শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 


বিদ্যুৎলেখা ঘোষ


যখন ভীষণ মেঘ করেছে


মেঘ করেছে মেঘ করেছে ভীষণ কালো

সূর্যটা নেই সূর্য কোথায় জ্বালবে আলো


এই ছেলেটা নমাজ পড়ে পুব উঠোনে

ওই মেয়েটাও ভজন শোনে একলা কোনে


যোসেফ রোজই কান পেতে নেয় সে সুরগুলো

গির্জাঘরে ক্যারোল তাতে সুর মেলালো


মীরা বাই আর মীর্জা গালিব সাগরকুলে

তথাগতর ধম্ম বলছে দুলে দুলে


ওয়াহেগুরু মহাবীরের যুগল দোহা

জন্ম দিলো সূর্য নতুন অগ্নি স্বাহা


ভারত ভূমি এমনি করে এক চাদরে

সবুজ মাঠে ফসল ফলায় শ্রম আদরে


কিষাণ ভাই তো বীজের মধ্যে ভাগ করে না

ফসলচারার যত্ন মায়ায় ভেদ রাখে না


রহন সহন হোক না ভিন্ন হোক না তফাৎ

এক ভাবে যে ডাকছি মা'কে দিচ্ছি জাকাত


ভাইয়ে ভাইয়ে লড়িয়ে কেন ক্রুর হাসো

নানান বোলে বলছি যখন ভালোবাসো ।।

 

 

স্বজনেষু           


পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে যাচ্ছে শকুনের দৃষ্টিতে

বহুদূরে এই ভারত উপমহাদেশের কুলে দাঁড়িয়ে

নিরুপায় আমি দেখেছি

ঝলসে গেছে বৃষ্টিঅরন্যের প্রাণ


মার্জারিম পায়ে চলছে নির্লজ্জ সাম্রাজ্য বিস্তার

মুখোশ লুকিয়ে রাখে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক

দুর্বলতার সুযোগ কতটা সহজ করে নিতে হবে

বিশ্বের শোষণের তাবৎ ইতিহাস তাকে

মন্ত্রনা দেয় তার মসৃণ কৌশল শিখে নিতে


সতত দেয়ালায় স্মিত হেসে ওঠা আমার শিশুর মুখ

আজ গ্রাস করে বিষ জরোজরো আহার

বুকের মানিক মা বলে কেঁদে ওঠার আগেই

কারো কারো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়


চুরি হয়ে যায় স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলেমেয়ের

দুপুরের পাওনা ভাত

সংসদের ভোজনশালায় তখন ইলিশ উৎসব

হা পেটে বাছারা আমার

জগদ্দল দিনরাত্রির নামতা পড়ে


কৈশোর যৌবন আজ আর অভিযাত্রী নয়

রহস্যময় পৃথিবীর হাতছানি ভিন্ন রোমাঞ্চে

টেনে নিয়ে যায় সর্বনাশের পথে

ওরা ওদের মতো বুঁদ হয়ে থাকতে চায়

মাঝপথে খেলা মুছে চলে যায় কেউ কেউ


চাষের খেতের পাশে , কলকারখানায়, পথের ধারে

যখনই জমে ওঠে ঋণভারি শ্রমিক মজুরের লাশ

জিকিরে , মহাভাবে মগজে ধর্মঘোর লাগে

না চাইতে নেশা মেলে, রোজগারের কাজ মেলে না


এইসব যুদ্ধের মাঝখানে তোমার কথা মনে পড়ে

ধু ধু সবুজের অবুঝ ঘাস ফড়িং

আমার পড়শিনি ডেকে নিয়ে যায় তখন ওর বাড়ি

নরম গালিচায় গা এলিয়ে দিই


খণ্ড মেঘের গায়ে লিখে পাঠাই এইসব দিনলিপি

কেবল লিখতে পারিনি ছিন্ন বকুলের মুহূর্ত কথা

সে বড় কষ্টের, সে বড় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে

আহত রক্তাক্ত হওয়ার কাহিনী

যত লেলিহান আমি পুষে রেখেছি আত্মায়

অসুন্দরকে পুড়িয়ে ছাই করবো বলে


উত্তর মেরু থেকে বিষুব পেরিয়ে দক্ষিণ মেরু

তোমার আমার ব্যথা জর্জর যুদ্ধ ভূমি

বরফ, বালুকারাশি, ধুলো কাদা, ঢেউ হীন

মৃত নদী সাগরের পাঁজরে, মৃত ঝিনুকে,

নীরব শঙ্খনাদে তোমারই জয়ধ্বনি শুনে

আশা দীপ জ্বলে ওঠে বার বার


হে বিনিদ্র সৈনিক , হে স্বজন আমার

এক জীবনে হয়তো সুন্দরের প্রতিষ্ঠা

করে যেতে পারি না আমরা

তাই সূর্য চাঁদের সাক্ষ্যে নিয়ত ফিরে আসবো

অপেক্ষার প্রহর আগেও যেমন গুনেছে বীজধান

পিঁপড়েরা নির্দেশ করেছে লক্ষ্যমাত্রা


তেমনই বরণমালা গাঁথবে অবিকৃত ফুলের মানুষ

একদিন প্রতিদিন আমাদের গরম ভাতের থালা

অবিচ্ছিন্ন পুরনো সুখের গন্ধবহ হবে

ঘাস ফড়িঙের ভিতরে থাকবে বিজয়ীর সানন্দ নাচ

নতুন ইতিহাসের পাতায় এর পুঙ্খানুপুঙ্খ সচিত্র বর্ণনা থাকবে ।।

 

 

 

আছো কেউ


একজন এসো

যোগ্যতম একজন

মহান কারিগর সাথে নিয়ে

একে একে এসো

প্রবল তুফানে ভাঙচুর

অন্ত্রজ্বলা খিদে মহামারী

বিষে ভরা আগস্টে বলছি

বছরটা শেষ করে দাও

দ্রুত এবং চরম দ্রুততার সঙ্গে

যদি আরও কিছুদিন বাঁচে মানুষ

শ্যামনীল মেঘালো পৃথিবী

বেঁচে যাক যে কোনো উপায়ে ।।