শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শাকিলা তুবা


শাকিলা তুবা

বাসন্তিক বিষুবন

আলোরা কষ্ট পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে
পাখা ছাড়া উড়তে উড়তে পুড়ে যাচ্ছে
হাজারো সূর্যাস্ত
দখিনের রাস্তায় ঘুরে যাচ্ছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ফুলে ধর্ণা দেয়া মৌমাছিগুলো
ফিরে যাচ্ছে, ফিরে যাচ্ছে
দেখেশুনে এসব, কষ্ট হচ্ছে।

বিগত জীবন থেকে বেরিয়েছে এই দেখো
একটা পাথর, রঙচঙে কি?
দেখে মনে হয় কারো কিছু হয়েছে কোথাও।
কোথায় কি হয়েছে? ভুল?
ভুল হয়েছে?
জীবনে কিছু ভুল হয়েছে
ভুল থেকে জীবন কষ্ট পেয়েছে।

ভুল জানতে ভাল লাগে, সুন্দর লাগে।
একরের পর একর জীবন পার হতে হতে
মখমল জুতা প্রথমে সিল্ক, সিল্ক থেকে
জলীয় হয়ে খুলে যাচ্ছে
বাকল সব খুলে যাচ্ছে
নষ্ট জীবন অনুতাপে পুড়ছে, পুড়তে পুড়তে
আলোগুলোর কষ্ট হচ্ছে, আলোরা নষ্ট হচ্ছে।






জেগে আছি

রাতভর ঘুমের ক্লান্তিতে জেগে আছি,
জেগে আছি দুই চোখ,
জেগে আছি চুল,
সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতার কাল থেকেই
জেগে আছি; পরিব্যাপ্ত,
শত্রুকর্তৃক অধিকৃত।
জেগে আছি চিবুকের তিল---

নিতাইগঞ্জের চিত্রাক্ষী বুড়ীর একটি হাত
আকাশে ঠেকেছিল, অপরটি সমুদ্রে-
দুইয়ের মাঝে ভেসে ঘুমিয়েছিলাম একদা,
যেমন ঘুমোয় প্রভুভক্ত কুকুর আশ্লেষে।
এই ঘুমে নখের আঁচড়,
গাল ফুটো করা বাতাস,
ঘুমে অকাতর দুঃখ।

এখন রাতের ঘুমে দীর্ঘ রমন ক্লান্তি
রতি-অতৃপ্তির অবসাদ।
অতঃপর, জেগে আছি
ঘুম জাগরনে;
লক্ষীপেঁচার মত জেগে আছি।






কল্পতরু

আজকাল পাখীদের ঠোঁটে ঠোঁটে
তাম্বুরা অনুরাগ
কিমাম আর জর্দার মিশেল বানারসি পান।

এক পাখি চঞ্চু ভেঙে আধখানা দেয়
সঙ্গী পাখীটা লেজঝোলা,
গুলকন্দের মিঠা
প্রথমে একজন গেয়ে উঠবে সোনালী সুর
দিনশেষে অন্যজন দেবে ভাল বাসা।

আকাশের ম্যাপ ধরে কে মাপবে পথ?
গাছের কোটরে এখনো ছোট্ট সংসার
এরপরে কে যে যাবে কোথায়!
পান ফুরাবে, ধান উড়াবে
রয়ে যাবে মিষ্টি মহুয়া দিন।

ঠোঁটে ঠোঁটে লেগে যাবে একদিন বচসা রোদন
তবক মোড়ানো রূপোলী প্রেম
পানের মধুরস রঙের সাথে আবারো যাবে মিলিয়ে।







অস্বচ্ছ কাঁচ

যে মানুষটিকে ভালবাসে এই শহর
তাকে চক্রবৃদ্ধি হারে ভালবাসা যায়
তার চোখের ভেতর নবরত্নের গহনা
ভালবেসে নিঃস্ব হতে মন চায়।

পলাতক সময়ের কাছে রয়েছে কিছু ঋণ
বোঝার মতো বয়ে বেড়াই বারোমাস
সেই সব যাতনার ঝোলা বেঢপ হয়ে বাড়ে
ক্রমশঃ বাড়ছে সুদের হার।

যে মানুষ কে ভালবাসে এই শহর---
কোন কোন কাকডাকা ভোরে সে চুরিও হয়
আজ যে মানুষ আমার, কাল অন্যের।

হিসাব মেলে না, অংকে বড়ই কাঁচা
সে কার তবে? সরল অংকে ঐকিক নিয়ম?
জীবন থেকে যে হারায়?
তাকে বিয়োগ দিয়েও কেন সে থেকে যায় সর্বত্র?

নেই মানুষটি শুন্য বটে তবু সংখ্যায় সে এক।






আঁকিবুকি

এরপর তুমি আঁকলে একটা গাছ, শুধুই গাছ
গাছের ছায়ায় উদাস দুপুর,
আর আঁকলে বাঁশী বাজানো রাখাল
যার পা ছুঁয়ে বয়ে গেছে শীর্ণ ধারার নদী

আমি বললাম, গাছটা এমন ন্যাড়া কেন?
সবুজ বাড়াও, আরো পাতা জমে যাক
গাছের মাথায় তুমি এঁকে দিলে আঁকাবাঁকা গ্রাম
আর ময়ুরকণ্ঠী রঙের মমতা।

তোমার রঙ-তুলি, তারপিন তেল আর তুলোয়
আঙ্গুল ভেজালাম আমিও
এবার আমি এঁকে দিলাম গাছের উপর পাখীদের ঘরদোর,
দুটো পাখীর বসন্ত বাতাসে দোল খাওয়া।

তুমি বললে, উঁহু এখনো হয়নি
তুমি আঁকলে দুটো পাখির ছানা, পাশে কিছু সম্ভাবনাময় ডিম
আমি বললাম, তাহলে একটা সাপও আঁকো ডালে অথবা
মাথার উপর ছানা লোভী চিল, জীবন যেমন হয় আর কি!

তুমি বললে, গাছটাকে এভাবেই পরিপূর্ণ দেখাচ্ছে তাই না!
আমি বললাম, তাহলে এটা একটা সুখী গাছের ছবি, বলো!