বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

সমীরন চক্রবর্ত্তী


সমীরন চক্রবর্ত্তী

আলোছায়া মায়ময়
( গুচ্ছ কবিতা )

এক

শান্ত সরোবর থেকে উড়ে গেল শেষ পানকৌড়িটি,
কেন্দ্র থেকে অপসৃয়মান ঢেউয়ের বলয়
পা টিপে টিপে পাড় ছুঁয়ে যায়।
বাম দিকটায় চেনা ব্যথা, চিনচিন
হৃদয় কেন্দ্রীক বৃত্তবলয় সীমানা ছাড়ায়...
অস্ফু্টে বলে উঠি-
ওরে পানকৌড়ি, আর একটা ডুব দে,
আর একটা বলয় এঁকে যা, জল রঙে,
মনের ক্যানভাসে...।








দুই

নেমে যাই পুকুর ঘাটে
ধাপের পর ধাপ,
সাবধানে পা রাখি
আড়াআড়ি পাতা গাছের গুঁড়িতে,
সবুজে পিচ্ছিলে জেগে থাকে খুঁটি
আর জাগে খোলকের ভেতর ভীরু চোখ।
সব জেনেও পিছলে যেতে চাই
গেঁড়ি গুগলির ভেজা জলসায়।







তিন

নাব্যতা হারানো নদীটি বড়োই রহস্যময়ী
মুহূর্তে নাবালিকা খাল হয়ে যায় গর্ভবতী নদী,
হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা বিপদসীমা ছাড়াতে চায়।
ক্রংক্রীটের স্তম্ভে কালোরেখা
ধীরে ধীরে লাল দাগ ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখালেই
সহসা ধ্বনিত হয় শত রমণীর হাতের
বিপদ সংকেত শঙ্খ সমস্বরে,
গেল গেল রবে ভেঙে যায় পাড়...
ঈষাণ কোণে কালো মেঘ তখন উন্মাদ
আর এ পাড়ের সমস্ত বাঁধ?
শুধুই বালির বাঁধ...।








চার

আজ সারাদিন বিষাদের বৃষ্টি মেখেছি,
তারই মাঝে কিছু বলতে চেয়েছিল সোনালী রোদ,
একটা নাছোড় ফিঙে
তেড়ে যায় নিরীহ কাকের পিছে...
অকারনে তেড়ে আসে কালো মেঘ,
তোমাকেও বড় অসহায় লাগে
সোনালী রোদ...।







পাঁচ

মাড়ানো ঘাসের পথে রাত নামে,
পরশ লেগেছে চাঁদের পাড়ায়
বহির্বৃত্তে তখন বাস্পের ঠাসাঠাসি ভিড়।
জোনাকির জমায়েতে জৈব বিচ্ছুরণ হলে
শিহরণ জাগে ইউক্যালিপ্টাসের পাতায় পাতায়
এমন দিনেই লিখে রাখি বৃষ্টির পূর্বাভাষ
শুকনো মাটির ফুটি-ফাটা হরফে।








ছয়

সেভাবে কাছে আসোনি কখনোই
আজ তোমায় দেখেছি চাঁদের মুকুরে
হাতটা বাড়িয়ে দিই একটু একটু করে,
আরো মোহোময়ী হয়ে ওঠো তুমি
রহস্যের দূরত্ব বাড়িয়ে...
আলেয়ার মুখোমুখি বসি,
লিপিবদ্ধ করি
ভালোবাসা আর দূরত্বের ব্যাস্তানুপাতিক সূত্রখানি।