শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮

শ্রাবণী সিংহ


শ্রাবণী সিংহ

বয়ঃসন্ধির সে দিন

ভরদুপুরে ডানাভাঙা যেসব
অসুখী ফড়িং  নলবনে
খুঁজে বেড়ায় জরাসন্ধের  অতীত আস্ফালন,  দ্বিখন্ডিত ইতিহাস!



ছিঁড়ে যাওয়া মানেই বিচ্ছেদ নয়--
প্রত্যেক স্মৃতির নিজস্ব রঙ, রজগন্ধ নিয়ে শব্দফুল আঁকা থাকে,
চিলেকোঠার নদীদরজায়।


কাদামাটির তাল ভেঙে আনাড়ি পুতুল পুতুল খেলা,
এ ভঙ্গুর আঙুলে কতবার যে ছুঁয়েছি তোমায়
ইচ্ছে করে না বয়ঃসন্ধির সে দিন ফিরে পেতে?







প্রান্তরেখা ধরে

কাঠের গল্পের অনুবাদ হয় আসবাবে,
গাছগুলো ও একইরকম,
এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা বৃদ্ধাশ্রমের মা!


নৈঃশব্দ ভর করে কানাগলির নাভিতে-



মিহিন ওড়নার প্রান্ত  টেনে ধরে ফনীমনসার বন
পেরোতে পারি না, পেরোতেও চাই না।



অসংখ্য কবির ভেতর  এক গল্পকার
আঙুলছাপ রেখে গেছে মনের কৌতূহলী দরজায়।



নিয়ন্ত্রণ নেই আর
কবিতায় কি এত কথা বলা যায়?
অনেক কথাই তো হারিয়ে যায় হারিয়ে যাওয়ার জৌলুশে



লাখো কথার  একটাই মানে দাঁড়ায় তখন-
             ' ভালোবাসি'







স্বগতোক্তি কিছু

কল্পনার সূত্রে বহুদূর থেকে জেগে ওঠে কংসাবতী নদী এক;
মাতম নেমে আসে তারার রাজ্যে,
ভাঙ্গা দীপাবলী
রাতকে সূচিত করেছি নেভানো বাতিতে,
দীর্ঘতম পিপাসার মত দূরত্বের প্রেম ছটফটায়।


চাইনিজ ইঙ্কের নকশা থেকে হাত সরে যায় কবিতার দিকে,
মুদ্রাদোষে
শব্দ সাজাই
কাঁটাছেঁড়া কথা সব লেখা যায় না।







জীবাশ্মের অভিমান

আলোকবর্তিকার মত সমানে জ্বলতে থাকা ঘুলঘুলির রোদ,
নিমপাতার কারুকাজ মেলে দেয় কার্নিশে।
কোন্‌ ফাঁকে মিলিয়েও যায়
দেখা হয় না।



আবেগে নিয়ন্ত্রন এসেছে,
ইদানীং হাতঘড়ি দেখা হয় না, সময়ে সময় দেখা।

মলাটহীন বইগুলোর শেষপৃষ্ঠা পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখা হয় না,
একদিন বাতিল কাগজের সাথে অনামা বাঁধা পড়ে যায়।
অবহেলার শূন্যস্থানে দলছুট পিঁপড়েরা বাসা বেঁধেছিল
পরতে পরতে দেখি
সাদা-হলদেটে ডিমের ফসিল,
দাগ রয়ে গেছে তেমনি অক্ষত!



পিঁপড়েরা কি মনস্তত্ব বোঝে?


জীবাশ্মের অভিমানও কি শুধু
পাথরই বোঝে!








বৃষ্টি এক শিরোনাম

বৃষ্টি এক ময়নাতদন্তের নাম!


জলের তোড়ে ভেসে আসা চটিটা  তোমার ভেবে 
বারবার মুখে করে নিয়ে আসছে  বেয়াড়া কুকুরটা ...


তুমিও কি ফেরত আসতে চাইছ
                   অন্যস্রোতে?

 …………………………

জলেডোবা পায়ের পাতার একাংশে
                তোমারই অর্বাচীন ছোঁয়া... 
স্মৃতিরা কিছু বলছে,      খুব নিচু স্বরে
জলের ভেতর দুটো পেখমী মাছের  গল্প হয় যেভাবে ।
বৃষ্টির পর জং-ধরা বিমর্ষ সাঁকোটি এখনও
আমার পাশে 
তোমাকেই বসাতে চাইছে।

না ঈশ্বর,না শয়তান
বৃষ্টি এক বহুল প্রচারিত শিরোনাম!