সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

জ্যোতির্ময় মুখার্জি



জ্যোতির্ময় মুখার্জি


টাচস্ক্রীন অভিসার

মেঘ জমলে কবিতা আসে,
কালিদাস সাক্ষী ।
তোমার শরীরও পালটে পালটে যায়
বা তুমি, ভরা শ্রাবণে
বা মন-কেমনের বসন্তে।
পাখি, নদী বা মেঘের মতো ভালোবাসাকেও ফিরে ফিরে আসতে হয়,
ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে দেয়
গা থেকে সরে যাওয়া চাদর।
মধ্যরাতের হঠাৎ উষ্ণতায় মাখামাখি, সাক্ষী আমি, সাক্ষী তুমি।

টাচস্ক্রীনের নীল আলোতে ভেঙে ফেলেছি ঘুমের আদিম সার্কেল,
অপেক্ষায় মেলাটোনিন,
ভালোবাসার মতো ঘুমেরও
একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি লাগে -
'....দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস'

এখন রাতের গায়ে লেগে থাকে
কিছু ধূসর পংক্তি,
বৃষ্টিতে বা খসে যাওয়া চাদরের মধ্যেই ঘুমিয়ে বা জেগে থাকে কবিতা,
আয়েশে জড়িয়ে নেওয়ার অভিসারে ।






রোমিও টু HCL

এক

মন খারাপ হলে আমি আজও
কবিতা পড়ি না, অংক কষি।
মাথার পাশে থমকে আছে সময়,
হাতির শুঁড় দুলতে থাকে,
যার এক প্রান্তে ইনফিনিটি হলে
আর এক প্রান্তে অবশ্যম্ভাবী আমি।

কোনও এক বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু হঠাৎ এসে
বসলো পাশে
মুচকি হেসে
চলতে চলতে
টলতে টলতে
খিলখিলিয়ে
একটু সরে
একটু দূরে
কখন যেন বেঁধে ফেলে
এক বুক চিনচিনে বলরেখায়,
আমার চুম্বনে আকৃষ্ট সে?
না আমি তার ?

দুই

দোলনের দোলনকালটা মনে পড়ে ? জেনে নাও কলুর বলদও তাই.....
প্লিজ, কোনও এক সান্ধ্য বায়ু নাড়িয়ে
দিও না আমার এই এলোমেলো অবসর।

বৃষ্টি নামলে আমি আজও হাত রেখেছি তার হাতে, মাথায় জলজ বিক্রিয়া,
পতিতার ক্ষণিকের যৌনতা ভুলে
HCL এর ঝাঁঝালো গন্ধ ভেজায় আমাকে।

কোনও নারীর সামনে দাঁড়ালে অবধারিত ভাবে নিচে আরও অনেক নিচে........
স্পষ্ট বলছি সুন্দরী, তুমি নও
তোমার শরীরের গন্ধ খোঁজে শরীর।

জাড্য বলে, আমি নাকি নাস্তিক,
বিষ দাঁত ভেঙ্গে ভেক ধরেছি কবির,
কবি ?!
এক সুন্দর অঘটন,
কবিতা,
আমি আজও তোকে হিংসা করি।






মনসিজ

কদম্ব গাছের তলে
এখনও কেউ পথ ভোলে
অপেক্ষায় কেউ আছে আমার.....

চোরাবালি, আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছে শরীর, উপত্যকার ঢাল বেয়ে
গড়িয়ে গেলে চাঁদ, বাথটাবের
গলন্ত শরীরে নুন খুঁজতে আসে সমুদ্র,
উষ্ণতায় পারদ আর ডিগ্রি খোঁজে না, চুম্বন নয়,
চুম্বনের ইচ্ছাতেই ওম্ হয়ে থাকি আমি, কাছিমের ডিমে ভেজা বালিয়ারিতে
গন্ধ শোঁকে শরীরি ক্যালকুলাস।

রিং টোনে কেউ ডাকে....
আয়... আয় চলে আয় হামারি গেহ.....

'উড়ে যায় যায় যায় যায়
মন পাখি মথুরায়।'






থমকে থাকা ট্রেনের কামরা

থমকে থাকাই ভালো,
জানলার কান ঘেঁষে চা-চায়...চা-চায়....
একটা কুকুর ঠ্যাং তুলে
প্রকৃতিকৃত্যে ব্যস্ত,
কয়েকটি আরশোলার ছানা
জন্মসুখের আহ্লাদে ফরফর...ফরফর...
ঘরঘর...... ঘরঘর....
ঝুলে থাকা ঝুলে কালো হয়ে যাওয়া ফ্যানটার ওটাই একমাত্র ক্যাপাবিলিটি,
বাতাস টক হয়ে ওঠে।

তুমি জানলার পাশে আসবে ?
আসতে পারো,
ডাঁয়ে কিংবা বাঁয়ে....
অবধারিত ভাবে আমার ঘাড় ৭৫ ডিগ্রির উপাদেয় অ্যাঙ্গেল খুঁজে নেবে।
ঘাড়ে খিল ধরতে পারে - ধরুক,
তোমার বিরক্তি হতে পারে - হোক,
তোমাকে কেন্দ্রে রেখে
দৃশ্যরা এইভাবেই জন্ম নেয়।







ল্যাংচা কাহিনী

লুডো খেলতে বসে খুনসুটি হবে না,
এটা কখনও হতে পারে ?
যা, আর খেলবোই না
বলে একজনের উঠে যাওয়া
আর জিততে জিততে হেরে যাওয়া
দুটি হৃদয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে
একটা না লেখা কবিতা।

দানে দানে পা ফেলতে ফেলতে
কখনও কাটাকুটি কখনও বা
গলা জড়াজড়িতে ওরা হেঁটে এসেছে অনেকটা পথ, চার দেওয়ালের খোপে।
এঐ চতুর্ভূজের প্রতিটা দান ই স্পেশাল, শুধু ছক্কা নয়,
পুটেরও একটা প্রস্তুতি লাগে।

আসল গল্প যদিও এটা নয়,
গল্পটা তাহলে বলি শোনো.....

'দেশ'-এর পাতা চাখতে চাখতে আমার স্ত্রীর বায়না এলো, একটা গল্প লেখো।
হঠাৎ !! এমন আবদার ??
এমনি, তোমার কবিতা আর ভাল্লাগে না, সমাপ্তিতে ছোট্ট সুইট স্মাইল।

বুঝলাম, গর্ভবতী নারীর অনেক সময় প্রিয় খাবারেও অরূচি ধরে,
কয়েক শতাব্দী পর 'ল্যাংচা'
তৈরীর অর্ডার এলো আবার।

তোমাদেরও চুপিচুপি বলে রাখি,

'ল্যাংচা'-র গন্ধ পেলে কিন্তু খবর পাঠিও।