রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

গোপাল চন্দ্র সাহা


গোপাল চন্দ্র সাহা

আপেক্ষিক

ওই আকাশ বুকে আঁচড়,
ওই নদীর সীমানায় টান
          নোনা সাগরিকার
কখনো বাতাস কবরীতে
            নামে কবর প্রহর

হে কবি !
ক্ষান্ত কর সংলাপে অঙ্গার ব্যকরণ

অলক্ষ্যে বুনে অভি
কেন চোখে তুলে নাও দিপন
অথবা নির্যাসে দুরভিসন্ধি  !

তোমার বিষ যাপন অন্তরে
হিমশীতল বীজ যত
যেন না হয় মহীরুহ, অক্ষর মন্থনে

অমৃত সমীকরনে ক্ষয়ে যাক অন্তক্ষরন

আঁতকাহন যে নির্দিষ্ট
আপেক্ষিক আঙ্গিকে ,
তবু উপসংহার কেন দাউ-দাউ কবিতায়  !!






এপিটাফ

জল ধূলো জোছনা জলবায়ু একে একে মুছে
বাতাস কর্ষণে এগোচ্ছে শরীর
সবেগে আবেগ পিছিয়ে যায় রোজনামচায়

লক্ষ থমকে গেলে মুহূর্তে
প্রতিক্ষায় মিশেছে হুতাশ জল
এইমাত্র জীবন-কৃতি এ্যালবামে ছেড়ে এলাম  ।।






নিগৃহীতা তোমাকে 

সেদিন টুপটাপ বসন্ত ঝরেছিল
বয়েছিল গোছা গোছা নিঃশ্বাস
নৃশংস ফরমানে ছিল নষ্টমতি রাত

তুমি অজ্ঞাত ছিলে মসি অভিসন্ধির

নিভৃত বুকজলে যত বিকৃত ক্ষত 
লোনা-মানস বৃত্তে অকুল আর্তনাদ  -
ছুঁড়ে দাও পাহাড়িয়া মৌন পাথারে

অধর ভাষায় রেখ না অশ্রু জল

ওই অচিন থকথকে গরল ঔরসে
ভেসে উঠুক অনল দাবানল
বীরবৌলি পেষিত হোক পদ হুংকারে

একান্তে রেখে দিও একটি বর্ণালী-বাতায়ন  ।।




 


একটি পুরুষ ও নারী কবি 
        
নারী কবি নিজের কবিত্ব রসে বহুবার
কিশোরী বেলার তেঁতুল তলার গল্প আঁকে
লিখে কিতকিত অথবা আড়ষ্ঠ আড় চোখে
প্রজাপতি ছুঁয়ে নিজের হারানো কথামালা

কিন্তু পুরুষ কবি কিশোর বেলা রহিত
সে লিখে যুবকের যৌবনোচ্ছল ক্রান্তিয় ইতিবৃত্ত
রক্ত চরনেও বাঁশির ঝঙ্কার,
নিজ অঙ্গ উত্তাপে শীতল তমসা ভেদ
অথবা নিজ অভিমানে ডুবন্ত কাহিনী,
পুরুষ কবিরা বড্ড বেশী খামখেয়ালি

যখন নারী কবির কিশোরীটি চাঁদনিতে আপ্লুত
তখন পুরুষ কবির যুবকটির দৃষ্টি পথে
ওই জ্যেৎস্নীল কিশোরীর পট
যখন একলা দুপুরে কিশোরীটি নুপুর দুলিয়ে
ভাবহীন শ্বেত মর্মরে ছন্দ ছড়ায়,
যুবকটির বক্ষস্থলে বাজে দামামা  -
লজ্জা ঘন ওষ্ঠেও করুন বাঁশির মুর্চ্ছনা
(বোধয় বীরপুরুষও প্রেমে দুর্বল ভীত চিত্ত )

ওই পর্যন্তই,
শুধু বিরহ কল্পের অনিশ্চিত চক্রবুহ্যেই বদ্ধ
তাদের অনুরাগ গাঁথা
ওই যুবক আর কিশোরীটির অপূর্ণ প্রেম কথা -
অস্ফুট কলির মত, অন্তঃক্ষরনে হয় বিবর্ণ

নারীত্বের ক্রম কালে
অন্যকোন দ্বীপান্তরে কিশোরীটিও হলুদগন্ধী হয়

কারন, পুরুষ ও নারী কবিটি পরস্পরের অজ্ঞেয়,
আমিও আর বৃথা চেষ্টা করিনি  ।।





অবসাদ উৎসব

যাবেই যদি ভেসে ব্যসনী তানে
চিরন্তন সুখ অন্বেষণে,        যাও,
রেখে যেও অধর তিল অহংকার,
সাজিয়ে নেব চক্ষু উপাচারে
লাবণি সব সুখ-কথা বিগত শ্রাবনের

যা কিছু শিহরন সাক্ষী তমসা
জমা আছে অবদমিত জোসনা ,
গড়িয়ে দেব দিকহীন
নাবিক-সাগরে প্রান্ত রমন বিলাসে

তোমার চুপ ভাষার অক্ষর সাজাতে
অমা-রসে তুলির গাহন,
চোরাবালির বশে খরহীন স্রোত
বর্ণমালা সেজেছে নিঃশব্দ একাংক,

বিদ্রুপ উল্লাসে অবসাদ উৎসব
নিশি কুহরে প্রাক্তনী একাদের সমাবেশ  ।।






বিরহ-সৌখিন

তোমাকে তো বলে ছিলাম
চাইলে দিতে পার স্পর্শ
তোমার আলগোছা ফেনক হাসির,
আসতে হবে আমার বিরহ যাপনে ।

বিনিময়ে অজ-বীজ যদি ফুল হয়ে ফোঁটে ,
তোমার দীন উপহারে হব বিবর্ণ মঞ্জরী ।

আমার বেখেয়ালি কথা ও সুরের বাঁধনে
নিয়ে ছিলে যে রূপ রত্ন-ছদ্মবেশ,
রাখলাম তোমার মিথ্যে আশ্বাস
ভাঁজ না খোলা বিরাগ অবকাশে ।

আমার উসৃঙ্খল ছোবল গহ্বরে রেখ,
তোমার সযত্ন আর্ক সৌরভ ,
সন্তর্পণে ব্যাপ্ত ভূকম্প
আমার সাজানো দিগন্ত আলে -
যেন ভাঙ্গাচোরা ফিরতি পথে
তোমার ধ্রুব আলোরা দিশেহারা হয় ।

এখন স্থির প্রবাহে শুধু ডুব সাঁতার,
তবু পাশাপাশি শ্বাস অনুনাদ বাঁচে
ধবল-বিরহ মেখে একই পৃথিবীর বুকে, 
নিকট ব্যবধানে তোমার জাফরি সমাধি ।

আবার নতুন করে হারাবো বলে
মেঘজাল মেখে ঘূর্ণি সাজি
অন্তরীপে ডুবে থাকা প্রণয়ীর কাগজ ফুলে ।
তুমি চেয়েছিলে
তাই প্রতিটি প্রহর সাজিয়েছি বিরহ-সৌখিন ।।