বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

স্বপন গায়েন


স্বপন গায়েন

হরপ্পা সভ্যতা

অসুস্থ জীবন আলোর খোঁজে দিশেহারা
সর্বনাশা রোগ বাসা বেঁধেছে সারা শরীরের
চলমান জাহাজের স্রোতের গতিতে চলতে পারে না
অবলা জন্তুর মত বোবা কান্নায় ছটফট করে।


গভীর আঁধার বাসা বাঁধছে শরীরের অলিতে গলিতে
যেন যৌবন ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে হরপ্পা সভ্যতা
বুকের পাঁজরে আকাশ ভেঙে নামছে মেঘ ভর্তি জল
ভাসিয়ে নিয়েই সবার সব আয়োজন যেন পূর্ণ।


তুমুল বৃষ্টি আর বজ্রপাতে ডুবিয়ে দিচ্ছে শরীর
সমস্ত রোগের কক্ষপথ ঘুরে ঘুরে ঢুকছে জল
অসুস্থ মানুষও বাঁচবার জন্যে দৌড়চ্ছে -
জলের তোড়ে রোগ জীবাণু ভেসে গিয়ে মিশছে সাগরে।


রোগ মুক্ত মানুষ মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে
জল নামছে ঘরবাড়ি জাগছে প্রাকৃতিক নিয়মে
শুধু হারিয়ে গেছে বেঁচে থাকবার শেষ অবলম্বন
ক্ষয়ে যাওয়া মানুষ ডুবুরীর মত বেঁছে থাকে আজীবন।





ছাড়পত্র

আমি নষ্ট বাতাসের হাত ধরে হেঁটেছি অনেকটা সময়
মনের কোণে লুকিয়ে আছে গোপন এক হাহাকার –
বিষণ্ণ রোদে গলে যাচ্ছে স্বপ্নের শৌখিন ইমারত।


আকাশটাকে হাতের মুঠোয় ধরতে চেয়েছি বারবার
কৃত্রিম উপগ্রহগুলো ছুটছে দুরন্ত গতিতে –
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই নিমেষে উধাও।


মনুষ্যত্বের ছাড়পত্র নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি সারা পৃথিবী
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয়
পিঁপড়ের ডানার মধ্যে লুকিয়ে আছে আগুণের অঙ্গীকার।


সওদাগরের মত জলে ভাসিয়েছি জীবনের মূল্যবান সময়
তবু কেউ কখনও দেয়নি বেঁচে থাকবার ছাড়পত্র -
পুরনো মন্দিরের দেবতার মত সবাই করেছে অবহেলা।


পাখির ডানায় আজ খেলা করে রোদ্দুরের ঝলক
গোধূলির শেষ আলোতে মিশে আছে স্বপ্নভঙ্গের খেলা
শরতের কাশফুলগুলো ছাড়পত্র পেয়েছে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে।




কালো রোদ্দুর

পুড়ছে পৃথিবী পুড়ছে বরফ
গলে যায় হিমালয়
আঁধারে ঢেকেছে পোড়া রোদ্দুরে
হবে কী মহাপ্রলয়!


শ্রাবণের ধারা পথ হারিয়ে
খুঁজছে ভোরের আলো
তপ্ত দহনে জ্বলছে পৃথিবী
প্রভাতের রঙও কালো!


সবুজ মাঠে কালো রোদ্দুর
অনাবৃষ্টির ভয়াল ছায়া
গভীর নিশীথেও নেই ঘুম 
সবই প্রকৃতির মায়া!


আকাশ জুড়ে মেঘ ভরেছে
বৃষ্টির নেই দেখা
জীবন যেন হাঁসফাঁস করে
কোথায় আলোর রেখা!


ঘরে ঘরে বাড়ছে রোগ
সর্দি কাশি জ্বর
বৃষ্টি তুমি দাওনা দেখা
মরুভূমি হয়েছে থর!


শ্রাবণ মেঘে বৃষ্টি কথা
বলছে হাওয়া অফিস
ঠাণ্ডা প্রকৃতি দেখবো আবার
বাতাস করছে ফিসফিস!

   



স্বপ্নের ইমারত

ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত কামনা বাসনা
আগন্তুক সময় হাতছানি দিয়ে ডাকে –
ভালোবাসার ইমারতে শান্তির জন্যে সাদা পতাকা ওড়াও
মহাকাব্যের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ভালোবাসার সৌরভ!


শরৎ মেঘ গোঁয়ারতুমি করতে জানে না -
এক পশলা বৃষ্টি দিয়েই আবার হাসছে নীল আকাশ
সাদা ধবধবে মেঘগুলো সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে
ভালোবাসার ভূখণ্ড উন্মুক্ত হয়ে খুলে দেয় বাহুডোর।


শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে অচেনা দিগন্ত থেকে
ভোরের আলোয় শব্দহীন নীরবতা ভেঙে যায় পাখির কলতানে
সারা রাত্তির মহাসমুদ্রে স্নান করে দুটো শরীর ...
ভালোবাসার আলোকমালায় মহিত হয় সুরভিত উদ্যান।


চোখের অন্তরালে বেঁচে থাকে আজন্মকালের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন
ভালোবাসার মধ্যে খুঁজে ফেরে ওষ্ঠের নীরব অভিমান
দুটো নদীর মোহনার সঙ্গমে জন্ম হয় ভালোবাসার সাঁকো
বুকের পাঁজরে আজীবন বন্দী স্বপ্নের ইমারত।





জলদস্যু

জলদস্যুদের মত ছুটে বেড়াই সারা রাত্তির
সাগরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পর্যন্ত ...
রাত্তির ফালাফালা করে দেখি অচেনার খোঁজে।


রাতের পর রাত জাগতে জাগতে হয়ে গেছি পাপিষ্ঠ
বজরা, ময়ূরপঙ্খী থেকে কেড়ে নিই ধনীদের সম্পদ
কিন্তু কজন খোঁজ রাখে জলদস্যুর কান্নার ইতিকথা!


জীবনটা কখনই রঙমশালে পরিপূর্ণ নয়
দুঃখ, যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা সহ্য করতে করতে হয়ে গেছি অমানুষ
ভেতরের নরম হৃদয়টা মরে গেছে নীরবে ...


জলদস্যুর মত রাত্তিরটাও দেখতে পাই দিনের আলোর মত
ধনীদের সম্পদ কেড়ে নিতে একটুও বিবেকে বাধে না
যাদের জন্যে অতিসাধারণ মানুষ হয়েযায় হিংস্র জলদস্যু।


অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারেও দুচোখ জ্বলে ওঠে বারংবার
লুঠের মাল বিলিয়ে দিই গরীব জনতার মাঝে –
আবার হারিয়ে যাই রাতের অন্ধকারে নিজের মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে।


সাগরের জলে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যায় শৈশব
সুখ শান্তি বলে কিছুই নেই এই অসহায় জীবনে
জলদস্যুর চোখে জল মানায় না, ওসব অতীত অন্ধকার!