শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল


লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

ঢালাই রাতের কবিতা

প্রহর

বেজে যাচ্ছে ন'টা দশটা ; ছাপ ছাপ আঁকিবুঁকি কাটা
ঢালাই রাস্তার ধারে খিস্তি দিচ্ছে তেলেভাজা দোকানদার 
গুঁড়ো গুঁড়ো মসলার টুকরো গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তায়
কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে নিদ্রাভাঙা  ঝিঁঝিঁ গানের সুর  -   
বাতাসে আর্দ্রতার কারনে ঘামের ছাপ ফুটে উঠছে
টিশার্টের  গায়ে , ভেজা রাতের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে  -
বিউটি পার্লারের মাথায় চাঁদটা মেঘে ঢাকতেই ছনছন শব্দ
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে  যৌনতার প্রলেপ দেওয়া মুখ 
কতদূর মাঠ ,  কতদূর ফুল ,  অফুরান আবছা শরীর
কি দেব রাত্রিকে  - নির্জনের পথটাই স্রোত নেয়
জ্বালাময় বিশ্বের দু-চোখ  !







প্রতিষ্ঠা 

জল ভেসে যায় বাল্বের ভাঙা ভাঙা ইলেকট্রিক নিয়ে
দাদু বলতেন - এর নাম শিয়াল তাড়ানো বৃষ্টি
যদিও প্রচন্ড অন্ধকার থাকে মেঘ ঢাকা সন্ধে 
আর আমাকে অনুসরণ করে খোকনদার লিকার চা
ছিঁচ কাটা বেঞ্চি থেকে  পিঠে পড়া গুড়োঁ বৃষ্টি ঝাড়তে ঝাড়তে 
হাত ভিজোচ্ছি , ভেজা মতবাদগুলি মনে আসছে কিছুতেই  -
কোন পায়ের ছাপ নেই - গড়িয়ে যাওয়া ঘোলা জলে কংক্রিট ভাইরাস
অথবা আমি কীই বা ধারণ করতে পারি নিজের নগ্ন শরীরে , তবে কি
গড়িয়ে যাবার কাল এসে দাঁড়িয়েছ ইলেকট্রিক পোস্টের নিচে 
এসব এগিয়ে যাবার কাল -  সমস্ত নোংরামো নিয়ে কাদা মুছে দিতে
চুমুক দিতে থাকি সুতীব্র আত্মহননের  !








বসবাস

একটি নিবিড়  সম্পর্কের কাছে অপেক্ষা করছে চৌমাথার রাত 
সদ্য উৎকোচ দিয়ে যে কয়েকটা বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে
তাদের মাথায় কালো মেঘ , দুরান্তের কলঙ্কবাহ বাদুড়েরা উৎসুক , 
ঝাপটাচ্ছে অাবছা ডানায় ছুঁয়ে থাকা বাতাসের কান্নাকাটি 
আমি তার নাইট বাল্বের দিকে তাকাই ,  সেখানে নীল স্বপ্নেরা
বিছিয়ে দিয়েছে শিরা উপশিরার কেবল্ লাইন  -
পার্টি অফিসে পৌঁছে যায় নেশাখোর কাঁপনের অবাধ্য প্রলাপ 
কোথায় পৌঁছবে মৃত্যুঞ্জয় ; কোন বীজের ভিতর স্থায়ী যন্ত্রণার হাত  
সীমিত জীবনের  সঠিক দৃষ্টিপথে  তৈরি থাকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি  
মিলনের নির্জন কালো পিচরাস্তাটি নির্বাক নদী হয়ে যায়  -
একা জেগে থাকা গাছটা আমায় চেনে না - আমি তারই নামে
শিমুল হয়ে যাই








যন্ত্রণা 

চলো হে , এবার না হয় ফেরা যাক সাটার বন্ধ মায়াবী আলো পেরিয়ে 
এই রাস্তা শেষে  নাবালের ব্যাপক কাদা চটকে চটকে গান গাই জাজ্ ,
ফেরা যাক রাতের ডেরায়  - বাস এসে থামলে ভাড়া করা রমনীরা
হাঁটতে থাকুক কামুক রাস্তায়  ; ঝটপট করা রাতের পাখিরা প্রচণ্ড ধ্রুপদ,
 বিষাক্ত জোনাকির সাথে ফিরে আসছে শান্ত আঁধার,  ভূমিকার পাতা খুলে 
শারীরিক হওয়ার আর্তিটুকু  জলজ মাঠের ধানগাছে মিশে যাক  -
বুনোফুল হত্যাকারীদের সামগ্রিকতায় হয়তো এ হণ্যমান শরীর 
আর দেরী নয় , আমরা তো এখনো বিপন্ন হই নি মৃত্যুঞ্জয় ; 
চেতনার ভিতরে জ্বলন্ত আগুন  দখল , খসে পড়ে অকাল ফুটন্তফুল -
হাতের আঙুলগুলোয় অচেনা হাওয়ার ভিড়ে অবিশ্বাসের ডানা  - 
বৃষ্টি পড়তে থাকে নীরব রাতের বুকে - এত সব পার হতে গিয়ে দেখি   
লুপ্তপ্রায় কাঙালদের হাতে কয়েক কিলোমিটার ক্ষতিপূরণ , নাকি ঢালাই রাস্তা ।








নিরাময়

অবসর নেই ,  তবুও মেঘলা দুপুরের ভিতর দিয়ে
 চলে যায় বিষন্নতা । অথচ শুকনো বাঁশপাতায়
তখনও লেগে আছে শিশির, ঝাড়ু দিতে চেয়ে
দহনের এক পর্বে চিবুক ছুঁয়ে দেয় রোদ
অনিবার্য এই বেড়ে ওঠা পথের ধারে অপাপ সুর, 
কোন নিশ্চয়তা নেই  - কেবল মুঠো ভর্তি  পার্থিব ঘাম
সারাদিন  এক ঝলক আগুনের জন্য বিহ্বল ,  অতীত থেকে
ভাসতে ভাসতে সীমানা ছিঁড়তে থাকে অপরাজিতার তরঙ্গ  --