শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

মিঠু নাথ কর্মকার




মিঠু নাথ কর্মকার

যন্ত্রণা

কৃষ্ণচূড়ার নীচে সবুজ ঘাসের বাগিচা, এখনও তোমার প্রথম স্পর্শের নীরব সাক্ষী;
তোমার ভালোবাসার জলছবি আঁকা,
আমার অন্তরের ক্যানভাসে;
হৃদস্পন্দনে তোমার শূন্যতার অস্ফুট প্রতিধ্বনি;
আধেককালীন হৃদয়ের  চুপকথাগুলি রূপকথা লেখে নক্সীকাঁথায়;
অব্যক্ত যন্ত্রণার চোরাস্রোতে নিরন্তর দগ্ধ
আমি আর আমার জীবন্ত  কঙ্কাল;
গভীর রাতের  নিশশ্ছিদ্র আঁধারে ,
সীমাহীন নির্লজ্জতায় স্বপ্নিল নিঃসঙ্গ আলিঙ্গনের বিলাসী মোহ ভাঙে,
নিষ্ঠুর বাস্তবের করাঘাতে ||




জীবাশ্ম

অভিমানী মেঘভাঙা বৃষ্টির অনিয়ন্ত্রিত প্লাবনে
ভেসে গেছে অনন্ত চুপকথা,
হেরিটেজ হওয়া দুঃখগুলো পলেস্তার খসা
বারান্দায় বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে,
ভাঙা কার্নিশ জুড়ে হতাশাগ্রস্ত আগাছাদের ভিড়,
অবিশ্বাসের ফাটল বেয়ে ওঠা বটগাছে পরাশ্রয়ী কিছু সুখস্মৃতি,
প্রেমহীন ভালবাসার হিংস্র আঘাতে প্রতিবন্ধী আশা কোমায় আচ্ছন্ন,
নির্বাক আবিল দৃষ্টিপথে ধর্ষিতা স্বপ্নের মৌন মিছিল,
হৃদয়ের শোকস্তব্ধ পলিস্তরে জীবাশ্ম হয় ভালোলাগার নিগুঢ় অনুভূতি ||




হাহাকার

স্নেহময়ী মমতায় বুকে আগলে রাখা যুবতী মেয়ে
অপহৃত হয় নিঠুর জঠর জ্বালায়,
আদুড় পায়ে লেগে থাকে বিষণ্ণ ধুলোর রুক্ষ শোক,
নাড়ী কাটা যন্ত্রণার নীরব আর্তনাদে হিমেল
বাতাসে ঝরে নিঃসঙ্গ অশ্রুকণা,
আলোর বন্যায় ভেসে যাওয়া অস্তিত্বহীন গুটিকয় আকাশপ্রদীপের উঁকিঝুঁকি,
কুয়াশার কম্বলে নিভে যাওয়া পলাশের আগুন,
অবসন্ন দুপুরে বিরহী ঘুঘুর ডাক খুঁজে ফেরে পর্ণমোচী সুখ,
বেদনার ক্ষত জুড়ে গর্ভবতী হওয়ার নিরন্তর বাসনায়
ঋতুমতী হওয়ার অনন্ত অপেক্ষা ||




অলীক স্বপ্ন

গহীন রাতের সীমাহীন নিস্তব্ধতায় নিভৃতচারী তুমি,
আমার কোজাগরী সমুদ্রে অবাধ সন্তরণ করো সীমাহীন উল্লাসে,
নিপুণ দক্ষতায় স্বপ্নিল চোখে আনমনে আঁকো রামধনু আলপনা,
নিবিড় আবেশে মুছে দাও লোনা জলের অস্পষ্ট দাগ,
আমার ঊষর মরুতে কর্ষণ করো সুখসম্ভোগের উর্বর ফসল,
অবচেতনের একান্ত সংগোপনে তুমি একবিন্দু মুক্তকণা,
বাস্তবের সম্বিতে ঘুরে ফেরে তারাখসার যন্ত্রণা, নিস্ফল হাহাকার,
বেদনার জলসায় বিবর্ণ বসন্তে বুক ভরা দীর্ঘশ্বাসে
অনুরণিত হয় শূন্যতার নিঃসঙ্গ প্রতিধ্বনি ||




অবিশ্বাস

দীর্ঘদিনের অবহেলা উপেক্ষার পরও কী নির্মমতায় অবিশ্বাসের শেষ পেরেক পুঁতলে আমার কফিনে !
চৈত্রের তীব্র তাপপ্রবাহের রক্তচক্ষুর আড়ালে,
লাশকাটা ঘরের হিমশীতলতায় চির সুখনিদ্রায় শায়িত আমি,
নিষ্ঠুর রক্তলোলুপ ছুরির তীক্ষ্ণ আঘাত  ক্ষত বিক্ষত করে আমার নিথর দেহ,
চরম ঘৃণায় ছুঁড়ে ফেলবে বেওয়ারিশ লাশের স্তূপে,
পচাগলা দেহের গণসত্কারে পোড়া মাংসের তীব্র কটূ গন্ধে
পরাভূত হবে তোমায় বেষ্টন করে রাখা প্রেয়সীর দামী সুগন্ধি |
ঠাণ্ডাঘরের দেহ সৌষ্ঠবের উষ্ণ অনুভূতির আলিঙ্গনে আবদ্ধ তুমি নিদারুণ ব্যস্ততায় |
আমি তখন অতৃপ্ত ভালবাসার দহনে চিতার কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়ায় বিলীন হব মহাশূন্যে ||