বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

কুমারেশ তেওয়ারী



কুমারেশ তেওয়ারী

উদযাপন
যে সকালবেলায় উঠে মতলব আঁটছে চুরির
আর পরে নিচ্ছে মুখোশ
তাকে শোনানো হোক কলমিশাকের গান

**
মাধবী পাখির কথা ভাবতে ভাবতে
শুতে যাচ্ছে যে ঢেউহীন বিছানায়
তার হাতে তুলে দাও মিঁয়াকি মল্লার
বৃষ্টিলিপিরা কোনো বাছবিচার জানেনা

**
ঘেমো হাতে উলঙ্গ বাটি ধরে যে
ফিরি করছে ক্ষিদে সভ্যতার মানচিত্র  লজ্জা
তার কাছে আর কেনো গল্প করা অন্ধগলির
তার হাতে বরঞ্চ তুলে দাও তোলপাড়


**
 লিফ্ট বেয়ে উঠে যাচ্ছে উনত্রিশতলায়
বিধুমুখি চাঁদ
তাকে সরসেক্ষেতের কথা শোনাও
কিভাবে আলপথে পড়ে থাকে অতৃপ্ত বাঁশি
তাকে বলো উল্লাস ডানা মুড়ে একবার বসুক গিয়ে
বাঁশির পাশে তুলে নিক নিঝুম খেয়াঘাট


**
যে রয়েছে আলুথালু তাকে সোহাগ পড়াও
বলো সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে যে মনোরমা পাখি
সে তো পাঁচ বছর আগে কার সেই-
সমুদ্র জাহাজের গল্প শুনতে শুনতে
যে কত রাত ঘুমিয়ে পড়েছে স্পর্শের কাছে


**
প্রেম হোক ক্ষিদে অথবা মুখোশ
ডেকে বলো লিনেনের পর্দা দিয়ে ঢাকা আছে
যে জানালা ভেতরেরবাতাস সরলবর্গীয়
যার কোনো রুদ্ধদ্বার বৈঠক নেই
খোলামেলা গন সম্মেলন






মল্লার
মেঘ কাছে আসতেই রঙ বদলে ফেলছে ক্যামেলিয়ান
পাথর জন্ম থেকে উপবাস ও তৃষ্ণা বেরিয়ে গিয়ে
খোঁজ করছে চাতক পাখির বাসা
**
এরপর সোনামুগ ব্রথেল শহর থেকে
ফিরে আসে যদি নিয়ে আলো ও অন্ধকার তবে নেতিধোপানির ঘাটে লক্ষীন্দর
হঠাৎ উঠে বসে দাবী রাখতেই পারে
তাকে যেন নিয়ে না যাওয়া হয় ইন্দ্রের সভায়
আর বেহুলাও নুপুর খুলে রেখে
শিখতে বসতে পারে ইন্দ্রজাল
**
অতএব ধুলোমাখা জামা আর কাজ নেই
ডিটারজেন্টে ধুয়ে বুকপকেট ও কালি
বরঞ্চ এখন পিঁড়ি পাতা হোক দিগন্তে ও উঠোনে
**
বৃষ্টির কোনো পরজন্ম নেই আর তার
পূর্ব ইতিহাস জানে সপ্তঋষি ও চর্যা কবিরা






রূপভেদ
পোড়ানোর গল্প শোনাচ্ছে শুকনো পাতারা
ধিকিধিকি থেকে দাউদাউ
**
যখন কীর্তন আসরে মাথুর নুনে
কসমিক বিরহ খুঁজছে ক্ষয়াটে ফরাস
তখন কেউ কোণায় দলাপাকানো বসে ভাবছে
পরিযায়ী সোহাগের কথা
**
তার মন্দিরের গোপন কুঠুরিতে
জ্বলে যাচ্ছে যে আগুন তার রূপ অথবা অরূপ
ধিকিধিকি জোনাকি আশ্বাস শুধু রেখে যাচ্ছে বাণী
যে কোনো পাহাড়ের বিপরীত ঢালে জল
রেখে যাবেই বৃষ্টিমেঘ
**
যখন নদী উথালপাথাল উগরে দিচ্ছে
যাবতীয় সারমর্ম পাড়স্থ গাছেরা
শিকেই তুলে রেখে সালোকসংশ্লেষ
পুড়ে যাচ্ছে যে আগুনে, শিরা ও উপশিরা
ঘিরে আঁকা হচ্ছে যে আলপনা, প্রজনন
দড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে বলে দাঁতে কাটছে দড়ি
এ এক অন্য পিরিতি দাউদাউ আগুনের
বস্ত্রহরণ!
**
কিছু পোড়া এমনকি কালপুরুষেরও বিষ্ময়
কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখে ভিজে যাচ্ছে জলে
অথচ চুইয়েে চুইয়ে আসছে পোড়া গন্ধ
আর ঘন্টাধ্বনি বুঝিয়ে দিচ্ছে
পুড়ে যাবার ঘরে এখন উলুধ্বনী এনেছে
মোহন বাঁশি
**
এখন যেমন একটি আয়না পুড়ে যাচ্ছে
সূর্যসংরাগে তার শরীর বেয়ে
গড়িয়ে নামছে শুধু রসায়ন






রিংটোন
কিছুই রাখতে চাইছি না আর মায়া
আমাকে আশ্লেষের আরক থেকে
মুক্তি দাও
আর আমি বেড়ালের থাবা থেকে
তুলে নিতে চাই গোলাপ জলের ঘ্রাণ
**
বাগদেবী এসে তুলে নিয়ে যাক
আমার স্বরনালি ও সাতটি পাখি
তবু আমারই আঁকা ঘোড়া ধরবেই দীপক
আর তার পোড়া নাভিমুলে মেঘ
মাখিয়ে দিয়ে যাবে যে পাখি তার কোনো
পূর্ব ইতিহাস নেই
**
তবু সারা গায়ে ক্লোরোফিল মেখে
যখন হারমোনিয়াম পেতে বসে
তার লতানো আঙুল থেকে চুঁইয়ে নামে যে প্রেম
তার কোনো পেরিমিটার নেই
**
মহেঞ্জদারোর কোনো দ্রাবিড় রমণী
তার শরীরের থেকে গয়না খুলে পরিয়ে দিত তারই নিজস্ব পুরুষকে
রাখালদাস মাথার ভেতরে হ্যালোজেন জ্বালিয়েও খুঁজে পেয়েছিলেন
রসায়ন?
**
এখানেই হেরে গিয়ে সমোচ্চশীলতা
লিখতে বসে কাব্যপোন্যাস
যেখানে দুহাতে পর্দা সরিয়ে দিয়ে জানলা
দেখে ঘুমিয়ে পড়া আপেলের স্তনে
কোনো দাঁতের কামড় নেই






সম্পর্ক
একটি সম্পর্ক শুরু হয়েছিল
তখন খুব আলো খুব নদী, ঢেউ
খুব উড়ান খুব ভাসান সর্দি হলে
বায়োপিক গাঁথতে গাঁথতে সময় সম্পর্ক
নিয়ে আসত কসমিক ভাঙ্গা উদ্বেগ
*
একটি কাঁচ শব্দ করে মেঝেই পড়তেই
অনেক টুকরো
ছড়িয়ে পড়া অনেক প্রতিফলন কুয়াশা
ঝেপে নেমে আসতেই ঝাপসা হয়ে যেতে যেতে
ধর্ম শেষ প্রতিফলনের
*
জটিল কিছু চেষ্টা জড়ো করার
খাপে খাপ মিলছিল না কিছুতেই
রক্তারক্তি আঙুল
*
আশ্রমমাঠ থেকে ভেসে আসা শঙ্খধ্বনী
আনাচেকানাচে জমে থাকা
স্তব্ধতাকেই ভারী করছিল শুধু
ছায়া খুব উঁচু হয়ে দেখছিল সিলিং
থেকে ঝরে পড়ছিল ফ্যাংগাস
*
একটি সম্পর্ক ঝুলে আছে উড়োমেঘ

জানলার ফ্রীলে থমকে গতিজাঢ্য