সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

স্বপন কুমার দাস



স্বপন কুমার দাস


মহাকাব্যের পোষাক

দিনের আলোর রূপটান মেখে
তোমার পতাকা অর্ধনমিত থাকে।
মধ্যরাতের অভিমানি আবেগে
দরজা খুলে-
কখনো কি কুড়িয়েছো  উঠানের জ্যোৎস্না ?
প্রেমের আবরণে ঢাকা তোমার অবয়ব
চিনিয়ে দেয় পথ-
তবুও পুরুষের পদক্ষেপ বড় সংক্ষিপ্ত।
সময়ের ভাঁজে ভাঁজে বসে
বিষাদসিন্ধু গাইতে যে একতারাতে
তাকে ভাসিয়ে দেবার পালা।
মনের ত্রাণতো মন্ত্রে নয়।
অরাজক বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে
ঠিকানার খোঁজে
সব কাঁটাগাছ উপড়ে ফেলতে হবে তোমাকেই।
মহাকাব্যের পোষাক ছেড়ে
এবার বোধহয় যূথবদ্ধ হবে সব নারীমুখ।






দুরত্ব

শব্দগুলো সাজানো ছিল
দুচার দিনের দেরীতে ঝরে গেছে সব পালক।
-আপাত নিরীহ চরিত্ররা যেমন নগ্ন হয়।
যে কথা বলার ছিলো আভিজাত্যে
ফিরে আসে।
গভীর রাতের বৃষ্টির বৃন্দগান শেষে
কখনো সকাল হয়।
সবুজ ঘাসে পা ফেলে ফেলে
আবার পরিচয়ের পালা।
মাঝে মাঝে মাটির দুরত্ব অপরিমেয়।
আসলে কয়েকটি চেনা বিন্দু পেরিয়ে যাওয়া।






ফসল

প্রথম ঋতুস্নানের পর মেঠোপথ ধরে ফিরছে কিশোরী
সব চপলতা দুহাতে নিংড়ে নিয়েছে আগেই।
সরল গাছেরা বোধহয় জেনে গেছে
ওর আঁচলে বাঁধা আছে শষ্যবীজ।
এবার বোধহয় কাতরঘুম থেকে জেগে উঠবে সব অনন্ত্ উত্তাপ
এ পৃথিবী কোন নতুন ফসলের জন্য উৎগ্রীব।
উচুঁ নীচু মাঠ
সব দুরত্ব
গলে গলে সমতল হচ্ছে।
কোন ইতিহাস অনায়াস নয়।
এস শেষ নিঃশ্বাসকে একটা নাম দেবার শেষ চেষ্টা করি।






ঘরবাড়ি

শ্রাবনের অফুরন্ত সবুজ কোন বৈশাখী দিনের স্বপ্ন।
জীবনের মধ্যেই নিহিত মৃত্যুর পালক
একদিন ফসলের মাঠের দুরন্ত্ বালকও জেনে যাবে।
আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় ঈশ্বরের বসবাস
বট অশ্বথের চারাগাছের মত
দেওয়ালের ফাঁকে, মৃতগাছের কোটরে
কয়েকটা পল শুধু কাটিয়ে যাওয়া।
সব ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক নির্জন বিমর্ষতা
মরুঝড়ের পর বেদুইন উঠে দাঁড়ালে
ওর হাত ধরতে এগিয়ে যাব।
হৃদপিন্ডের খননে
এইরূপ আরো অনেক শিলালিপির আবিস্কার হয়ে গেলে
তার উপরে গড়ে উঠবে সব অনন্ত্ ঘরবাড়ি।





চলাচল

পাইনের বনে পাশাপাশি হাঁটবে বলে
শুনতে চেয়েছিলে সেই সব পদাতিকদের কাহিনী….
যারা হেঁটে গেছে এই রাস্তায়।
যেখানে পথের ভাঁজে ভাঁজে গুছিয়ে রাখা আছে
কিছু নিথর শব্দ।
কিংবা কোন প্রেম গৃহপালিত হবে বলে
সন্ধ্যার শিশিরে সিক্ত।

এইসব সারি সারি ইচ্ছার পিছনে চলেছে আমাদের কাফেলা।
কে জানে কোন ঘন্টার আঘাতে আবার শুরু হবে
রক্তের চলাচল।
অনেক হিমশীতল হাওয়া পাইনের ঋজুতাকে স্পর্শ করেনি।
একমাত্র প্রেমহীনতাকেই ভয়..
এ সময়তো বাঁচার..
এস হাতের মুঠো হালকা করি।