শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

জাফর পাঠান



জাফর পাঠান

সত্যাদর্শ

এমন এক যুগের বাহনে- করেছি আরোহণ
মসৃণ পথ রেখে- অপথে যার নিত্য বিচরণ।
বলি যদি চালক ভাই- এপথেনা ওপথে যান
চালক ছুটে দ্বিগুণে, যায় যাক আরোহীর জান।

এমন এক যুগের সমাজে- করছি বসবাস
ডানে-বামে অনৈতিকতার ফণাধর ফিসফাস।
নীতিকথা বলতে গেলে- অট্টহাসির উপহাস
বায়বীয় অভিযোগে জুটে- কারাবাস উপবাস।

এমন এক যুগের সৌরবলয়ে- ঘুরছে ধরা
শুধু অমানিশার নিশুতি, দিনের আলোর ক্ষরা।
সৌরজগতের সৌর থাকলেও হারিয়েছে আলো
যত আছে গ্রহ-উপগ্রহ- হয়েছে নিরেট কালো।

কালোয় কালোয়- জগতে সমৃদ্ধ- অন্ধ মতাদর্শ
দলবেধে করছে বন্দি প্রমিত সত্যের সত্যাদর্শ।




আজব চরাচর

যাকে করার কথা ডর ভয়- করছিনা তাকে
বিলিয়ে দিচ্ছি নিজকে ভোগবাদের মোহবাঁকে,
আছি আজ থাকবোনা কাল- ভাবিনা আজকাল
করি শুধু স্বার্থান্বেষণ- বিকাল আর সকাল।

এত-ই বিভোর বেহুশ, অপরে নাই খবর
নিজে কুকর্মের নটবর; বিপরীতে কবর,
চোখে পড়েনা দুখী আর অসহায়দের ব্যথা
কি করুণ যন্ত্রণা আর গুমট কান্নারা হেথা।

অন্ধ-বধির-মুক ক্ষমতা, শুধু হাঁকি হুঙ্কার
দেখি স্তুতি, দেখিনা নিরীহের ঘৃণিত ধিক্কার,
লুটের নেশায় লুটেরা তোলে- তৃপ্ত বুঁদবুঁদ
নিজে খাই চাল, অভুক্তদের জন্য পঁচা খুদ।

অপরকে মেরে গড়ি নিজের অট্টালিকা ঘর
আপনকে করি পর, আজব এক চরাচর।




ইচ্ছাধীন

সৌর বলয়ে ঘুরছে মেদিনী- একটু নয় বাঁকা
ঘুরছে এই মানব চক্র- গাণিতিক সুত্রে আঁকা,
প্রতিটি প্রাণ বুনে- সৃষ্টির নতুন নকশি কাঁথা
ভিন্নভিন্ন তাঁতি হলেও একই তাঁতে মাল্যগাঁথা।

প্রাণের প্রাণেশ্বর- অগনন রূপে করে ধারণ
দেহে দেহে তিনিই করে দেন সময় নির্ধারণ,
খেলারাম খেলছেন দেহে দেহে প্রাণ বিতরণ
আর নশ্বর শরীর নিয়ে- আমরা ভুলি মরণ।

মনকে করেছে স্বাধীন- দেহধারীর ইচ্ছাধীন
নিজস্ব সুরের সুরলহরী তুলে- বাজাচ্ছি বিন,
প্রাণের অধিপতি- নিবেই প্রাণধারীর হিসাব
নিষিদ্ধ পথে হেঁটেহেঁটে যতই এড়াই কিতাব।

স্রষ্টার সৃষ্টি জগতে- সৃষ্টির আছে মহা রহস্য
ভাবুকমনা ভাবুকেরা- বুঝেন তার উদ্দেশ্য।




উম্মুখ

হৃদপিন্ড এফোঁড়-ওফোঁড় ছেঁদিয়া ত্রিশূল হানে
কত দুর্বহ দুর্গতি মননে- মন-ই তাহা জানে,
অক্সিজেন বিহীন পবন- সূর্যবিহীন গগন
দমবন্ধ অন্ধ কুঠরে- অযাচিৎ ত্রস্ত মগন।

রক্তাক্ত সমাজে- আহত মুমূর্ষু বিলাপেরা কাঁদে
দেখে ফোঁসায় জড়গ্রহ- বক্ষবিদীর্ণ আর্তনাদে,
লেলিহান অগ্নিশিখা পৌঁছায়- সপ্তাকাশ শিখর
শোষিতের অগ্নি, বিস্তৃত যন্ত্রণার- দন্ত নখর।

সত্যাসত্যের দেহ ভাসে নদে- সীসার খন্ড নিয়া
তটিনী কোলে বীর সেনানী ফুলেল বিছানা হিয়া,
গহীন বনে জীবাস্ম হয় ভস্ম- নিত্য সন্তর্পণে
তরু-লতা-পাখি সাক্ষী, মনুষ্যত্বহীনতা অর্পণে।

কত আশার নক্ষত্র ঝরে- নিরাশার বিভীষণে
নিশ্চুপ বিদ্রোহের মনে ভয়- বিশেষ বিশেষণে,
খুঁজে পথ-হাতায় মুক্তি- বিধি বিধানের নয়নে
অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে- ইচ্ছা রাখে চয়নে।

মুখিয়ে থাকে মুখরেরা- গাইবে মানবিক গান
দলান্ধের বন্ধ কপাট ভেঙ্গে- করবে খান খান।




শান্তির কেতন

মানুষরূপে জন্মেও- নিজকে বলতে পারিনা মানুষ
যদি কর্মে আর চিন্তায় উড়াই- কুটবুদ্ধির ফানুস।

ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে কর্মে যদি নাইবা দেই স্থান
পশুতে পশুতে হয় বসবাস- মানুষ করে প্রস্থান।

মানবের নেই অপকর্ম, বলাটা সত্যের অপলাপ
কাঁটাযুক্ত ঢালেতে বাস করে শুভ্র সুবাসিত গোলাপ।

মানুষ-ই যদি হই, বিবেক হবে আমার মতাদর্শ
দলদাস হয়ে বেঁচবোনা নিজ বিবেক বুদ্ধি আদর্শ।

পাপীকে পুরস্কৃত করে- যদিবা বলি আমি পয়মন্ত
নিঃসন্দেহে তবে আমি এক কপট দুর্বৃত্ত জলজ্যান্ত।

বিশ্বের সব মানুষের জন্য- সমভাবে কাঁদলে মন
তবেই পাবো খুঁজে- শান্তির রাজসিক সিংহাসন।