বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

মলয় রায়চৌধুরী


মলয় রায়চৌধুরী

দেহপট

নোংরা ঘোলাটে পদ্মা আর গঙ্গা যেভাবে বঙ্গোপসাগরকে নীল করে তুলেছে
ঠিক সে-ভাবেই আগুনের দু’চার কলি নিঃশ্বাসে গড়া গান গেয়ে আমি
রুদ্রাক্ষহীন আঙুলে হাওয়ার শুটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে জব্বর এক গপ্পো বানাই
অনেকটা যুবতী শোকাতুরাকে জড়িয়ে মৃতকে ভুলে দেহতাপের মাতনে
আমারই দুটো ছায়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যেন কানে-কানে বলছি
হ্যাঁ গা মেয়ে, ব্যকরণ যদি জানো, বলো দিকিন এই দেহ ব্যাপারটা কী ?








অংশুমালী, তোর ওই
মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার

কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝা করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনি কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিক-আপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত  বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে-পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা অংশুমালী, পড় পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে–
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা অংশুমালী, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস







মাথা কেটে পাঠাচ্ছি,
যত্ন করে রেখো

মাথা কেটে পাঠাচ্ছি, যত্ন করে রেখো
মুখ দেখে ভালোবেসে বলেছিলে, "চলুন পালাই"
ভিতু বলে সাহস যোগাতে পারিনি সেই দিন, তাই
নিজের মাথা কেটে পাঠালুম, আজকে ভ্যালেনটাইনের দিন
ভালো করে গিফ্টপ্যাক করা আছে, "ভালোবাসি" লেখা কার্ডসহ
সব পাবে যা-যা চেয়েছিলে, ঘাম-লালা-অশ্রুজল, ফাটাফুটো ঠোঁট
তুমি ঝড় তুলেছিলে, বিদ্যুৎ খেলিয়েছিলে, জাহাঝ ডুবিয়েছিলে
তার সব চিহ্ণ পাবে কাটা মাথাটায়, চুলে শ্যাম্পু করে পাঠিয়েছি
উলঙ্গ দেখার আতঙ্কে ভুগতে হবে না
গৌড়ীয় লবণাক্ত লিঙ্গ দেখবার কোনো স্কোপ আর নেই
চোখ খোলা আছে, তোমাকে দেখার জন্য সবসময়, আইড্রপ দিও
গিফ্টপ্যাক আলতো করে খুলো, মুখ হাঁ-করাই আছে
আমার পছন্দের ননভেজ, সন্ধ্যায় সিঙ্গল মল্ট, খাওয়াতে ভুলো না
মাথাকে কোলেতে রেখে কথা বোলো, গিটার বাজিয়ে গান গেও
'মাস অন্তর ফেশিয়াল করিয়ে দিও, চন্দনের পাউডার মাখিও
ভোর বেলা উঠে আর ঘুমোতে যাবার আগে চুমু খেও ঠোঁটে
রাত হলে দু'চোখের পাতা বন্ধ করে দিও, জানো তো আলোতে ঘুমোতে পারি না
কানে কানে বোলো আজও উন্মাদের মতো ভালোবাসো
মাথা কেটে পাঠালুম, প্রাপ্তি জানিও, মোবাইল নং কার্ডে লেখা আছে







কবিতা সাহেব

তাকিয়ে পাথর করে দেবার সৌন্দর্যবোধ যে আমার ছিল না
তা কাজরি মাছের জাতীয় সঙ্গীতের ছোটো-ছোটো ঢেউ দিয়ে বানানো
অচেনা টগবগে মেয়েদের দেখে ভাল্লাগে এমন উড়ুউড়ু দুপুরে
আকাশের গনধধ শুঁকতে-শুঁকতে লতিয়ে ওঠা গাছের ডগায় টের পেলুম
যে আমায় শহুরে চাকরানির দোআঁসলা ইশারায় আবডালে বলেছিল
ডাকটিকিট ছাড়া জীবনে আর কিছু চাটা হয়নি নাকি গো দাদাবাবু
পাঁকে হাঁটতে পায়ের আবার কষ্ট কিসের ? হ্যাপা তো সব মাথার ।


সে যাকগে ! দিনে দুবার অস্ত-যাওয়া সূর্যের একটা চিত্রকল্প যদি পেতুম
নিদেনপক্ষে খোসপাঁচড়ার অলংকরণে একজন স্যানিটারি বাঙালির উপমা
তাহলে অজ্ঞান করার ওষুধের সুগন্ধি ফিসফিসানি শুনতে শুনতে
নিশাচর শুক্রকীটরা যেভাবে নুডল-নরম ঠোঁট আর সুপ-গরম শ্বাসের
তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে ঝড়ের কায়দায় ফুরিয়ে যাবার তাড়ায় ভোগে
জিভের ওপরে হামাগুড়ি দেবার ইচ্ছে গোপন রাখতো না এদান্তি কেউ
পথচিহ্ণ দেখে মালুম হতো কে-কে কোনখানে দাঁড়িয়ে আর কোথায় যাচ্ছে


আয়নাও তো দেখি পারা ঝরিয়ে নতুন-বউয়ের স্মৃতি ভুলে যায়
তাই বলে যাদের রাশিফল সব কাগজেই নিত্যিদিন হাসিখুশি থাকে
তারা কি পোয়াতি-কাঁঠালের গাছপাকা গন্ধে হিংসুটে বোলতাদের ডাকবে
নাকি স্ফূলিঙ্গের জুতো পরা দূরপাল্লার রেলগাড়ির বাংকে শুয়ে ভাববে
পরতের পর পরত বয়সের মুখোশ জমে মুখটাই সাহেব হয়ে গেল গো







মাংস

লোকগুলো সাধারণ, ভিড়ের ভেতরে ঢুকে কেন
এমন খুংখার হিংস্র হয়ে পেটাতে লাগলো বুড়োটাকে
বেদম প্রহার, মুখ থেকে আতঙ্ক গোঙানি রক্তের ভলক
খালি গায়ে লাঠি দিয়ে লালচে নীলাভ দাগ দেগে
যতোক্ষণ না বুড়োটা পথের ওপরে পড়ে নিথর নীরব
আটপৌরে পথ-চলতি লোকেরাও ভিড়ে মিশে গিয়ে
ভয়ংকর কেন ? আত্মচেতনা বিসর্জন দিয়ে
অন্যেরা যা করছে তাতে জুটে গেল ? কীভাবে
দ্বৈতসত্তায় একটা বিষাক্ত আত্মা ঘাপটি মেরে থাকে !

এইভাবে মগজে নোংরা বিষ গড়ে ওঠবার কী কারণ
হতে পারে ? লোকগুলো সবাই তো সংসারি, ছেলে-মেয়ে
বউ বাবা রয়েছে বাড়িতে, চাকরি-বাকরি আছে
কিংবা চাষ-বাস জমি-জিরে, মাঠে কাটা ধান পড়ে আছে
একটু আগেই তো স্বাভাবিক পথচারী ছিল, এখন
হিংসা সম্পর্কে বোধহীন । মাংসের প্রতিশোধ নিতে
মোষের মাংসকেও গরুর মাংস নাম দিয়ে বুড়োটার
জীবন্ত মাংস খুবলে বিষাক্ত অপর সত্তাকে
আনন্দে আত্মহারা করে ছেড়ে দিলে হোমো স্যাপিয়েন