শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

সৈয়দ রনো



সৈয়দ রনো

ভাইরাস

কম্পিউটারের ডি-ড্রাইভে সংরক্ষিত
তাবত মানবিক মূল্যবোধ
চিন্তাশক্তির স্ফুরণে প্রতিটি ফোল্ডার
কানায় কানায় পরিপূর্ণ
ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠলো অনাকাক্সিক্ষত ভাইরাস
নগর সভ্যতা আর আধুনিকতার শরীর দিয়ে
বইছে তরতাজা রক্ত
এ যেনো জীবন্ত গাছের শরীরে ঠুকা
প্যারেকের আঘাতে ফিনকি দিয়ে
বেরিয়ে আসা নির্জীব প্রাণ
অবজ্ঞা আর বঞ্চনার বোঝা মাথায় চাপিয়ে
হৈ হুল্লরে মেতে উঠলো আমজনতা
কর্তৃপক্ষ দক্ষ একজন ইঞ্জিনিয়ারের খোঁজে
পত্রিকায় ছাপালেন বিজ্ঞপ্তি
হার্ডডিক্স মেরামত করতে যথা সময়ে
নিয়োগ হলো কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ
দেশি এবং বিদেশী দক্ষ কম্পিউটার
ইঞ্জিনিয়ারগণ দিনের পর দিন
মাসের পর মাস শত চেষ্টা করে
উদ্ধার করতে পারছেন না
ঠাসা বাঙ্গালীয়ানায় গদগদ মানবিক মূল্যবোধ
কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ অবশেষে মাথা নুয়ালেন
ভাইরাসের উলঙ্গ শরীরে
অফিস পাড়ায় ভিড় জমানো
অর্ধাহারী অনাহারী জনতার ঢলে
প্রকম্পিত হলো রাজপথ
আকাশ বাতাস কাঁপানো স্লোগানে
মুখরিত হলোÑ
কায়েমি স্বার্থবাদীরা নিলামে তুলেছিল
মানবিক মূলবোধ
বিদেশি বেনিয়াদের কাছে
এক শ্রেনির মুনাফাখোর
চড়া দামে বিক্রি করেছে মানবতা
তৃতীয় শ্রেনির নাগরিকদের চোখে মুখে
মুখোস পড়াতে সুশীল সমাজের
বাসিন্দারা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে বললেনÑ
ভিনদেশে পাচার হচ্ছে চিন্তার জগত
তাই ভাইরাস নিয়ে কথা না বলাই শ্রেয়
অনাহারী মানুষের তোপের মুখে
টুকরো টুকরো হয়ে খসে পরতে থাকলো
সভ্যতার আবরণে বেস্টিত
অসভ্যতার লেবাচ
কিছুটা নিরুপায় ও বাধ্য হয়ে
লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠিত হলো
কীভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত বিবেক এখন
অমানবিকতায় খেলা করে সকাল দুপুর
আর উলঙ্গ নৃত্যে মাতে সাহেব বিবির
পরকিয়া প্রেম
মাসের পর মাস বছরের পর বছর
তদন্ত কমিটি ভাইরাসে আক্রান্ত
হতাশার চাঁদর মুড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকলেন
উচ্ছক নিন্মবৃত্ত মধ্যবৃত্ত এবং চতুর্থ শ্রেনির
কর্মচারী, কৃষক, জেলে তাঁতি, মুজুর
হাড্ডিসার কংকাল সর্বস্ব শরীর নিয়ে
গুনতে থাকলেন প্রতিক্ষার প্রহর
এই বুঝি ভাইরাস থেকে মুক্ত হবে
মানবিক মূল্যবোধ
না, কোনো গত্যান্তর না দেখে
ক্ষুধার জ্বালায় ফুটপাতে নেমে এলো
বেকার শ্রমিক বুভুক্ষ বৃদ্ধ রোগাকৃত বালক
সবাই ভিক্ষের থালা হাতে ঘুরছেন গোটা শহর
মুনাফাখোর লুটেরা আর স্বার্থবাদীদের
উত্তর একটাই ভাইরাসে আক্রান্ত এখন মস্তিষ্ক
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পর
সাহায্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখা যাবে
ততদিনে সমাজের আর্বজনা কিছুটা
হলেও পরিষ্কার হোক
বুড়িমার শরীরের ঘাঁয়ে
প্রতিদিন প্রতিরাতে মুচকি হাসে
ভাইরাসে আক্রান্ত একঝাঁক মশা এবং মাছি
ঠিক তখন সভ্যতা হেলান দিয়ে মধ্যরাতে দাঁড়িয়ে থাকে
আধুনিক নগরীর একঝাঁক যুবক যুবতী।



কবিতা নয় গল্প

কাব্য আড্ডায় উপস্থিত হয়েছেন
কবিতার প্রেমে শত শত কবি
অনেকেই অনেক কাজ ফেলে 
এসেছেন কবিতাকে ভালোবেসে
কয়েকজন পুলিশ এসে পিছন
সাড়িতে বসেছেন আয়েস করে

বৃদ্ধ তরুণ মধ্যবয়সি যুবক কিংবা
যুবতী সবাই সন্ধ্যা প্রদ্বীপ জ¦ালা
কবিতার প্রহরী
জমপেশ আড্ডার কাব্য পাঠের শ্রুতিমধুর 
বাক্যে ব্যাকুল উপস্থিত কবি
ভাবাবেগের শত মুগ্ধতায়
শুনছেন কবিতার পাঠ

খন্ডিত একটুকরো কাগজে কেউ লিখে
এনেছে কবিতা
আবার কেউ কেউ এনেছে ড্রাইরি কিংবা
উলঙ্গ ঝক ঝকে সাদা একপৃষ্ঠা
কবিতাময় কাগজ

একজন কবি দাঁড়িয়ে শুনালেন রূপকথার গল্প
কবিতায় ধারণ করেছেন সময়
পূর্ব পুরুষের প্রতিচ্ছবি
মনোযোগি পাঠকের মতো শুনেছি তার
কবিতার বোধ এবং বোধনের আর্তি
গল্পটি মোটেই অপরিচিত নয়
আমার তখন উঠন্ত বেলা
দাঁড়িয়াবাধা আর গোল্লাছোট খেলার
ফাঁকে শিশিরে ভিজিয়েছি
তারুন্যে সিক্ত পা

মনের ঝুল বারান্দায় হেটেছি হেলে দুলে
সেই কবে থেকে
জোছনার সচ্ছ জলে পশ্চিম দিগন্তের
সূর্যটা খেলেছে ডুব সাতারের খেলা
নির্লজ্জ ¯রাতে ভেসে গেছে জীবনের দিন
তামাশার বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা বিবেক
অযত্ম আর অবহেলায়
গুমরে গুমরে কেদেছে সকাল দুপুর
দর্শক সাড়ি হতে উচ্চারিত হলো
কি জানি বাপু
আত্ম ভোলা মনে এখন আর মনে
পড়ে না ও সব
অতিত সে তো মিশকালো অন্ধকারে ঢাকা

আড্ডার মাঝখান হতে দাঁড়িয়ে সমিরন বললেন
অতিত আর বর্তমানের মাঝে
বিস্তর ফারাগ
লাউ এর জাংলা পতিত পড়েছে এবার
লাউ গাছের বন্ধ্যাত্বের বিষয়টি
এখন তার নিত্যদিনের ভাবনার ক্লেদ
আগের মতো গাভীর ওলানে দেয়না দুধ
মানব সেচ্ছাচারিতায় প্রকৃতির বুক
শুকিয়ে হয়েছে মরুভূমি
ঘাসের অভাবে স্বাভাবিকত্ব হারাচ্ছে বিবেকহীন প্রাণী

স্বামীর অকাল মৃত্যুতে অমর আলী নাকি
সমিরনের চিন্তা জগতের সাথী
মন খারাপের বন্ধ জানালায় দাড়িয়ে
সমিরনকে বুঝাতে পারে না অমর আলী
অতিত আর বর্তমানের মধ্যে যোজন যোজন তফাত
স্মৃতি এবং চৌতন্যের মন্থনে
ঘোলাটে নোনাজলে ভেসে ভেসে
অতিতের ভাড়ে নুজ¦্য এ পৃথিবী এখন
অনউর্বর এক ধান কাউনের মাঠ
বয়স ভাড়ের ক্লান্তিতে
পৃথিবীর বুকে চেপে বসেছে
সা¤্ররাজ্যবাদের জগতদল পাথর

কে বুঝাবে কারে
সৌরজগতের জাগতিক শক্তি আগলিয়ে
মহা সংকটে দাঁড়িয়ে আছে
পৃথিবী নামক সভ্যতার বেলাভূমি
যেখানে কল-কারখানার ধুয়ায়
প্রবাহিত বাতাসের ওষ্ঠাগত প্রাণ

বুড়িমা প্রস্তাব করলেন
এতই যখন সংকট তাহলে
প্রতিবাদে এগিয়ে আসুক সময়ের সাহসী সন্তান
যেহেতু সজনে ডাটায়
এখন আর ডাল রান্না হয় না
যেহেতু মাছে ভাতে বাঙালী গরীব দুখির
ক্ষুধায় জোটেনা অন্ন
বস্তির রোগাকৃত বালক বালিকার
টিং টিং এ দেহের খাঁচা ভেদ করে 
দেখা যায় আকাশ জমিন
যেহেতু হালুয়া রুটির আশায়
একদল সার্থবাদী মানুষ দ্বারা
রচিত হয় বিক্রীত ইতিহাস
সেহেতু ঝিঙ্গে ফলের আবাদের কথা না ভেবে
ভ্যাকছিন পুষ করানো হোক সভ্যতার নাভিমুলে

উচ্চকৃত কণ্ঠ শুনে তারুন্যের আলোতে
উদভাসিত একজন কবি আড্ডায়
দাঁড়িয়ে গেলেন
সমিরন ধমক দিতেই মাথা নুয়ালেন তরুণ কবি
সমিরন তর তর করে বলতে থাকলেন
তার বৈধব্যের কাহিনী
যুবতী হয়ে ওঠবার আগেই
উপচে পড়া নদীর ঢেউ এর মতো
খল বলিয়ে দেহের জমিনে বয়েছে
ভরা যৌবন
পৌষ পার্বনে দুধ কুলি পিঠা
চিবুতে চিবুতে স্বামীর স্পর্শে হয়েছি আত্মহারা
স্বামীর অপার মগ্ধুতায় কতই না
ঝরিয়েছি শরীরের ঘাম

স্বামী আমার মুক্তিযুদ্ধে গেলেন
তখন আমার যৌবনের উষ্ণ সময়
মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম
বাঙালী জাতীকে
স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্র দিলেও
আমি আজীবনের জন্য হারিয়েছি
স্বামীর উষ্ণ আলিঙ্গন
মনের জমিনটা হয়েছে ভালোলাগা
ভালোবাসাহীন এক পরাধীনতার বেলা ভূমি
রক্ত মাংসের উষ্ণতায় এখনো
ভিজে নিজের শরীর
আর চোখের জলে ভিজে স্যাত স্যাত
মা মাটি আগলে রাখা কালোরাত

দাঁড়িয়ে থাকা দ্রোহের কবি
আকাশ পানে তাকিয়ে
পায়ের বুড় আঙ্গুল দিয়ে
মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে ভাবের
জগতে নিপতিত হলেন
আঁকতে চাইলেন ব্যার্থ সময়ের
মিশকালো অন্ধকার ঘেরা প্রতিচ্ছবি
কবির উদাসিনতা দেখে
আড্ডায় উপস্থিত সবাই হো হো
করে হেসে উঠলেন
বুড়িমা তাচ্ছিল্য করে বললেন
বুঝেছি বাপু
প্রতিবাদ তোমাদের দিয়ে হবে না
তুমিও ব্যর্থ ঈশ^র পল্লীর সন্তান
তোমার পায়ের তলার  মাটি
আপোষ কামিতায় কখনই ক্ষমা
করবে না
অমন করে কি ভাবছো হে কবি
প্রকৃতি কিংবা প্রেমের এক নতুন চিত্রকল্প
হবে না কিচ্ছু হবে না ও সব


কায়েমি সার্থবাদীদের বীরুদ্ধে
কবি শুনালেন শব্দের নিখুত গাঁথুনি
কবির আত্ম চিৎকারে ফেটে চৌচিড়
হলো আকাশ
থর থর করে কাপতে থাকলো
পায়ের নিচের মাটি
আড্ডার কিঞ্চিত দূরে
কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা
বটগাছ খানিকটা নড়ে চড়ে উঠলো

বন্ধুকধারী পিছন সাড়িতে বসে থাকা
তন্দ্রাচ্ছন্ন পুলিশের ঘুম ভাংলো
কবির আত্ম চিৎকারে
প্রতিবাদী কণ্ঠ শুনে
বন্ধুকের নল উচিয়ে বললো
বুটের লাথিতে
নির্বাপিত হোক কবির হুংকার
বন্ধুরেক নলের ডগায় ছট ফট করে
কাঁদতে থাকুক কবির স্বাধীন
ইচ্ছা শক্তি

বুড়ি মা আর সমিরনের
স্কন্ধে হাত রেখে
কবি শুনালেন শত সহ¯্র বিপ্লবী পংক্তি
কবিতার পরতে পরতে ছত্রে ছত্রে
লুকিয়ে থাকা দ্রোহের অনলে
দু পাশের দুজনের চোখে মুখে
নেমে এলো অশ্রুর বন্যা
নিরাশাঘেরা বাস্তবতার আশার স্ফুরণ
রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় কিংবা
ফরমালিনের ব্যবহারে তরতাজা সমাজ
আর মানুষের পাকস্থলিতে শুধু পচন
ধরা দুরগন্ধ

ভেজালের সয়লাবের দুনিয়ায়
আমরা কজন কবি মাত্র
এ্যাবরো থেবরো চিন্তার জগত
সবাই যেনো প্রতিবাদের ভাষা
হারিয়েছি আজ

দেখে নিও বুড়িমা
দেখে নিও জাতী
ভেজাল পুলিশের ভেজাল বন্ধুকের গুলিতে
ক্রস ফায়ার হবে
ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুবে এই বাংলায়
ঝড়ে যাবে শত শহ¯্র নিস্পাপ প্রাণ
কিন্তু আমরা
আমরাও শোষকদের শিখিয়ে দিতে চাই
প্রকৃত কবির মৃত্যু নেই
মৃত্যুর ভয়ে মোটেই বিচলিত নয়
কবিতার চরণ।




কবি হয়ে ওঠার গল্প

প্রাণের উচ্ছ্বাসে পাখনা মেলে উড়তে চেয়েছিলো সময়
কী যেনো এক ভয়াল দেবদারুর তা-বে
হয়ে ওঠে না ওসব

প্রণয়ের রৌদ্র খরতাপে
পুড়েছে বুকের জমিন
এক গুচ্ছ সোনালী স্বপ্ন আগলিয়ে
যন্ত্রণার মাটিতে শুয়ে থাকে
খা খা রোদ্দুর
দেহের জ্বলন্ত দাহে
জীবন থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ে সময়
চিন্তার আবর্তে আমি
মা মাটির ঘ্রাণে মাতাল কবি

শহরের একটি চাকচিক্যময় বিকেল
বাতাসের ইচ্ছের ডানায় ভর করে
ছুটে যায় সপ্ত আকাশের দিকে
তখন নব বধূর ঘোমটার লাজে
খেলা করে নিলাভ সন্ধ্যা
গোধূলীর স্বপ্ন রঙে বাংলার আকাশ
হয়ে ওঠে কবিতার প্রহর

বাতাস কাটা যন্ত্রণায় আমি ক্ষণিকেই
বিত্ত বৈভবহীন হয়ে পড়ি
সঙ্গীহীন হৃদয়ের শূন্যতায়
আমার নিঃশ্বাস ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে
জেগে ওঠে পারহীন দিগন্তরেখা
মৃত মানুষের পাহারায় আলোকিত করিডোর
একটি মিষ্টি বিকেল আমার
কপালে চুমু খেয়ে বলে
তুমি তো কখনো হৃদয়ের কান্না শোনোনি
শোনোনি রাত্রির ভয়াল চিৎকার
কখনোই দেখোনি
ছোট্ট শহর কীভাবে মেঘবতী হয়ে ওঠে
এরপর তারপর দীর্ঘ ইতিহাস
ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায় আমার কবিসত্তা
স্বপ্নের ঝুলন্ত বাস্তবতায়
আমি হয়ে ওঠি খেয়ালী
কবিতার বিমূর্ত প্রতীক

ধূসর জোছনায় কবিতার শরীরে
এঁকে যাই বিবাগী মনের অফুরান্ত শব্দ
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের করতলে
অঞ্জলি পেতে কুড়াই
হাজারও রূপকথার গল্প
চিত্রকল্পের নান্দনিক ক্যানভাসে
মনের বাসর ক্রমশ জমে ওঠে
অনিন্দ্য সুন্দর শব্দ ছন্দের জমপেশ আড্ডায়
ক্ষণিকের জন্যে হলেও
আমি কবি হয়ে ওঠি।



শব্দচাষের যুদ্ধ

নান্দনিক শব্দে সাজাবো বাংলার কাব্যম-ল
নতুন শব্দের প্রতীক্ষায় বসে থাকি
বিনিদ্র রজনী
হাজার কোটি নক্ষত্রের বুকে
আঁকতে থাকি লক্ষকোটি কবিতার পঙক্তিমালা

না! কিছুতেই নতুন শব্দে হয়ে ওঠেনা কবিতা
বিজ্ঞানমনষ্ক ভাবনার নতুনত্বও ক্রমশ
ফিকে হয়ে আসে
তাই তো জলহীন মেঘের প্রলেপে ঢাকা পড়ে যায়
কবিতার আকাশ

ফ্লাইট বাতিল হওয়া নিরুপায় যাত্রী আমি
কাব্যম-লে আর একটি মহাযুদ্ধের কথা
যে যুদ্ধ আমাকে অনেক অনেক শব্দ দিতে পারে
সহ¯্রাব্দের অন্ধকার ঘুচিয়ে নতুন একটি শব্দ
শব্দবিন্যাস কাব্য শরীরে এনে দিতে পারে
সোনা ঝরানো সূর্যের প্রলেপ
তৃষ্ণার রোদ বৃষ্টি ঝরাবে কবিতার চোখেমুখে

সেদিন গভীর রাতে শুনেছি কয়েকটি কান্নার শব্দ
মৃত্যু পথযাত্রির শিহরে বসে ছিলাম
নতুন একটি শব্দের অপেক্ষায়
কেবল একটি শব্দই পারে
ঘাস চাতালে ফোটাতে শরতের কদমফুল

৭১ এর আকাশে মুক্তিযোদ্ধারা ফুটিয়েছিলো
বজ্র মেঘের ফুল
তেমনি ফুটাতে চাই
সমরে সাহসী কাব্যময় নতুন শব্দের অষ্কুর
টগবগে নতুন শব্দ পাবার লক্ষ কোটি মাইল
কংক্রিট পেরিয়ে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ
চোখের নিমেশে হারিয়েছি প্রিয়ার
কোমল ঠোঁটের হাসি

সব হারানোর বেদনার শব্দ
শব্দ এসে জমেছে মাথার ঘিলুতে
রক্ত সাইক্লোন বেগে
হৃদপি- থেকে বেরিয়ে আসে
একেকটি তরতাজা শব্দ
অতঃপর বোপন করি কবিতার শরীরে

রাক্ষস আর ঈশ^রের পেট চিরে
বের করে আনি উপমা অলংকার
কাব্যময় বাগানে বুনি ছান্দিক চারা
স্বপ্নীল কুয়াশামাখা রমনীর সুখ হয়ে
মনের তন্ত্রীতে ভেসে বেড়ায় কবিতার চরণ
ঠিক তখন কবিতার শরীরে এঁকে দেই
একটি নতুন শব্দ
শান্তি! ওম শান্তি!! বিশ্বশান্তি!!!



চৈতন্যের পদাবলী

জীবনের আঁকা বাঁকা পথ পরিক্রমায় দেখি
ক্লেদমাখা কার্বনের নিচে
চাপা পড়ে আছে
প্রশস্ত মনের শৈল্পিক উঠোন
যৌবনের প্রারম্ভে দেখেছিলাম
বর্ষার প্লাবনে পলি মাটির আস্তরের নিচে
গুমরে গুমরে কেঁদেছে
ফসলের হাসি

সময় পেরুতেই বসতহীন শূন্যতায়
খাঁ খাঁ মরুভূমির চৈত্র তাপদাহ
এখন ফসলের মাঠ

কখনই বিবেকের পথে হাঁটেনি
হিং¯্র জীবজন্তু জানোয়ার
কিংবা প্রকৃতির অন্য কোনো প্রানী
হেঁটেছে মানুষ সময়ে অসময়ে
নিজস্ব খেয়ালে

গত অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে
নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলাম
খোলা ছিল বিবেকের ঝাঁপি
সুযোগে বসত গেরেছে কেউটে কালনাগিনী

আমার রক্ত মাংসে বেড়ে উঠেছে
বিশধর সাপ
মননশীলতার সবকটি দরজায়
ছড়িয়েছে বিষবাষ্প
বিষাক্ত ছোঁবলে আক্রান্ত
হৃদয়ের তন্ত্রী
চৈতন্যের পদাবলি

সেই কবে থেকে
আতঙ্ক দাপিয়ে বেড়ায়
আকাশ জমিন বিশ্ব ব্রহ্মা-
গভীর ঘুমেও নিষ্কৃতি নেই
যতই ভুলে যেতে চাই ততই মনে পড়ে
ভয়াল স্বপ্নের নির্মমতায়
বোবা কান্না এখন নিত্য সঙ্গী
কম্পমান ঘুমের তল্লাট

ক্রুশবিদ্ধ সময়ের ঘূর্ণায়মান চাকা
সজোরে ঘুরিয়ে
সময়ের দাবী মেটাতে পারে
নৈতিক মনোবল সম্পূর্ণ সারিবদ্ধ বিবেক
মুষ্ঠিবদ্ধ লাখো মানুষের হাত।