শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

দেবাশিস ঘোষ

 


দেবাশিস ঘোষ


মড়কের কালে


কখনো রোদের দিন নেমে আসে বিষণ্ণ মড়কে

কখনো স্নায়ুর নিচে থম মেরে স্তব্ধ পৃথিবী

একান্ত জরায়ু খোঁজে

ভেবেছো আলোর নিচে এত প্যাঁচ ঘোচ!

তবু তো আলোর কথা মাইকে মাইকে বলা হয়

আলো আর উর্দিতে আমাদের শীত লেখা চলে

এসব আলোর থেকে দূরে

আমাদের অন্ধকার জ্বলে থাকে

তুলসী তলার মতো নির্ভরতা মেখে

 

 

 

সে রাতে


সে রাতে প্রবল ঝড়ে উড়ে গেল চাঁদ

উড়ে গেল ঘরদোর, আমাদের সোনাঝরা বাঁধানো গাছতলা

চাঁদ-ভোজীরা ঘুরে বেড়ালো চকচকে,

আমার দিনের গায়ে ঢেলে দিল ছায়া


সে রাতে অন্ধকার ছুটে গেল ঝড়ে

সে রাতে নদীটি তার ভয় পরে নিল

অসম্ভব হাঁসফাঁস, ভাঙাচোরা নৌকোয় টিমটিমে আলো

সমস্ত গাছের ভূত, ও তাঁদের কঙ্কাল আমাকে ঘিরেছে

এখন মাছের কথা, সুস্বাদু কথোপকথন

ক্রান্তিবলয়ে গিয়ে রুয়ে দিয়ে আসি

জলমেঘ, কাঁটাঝোপ, বিদ্যূৎ লিখিত শূন্য

এই সব গুঁজে রাখো পালকের মতো

দু'পশলা ঝড় বৃষ্টি সাথে করে এনো

আকাশ বিছিয়ে রেখো তেতে ওঠা ছাদে

 

 

শব্দ


একটি শব্দ চুঁয়ে ভালোবাসা ঝরে পড়ে মোমের আলোয়।

বাবার কালো ফ্রেমের চশমা, মুখে চিকচিকে ঘাম,

মায়ের আঁচলে লেগে মশলার দাগ,

বাবাইয়ের চারপাশে দৃষ্টিভরা আলো,

'এসো বাবু আরেকটু খেয়ে নিয়ে ইস্কুলে যাও।'


'ভালোবাসি' বলেছিল গোলাপী ছাতাটি,

পাশাপাশি ব্লু জিনস, দু'পাশের ভাঙা সরণীও

কিভাবে আরও বেশী সবুজ হয়েছে।

ভাঙা রাস্তাটিও পাঁজরের সবটুকু ক্ষত ভুলে গিয়ে

বলেছিল 'ভালোবাসি, গোলাপী ছাতা, হেঁটে যাও আমার পাঁজরে।'


একটি শব্দ হয়ে ওঠে ধারালো ছেদক দাঁত

'বৃদ্ধাবাসে চলে যান আমাদের কেন জ্বালাতন?'

'কোথাকার আত্মীয়, যতসব ফালতু ঝামেলা!'

শব্দে শব্দে ফুলকি ছিটে ফোস্কা বেড়ে যায়।


শব্দরা বাতাসে ওড়ে, আলো নিয়ে অন্ধকার নিয়ে

হৃদয়ে শব্দের জন্ম ভালোবাসা, হিংসা মেখে নেয়।

কখনো শব্দের ভুলে চেনা ফুলে বারুদ জন্মায়।