলাম যেদিন জানলা বেয়ে
চুল খুলে দিলাম আর তুই সেই বেয়ে উঠে এলি
আমার রূপকথার সাজানো গল্পে

ঘুরে ঘুরে পায়ে পায়ে জড়ানো তোর কথা
ঝাপসা চোখে ছেড়ে যেতে যেতে ফের ফিরে আসা
সেই থেকে তোর মায়াবতী বোন হলাম
সাত ভাই চম্পার এক বোন পারুল যেন

অতসী ফুলের মত গায়ের রং দেখে তুই মুগ্ধ হস
তোর চোখে এঁকে দিই মায়াকাজল
যার কোল আঁচলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস
বৃষ্টির আদলে ভরে যায় তোর হাতের পাতা
কাশফুলের হাসিতে ভরে যায় মুখ
বাসন্তী রঙে তোর উঠোন ভরে ওঠে |








নির্বাক ভালোবাসা

তোমার নির্বাক ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি প্রিয়
তোমার কেয়া, তোমার দিয়া, তোমার হিয়া মনে ভরে

কি ভাবে বোঝাই এতো মানবিক স্বীকৃতি
আর কখনো মেলে নাই
কখনো আমার বাঁধানো চাতাল এত ধনধান্যে
ভরন্ত হয় নাই

কবে সীমান্তে সিঁদুর প্রলেপে ঘরে নিয়ে যাবে
অপশনে না রেখে প্রথমার আসনে ?
সেই ভেবে ভেবে এখনো দুচোখে অঝোর ঝরে








বাসা

বাবুই পাখিটার বাসা ভেঙে গেছে
তার সন্ততি বন্ধু পাখিরা
কখনো সখনো তাকে কুটো দিয়ে যায়
নতুন করে ঘর বাঁধতে

কিছু বন্য পাখি নিজেদের মধ্যে
কলহবশত: এই শান্ত পাখিটির বাসা
তছনছ করে চলে গেছে

সেইসব পাখিদের আর দেখা যায় না
তারা দূর থেকে কখনো সখনো
কিচির মিচির আওয়াজ দিয়ে যায়








সিম্ফনি

ক্রিস্টাল ফুলদানীতে বসানো আরক্তিম গোলাপ
চারিদিক ঘিরেছে সুন্দরী ফুলেরা
অদূরে পিয়ানোতে সোনাটার মূর্চ্ছনা
সঙ্গী ভায়োলিন অপূর্ব কাঁদে, হাসে

বাইরে শ্বেতপাথরের সিঁড়ি ধাপে ধাপে
নেমে গেছে স্বচ্ছ সরোবরে
জলের ওপর ভেসে আছে থোকা থোকা শ্বেতপদ্ম

সরোবরের চারিদিকে সারিবব্ধ ফুলের গাছ
রোদের ঝকঝকে আলোয় তাদের রং ঠিকরে পড়ছে

এখুনি আসবেন সিম্ফনি বাদক
হলঘরের আলোগুলি জ্বলে উঠছে
মৃদু সুগন্ধে ভরে উঠেছে বাতাবরণ

সিম্ফনির তালে তালে হেঁটে আসে দুই কিশোর কিশোরী,
সার বেঁধে হাসিখুশি উছ্বল সঙ্গী সঙ্গিনীরা
ধীর পায়ে হেঁটে আসে বিবাহমঞ্চে
পাশ থেকে দর্শকরা বিমুগ্ধনয়নে শ্বেতপুষ্পস্তবক
তাদের পায়ের নিচে সাজিয়ে রেখে যায়

দুটি সুন্দর হৃদয় ধরা পড়বে আজ শৌখিন এই মুহূর্তে








আমি কবি হব

সমুদ্রের ওপারে মায়ের আঁচল উড়ে যায়
জলের উপর এক পা এক পা এগিয়ে যাই
পায়ের তলায় পদ্ম ভেসে ভেসে ওঠে
ভাবি মায়েরই কৃপা বোধ হয়

পাশে দেখি স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য্য
তাঁর ঐকান্তিক আশীর্বাদে
বৃদ্ধা যুবতী হয়,
বিগতযৌবনের যৌবনপ্রাপ্তি হয়
সমুদ্রে পদ্ম ভেসে ওঠে

আমি হতবিহ্বল জলের উপর
ভাসতে ভাসতে ভাবি কাকে ছুঁই
মা জননী না কি গুরুদেবের পাদপদ্ম ?