রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য


অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য

রোদখেলাপী

তোমায় নিয়েই পয়সাকড়ি, তোমায় নিয়েই আড়ম্বরে ,

পারলে তোমায় আলগা করুক, উল্টো পথে ফেরার জ্বরে ।

প্রথম দিকের যত্ন খাতির, শেষের দিকের গভীর পালক ,

দিনে যারাই রোদখেলাপী, অন্ধকারের তারাই আলো ।

পারতে তুমিই, আগলে রেখে, স্পর্শকাতর রোদের আঁচে ,

শুকিয়ে নিতে বাষ্পবিষাদ, মন্দবাসার চশমা কাচে ।

সবাই তোমার প্রথমপুরুষ, সাম্যবাদী, অনেক শ্রোতা ,

যাদের ঘরে তোমায় যাপন, তারাই শুধু খরস্রোতা ।

আর তো কেবল কয়েকটা দিন, বিকল্প এক ঝড়ের আগে ,

সত্যি বলি? যুদ্ধদিনে, আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে !

বুঝতে যদি, পোষাক খোলার নির্জনতাই অসুখ সারায় ,

সরিয়ে আমায় দেবার সাথে, তফাৎ অনেক ভুলতে পারায় ।








মুলতুবি

কাকতাড়ুয়াই সুপারহিরো,

জোর ফলানো, আটকে রাখুন গদি -

সবার উপর মানুষ সত্য,

তাহার উপর সত্য দ্রৌপদী ।

মাঠের ধারে ঢেউপিচাশের,

প্রতি মাসেই বাছাই পাকা চুল -

শখের বয়স পেরিয়ে এলেন,

এখন তো সব ক্যালানে মাস্তুল!

পেগের পরে পেগেই কোমর,

তারও নিচে সভ্যতাজ্বর ফিনিশ -

লোভ লালসা - জল পিপাসা,

রাতবিছানায় সবই তো এক জিনিস।

সময় এখন বাসন মাজুক,

চিলশীৎকার, নীলচে পালক ছাড়াই -

গদ্য লিখুন শ্বেতবসনে,

আসুন না আজ, খুব কালচার মাড়াই!

লুপ্ত হাঁসের সুপ্ত ডিমে,

বিড়ালমুখোশ, ব্যস্ত দেখান খুবই -

অবাক হয়ে মানুষ দেখে,

ঘেন্না করাও রেখেছি মুলতুবি ।







অভাবী রংমশাল

যদি হাত পাতি বারুদের কাছে, যারা দুর্দিনে জ্বালে,
আলোর গভীরে ফুরিয়েছে আয়ু, অভাবী রংমশালের।

আত্মা পুড়ছে, উড়িয়েছো ছাই, মেনে নেব ক্ষয় ক্ষতি,
প্রতিটা ঘৃণাই ভালোবাসাদের সন্তান-সন্ততি।

চোখের ওপারে অপমান বাড়ে, বদলে ফেলার বাঁকে,
শান্তি ফিরলে সহজেই লোকে, ভুলে যায় যোদ্ধাকে!

তাদেরই জুটেছে ভিজে চোখ, আর আঘাতের আশকারা -
বিস্ফোরককে বুকে বয়ে নিয়ে স্নেহ দিয়ে গেল যারা।

রঙ্গমঞ্চে হেরে যাই, খালি সাজঘরে হয় জেতা,
আয়নার কাছে সবাই খুশির গল্পের অভিনেতা।

কাহিনী হারায় বোধনের স্মৃতি, বিসর্জনের জলে,
ছেড়ে যাওয়াতেই আজকাল শুধু, লোকে "ভালো থেকো" বলে।







অবুঝ আগন্তুক

গায়ে স্পর্ধার জামা তার, সাথে সন্দেহ-সংসার,
যত অপমান বোঝে ভার, যেটা ছিঁড়ে দেবে কোনও বুক -

কিছু "ভালো আছি" বলা ক্ষতি, তোর সন্তান-সন্ততি।
ঋণী দায়হীনতার প্রতি, কত অবুঝ আগন্তুক।

কেউ চিরকাল নতজানু, বোবা আঘাতের কাছে স্থাণু,
যদি তাদেরও ভাবতি মানুষ, যারা হাসল না কোনওদিন।

কোনও মেসেজ না আসা ফোনে, এক বোকা লোক কথা শোনে
তবু স্নেহ নেমে আসা মনে, সবই সারায় কি বোরোলিন?

আমি হাঁটি আয়ুরেখা ধ'রে, জানি আত্মা যেভাবে পোড়ে।
আজ পৃথিবীকে ছোট ক'রে, খুব বড় হয়ে যায় লোক -

এই তিনভাগে জল জমা, এর বিকল্প কিছু ক্ষমা,
তবু ভালোবাসা প্রিয়তমা, আজ সবটুকু তোর হোক !







তফাৎ

তবে কি আর দেওয়ার আছে, শুধু পড়েই থাকে মোহ,
মায়ের বানানো তরকারি, সাথে বাবার উপগ্রহ।

শুধু নাসির-রেখা জানে, কিছু মানুষ আছে ভিজে,
এটা নামেই সাথে থাকা, রোজই আত্মা পোড়ে নিজের।

যত উপড়ে আমায় ফেলো, ততো জাপটে ধরি তোমায়,
বলো, তফাৎ কোথায় প্রেমে, আর আত্মঘাতী বোমায়?

থাকো জ্বরের ঘোরে যখন, কপাল ছুঁইয়ে দিতেও পারি -
এই ভালোবাসার থেকেও, এখন স্নেহটা দরকারি।

ভুলে অন্ধকারের ব্যথা, যখন আলোয় তুমি সওয়ার,
তোমায় যাচ্ছে ছুঁয়ে যারা, 'জন যোগ্য প্রেমিক হওয়ার?

এত অসম্মানের পরেও, যারা থাকল তাদের নিও -
কারণ মরার থেকে বেশি, আজও কান্না জনপ্রিয়।