বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

মনিকা আহমদ


মনিকা আহমদ

ছায়া ও মেয়েটি

এলেবেলে ছবিটায়
চোখ আটকে গেল
ছবির নীচে অন্য ছায়া 
মেয়েটি চমকালো;
হঠাৎ ছায়া মেয়েটিকে বললঃ
থাকো কত দূর,
কোথায় তোমার ঘর? 
মেয়েটি কিছু ভেবে..
উত্তর দিল, তারপর
আমি একা_
তবু কিছু আছে;
হরিৎ বেলা
মেঘের সাথে ছেলেখেলা
রোদ্দুর এসে ঢেউ ভেঙে দেয়
আমার ঘরের পাশে
নোঙর করা নৌকো
নোনা সমুদ্রে
শিশুর মত হাসে..

ছায়া আবার মেয়েটিকে বললঃ
এবার খোলো তোমার চুল
তোমার চুলের ভেতর ওড়ে
হাজার রকম ভুল
ও মেয়ে, পাল তুলে দেই,
দেই দেই টান--?
সারা জীবন তোমার চুলে
নোঙর করে গাইব আমি
হরিৎ বেলার গান 







অপেক্ষা -২

যদি এমন  দিনে  আসতে
শীতের মৃধুমন্দ বাতাস লাগে গায়ে
খুব ভালো হতো হেমন্তের দুপুরবেলা
চোখে চোখে হতো রোদ্দুর  খেলা
তোমার আর আমার হ'তো দেখা !


শীত এসে চলেও যাবে  নীরবে,
পাতা ঝরা দিন শুরু হবে কিছু প'রে
যাবার বেলা শুরু হবে বৃষ্টি খেলা
বেলা বহে যাবে -
পান্ডুর চোখ খুঁজবে কৃষ্ণচূড়া
তখনো হতো যদি দেখা !


হয়তো হলুদ বসন্ত শেষে, তুমি উধাও বাতাসে
দাঁড়াবে খিড়কিতে এসে; বৈশাখী ঝোড়ো হাওয়া
যখন করেছি নোঙর অন্য দেশে...
হবে না কখনো আমাদের আর দেখা

তবু অপেক্ষা!







রাত্রির গান

যে রাত্রি জড়িয়ে ধরে পা তাকে আর রাত্রি বলিনা
যে গহন অন্ধকার ভালোবাসে
সে সবচেয়ে কাছে থাকে;
যে  সশব্দে কাছে আসে
তাকে ভেঙেচুঁরে হই
ক্ষান্ত অবশেষে ।

যে আমায় দেখেও দেখে না
সেই-ই  টানে-
সে' ই সবচেয়ে ভাল জানে;
তার সাথে হয় আমার পরিচয়
দিন রাত্রি পারাপার -
এক আলোকিত অধ্যায়।



তার সাথে বাঁধি সুর, প্রকৃতির স্বরে
সে বোধ ও বোধনে  টানে
রাত্রির অন্ধকারে, জড়িয়ে ধরে প্রাণে ।








মৃত্যুঘুম

আজকাল দু'চোখে গহন ঘুম নামে
সেই সাথে গহন মৃত্যুও ডাকে__
পোড়া চৈত্রের মতন হেমন্ত বাতাস
ঘুমের যাতনায়; কাঁদেকাটে
ঋদ্ধ হতে চায় বালুকণা, সমুদ্র ফেনা;
ডুবে যাই নোনা জলে, গহন ঘুমে...



স্রোতস্বিনী টেনে নেয় কোন কিনারে;
পাঁজর ভেঙে চূর হয়, রুক্ষপ্রকৃতি গিলে খায়
আমার সমুদয়!
এরচে' মৃত্যু কি ভালো নয়?








শৃঙ্গধরের দহন

সেই কবে শুরু হয়েছিল আমাদের দহনকাল; শৃঙ্গধর

তুমি কী এতই অসহায়,
আঁধারে ফোটা শুভ্র গুল্ম শেফালিকার জন্যে কাঁদো  !

বলেছিলে কী ভীষণ পুড়ে যেতে থাকো..
গাঢ় বিকেলেই  চোখে  নিঃসীম অন্ধকার; শ্বেতপদ্মে ঢাকো

অমানিশার রাত্রিগুলো  ঢালে গুপ্ত  দাহ;
দহনে পোড়ে বুকের লুকোনো শ্যামলতার গন্ধ

দেখো, একদিন আমাদের প্রেম হবে  চারুশিল্প
ওরা বুক পাঁজরে  আঁকবে  শ্বেতপত্র

কেন  তুমি একা একা বুকে কষ্ট জমাও ?
শিশিরের  মত  আমার বুকেও
টুপ টাপ টুপ টাপ শব্দ হও

শৃঙ্গধর, আজন্মের  তৃষ্ণিত  দহন
কিছুটা আমাকেও  দাও!