বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

সুপ্রীতি বর্মন


সুপ্রীতি বর্মন

অগতির গতি

আকাশের মতন বিশাল হৃদসাগরে কাঁচা সোনা তুমি মাটির মানুষ,
তোমাতে সহজেই পেয়ে যাই থৈ লাগেনা অগাধ উপলব্ধির সারমেয়,
তোমার মতন নিষ্পাপ শিশুর অলেখ্য প্রেমের ছোঁয়ায়,
আমার রৌদ্রদগ্ধ সৌর যৌবন কাঁপায় ক্ষুধা।
হাতের আঙুলের ফাঁকে আমরন শোক আরো চাই, আরো চাই।
বিনিদ্র রজনী তোমার, দুঃস্বপ্নের কালি তোমার চোখের কোলে,
বাস্তব কে করে দেয় চিতার উর্ধ্বমুখী ধোঁয়ায় আবছা স্মৃতির শোক।
স্নেহ মমতা সব আজকে জল ঢালা, কোথায় গেছে কে জানে, গেছে কোন চুলায়।
আজকে আপনজনের চোখে করালগ্রাস,
হাত নিশপিস কখন তোমার উপার্জন হাত মুচড়ে পকেট থেকে নেবে কেড়ে।
তোমার প্রতি এতটুকু নেই যত্ন, শুধু ভোগ করে চলে অনায়াসে তোমার যান্ত্রিকতার শ্রম।
ভাঙ্গিয়ে ভাঙ্গিয়ে খেতে থেকে তোমার,
উদগ্রীব পাঁজর গোনা হাড় কঙ্কাল,
যেন কোন অগ্রহায়নের শীতে কুঁকড়ানো অস্থিচর্মসার।
আর্থিক উন্নয়নের লালসায় টুপটুপ কচুর জলে টলমল তাদের আঁখি।
তুমি যেন কোন আটা চাল ভাঙ্গার কল, তুমি মানুষ নও, তোমার নেই কোন যন্ত্রনা।
দিনের শুরু তোমার যাত্রায় উঁকি মারে পিক করে হাসে সূর্য,
পিঠ থপথপিয়ে বলে জানিস যখন তখন কেন জেনেশুনে দিস প্রতিনিয়ত নিজেকে,
তাদের কর্তব্যের যুপকাষ্ঠে বলি।
আমি তো একটা অজুহাত সকলের পদলেহনে চলার সিঁড়ি উন্নতির মুখে।
আর নিজের বেলায় পেটে গামছা বাঁধা আর স্বপ্ন ভাঙ্গার কাঁচ ফোটে চোখে।
সানগ্লাসের রঙীন ধোঁয়ায় ফ্যাশানে পেতে থাকি ধার করা যৌবন,
না হলে আমার তো আজীবন ঋণ তোমাকে কাছে পেতে থেকে।
উন্নতির লালসায় ঘোরাতে থাকি চাকা,
কিন্তু জরা স্থবিরতা আটকে আমায় উল্টো লটকায়।
কবে পাবো আমি বলতে পারো তোমায়,
না কোনদিন পাবেনা সার্থকতা অগতির গতি।






সর্বশিক্ষা অভিযান

গাছের তলায় পাতা শতরঞ্চি কালোবোর্ডে চক খড়ির ঘর্ষন।
প্রস্ফুটিত হাজারো উন্মিল শতরূপা জ্ঞানপদ্ম।
পাঠশালায় চরাতে লেগেছে গরু কিংবা ভেড়ার দল।
ওর মধ্যেই জনহিত মানবচেতনার স্পর্শে যদি কেউ,
মানুষের মতন মানুষ হয়।
অন্ধ দৌরাত্ম্যের কালো অজ্ঞানতার পাপ যাতে না,
আষ্টেপৃষ্টে ধরে, তাইতো স্কুল পড়ুয়াদের হাতে হাত,
হতেই হবে স্বর্নাক্ষর একদিন সর্বশিক্ষা অভিযান।
কেরোসিনের জ্বালায় দপদপ লেলিহান হ্যারিকেনের কাঁচ,
তোমাতেই কষ্টে ফুটিয়ে তুলতে চায় আগামী দিনের রবীন্দ্রনাথ।
বইয়ের কালো কালো অক্ষরের হামাগুড়ি, যেন কোন নতুন শস্যদলের চাষ।
আহামরি আমার বাংলা, আশা করি শিক্ষাই যেন হতে পারে তোমার মুদ্রাদোষ।







সন্তানের শাস্তি

মায়ের ধিক্কারে সন্তানকে কঠোর শাস্তির মাশুল,
ঝুলন্ত সোপান স্তনবৃন্তে অমোঘ ব্যাপ্তিতে মেজেঘষে লঙ্কাবাটা,
স্বেচ্ছায় নির্বাসন মাতৃদুগ্ধ, তাই লাঞ্ছিত স্তন।
শিশুর পাথর শূন্যতার আবদার হাত পা ছুঁড়ে চিলফাটা চীৎকার।
পিতার ফিরতি গৃহমুখে কাজ শেষে, একি করেছো প্রিয়া,
ঐটুকু দুধের শিশু, ওর কিবা চাওয়ার আছে তোমার কাছে।
ধোও বলছি পূর্নস্নানে করো মাতৃত্বের মুক্তি,
এই দৃশ্য সত্যিই ভাগ্য সুখকর,
মায়ের আঁচলে লুকিয়ে সদ্যোজাতের মুখে,
ফেনিল দুগ্ধ মাতৃঋন,
আমি সত্যিই খুঁজে মরি প্রিয়া তোমার নারীত্বের আসল রূপ,
কখনো প্রিয়া কখনো আমার সন্তানের মা।
কথা দাও লক্ষীটি আর কোনদিন করবে না এমন।
যতটা চাইবে আমার শৈশবের ফিরে দেখা,
তুমি তাকে ভরাবে মাতৃ ছলাকলায়।







কাজের মেয়ে

হাড় পিটপিটানি কোমর দুলানি,
শাড়ির লটরবটর, মুখে চন্দ্রিমার একমুখ হাসি।
খ্যামটার নাচন বাসনে সার্ফের ঝাঁ চকচক,
বৌদি দেখবে নাকি মুখ, নির্ঘাৎ বলছি দেখে নিও,
তোমার বাসন আমার হাতের ছোঁয়ায় দর্পন।
যমজ দুখানি মেয়ে সহচরী পেছু পেছু ঘোরাঘুরি।
স্বামীর ভ্যাবাচাকা মুর্তি নির্বিকার সংসারে তার দায়,
তবুও তাকে সত্যিই ঠেকানো দায়, মনের রাজা, মর্জির মালিক।
যখন ইচ্ছে ঘোরচক্রে মাতলামো ঘরের জিনিস চুরি করে বিক্রী।
উফ সংসারের যাঁতাকল একা আমার ঘাড়ে,
দিনেরাতে নাভিশ্বাসে ধুঁকছে পোড়া কাঁপা নিঃশ্বাসে,
তবুও জেনেশুনে জ্ঞানপাপী, তোমাকে তো আর ফেলতে পারিনা স্বামী,
লোকে যে যাই বলুক।






পলাশরাঙা ভোর

পলাশরাঙা ভোরের নতুন সূর্য,  অথৈ জলের হাহাকার নেই নেই হতাশা।
ঐকান্তিক অবসাদ যখন দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে দেয় প্রকৃত সত্য।
তখন দুর্নীতি সত্যের কন্ঠ অবরুদ্ধ করে,
তাকে আর্থিক নিষ্পেষনের যাঁতাকলে,
পচিয়ে গলিয়ে মারে, রেখে যায় গর্ভপাতের উচ্ছিষ্ট মিথ্যা ভ্রূন।
অন্ধ লালসায় লাল ঝড়াতে থেকে ক্লান্ত কুকুরের দল,
হৈ হৈ করে দাপিয়ে ছুটে আসে পরের হাতের ভোগ্য উচ্ছিষ্ট পাতে,
ভোগ বসাতে।
প্রেতাত্মার দল হুটোপুটি অতৃপ্ত তাদের কামনা,
ছিনিয়ে নিতে চায় তাদের ফেলে যাওয়া গদি।
যদিও পেয়ে গেছে অনেক আগেই রুহুর স্বাধীনতা।
দূরে ভোঁ ভোঁ বাইকের আওয়াজ,
উল্লাসে তরুনী যৌবনের হৃদয়ের ফোঁটা গোলাপের রক্তে পেয়েছে,
প্রেমের গালিচা।
নৈসর্গিক শোভায় উল্লাসী ধোঁয়ার স্বাধীনতা।
তবুও মৃত্যুর করালগ্রাস সদ্য ফোঁটা কুঁড়ি,
করে দিল মূলোৎপাটন।
এ বিধি তোমার কেমন নীতি।
কেন ফুটতে দিতে চাওনা কোনমতে পলাশরাঙা ভোরের স্বাধীনতা,
শুধু চোখের আড়ালে রেখে যাও পরাধীনতা।
তাই চাঁদও ধান্দা বুঝে তেজস্ক্রিয়তায় জ্বালায় কিশোরীকে,
প্রেমের রোগে।
কঠিন অব্যর্থ সেই অসুখ।
এক খাঁচায় আবদ্ধ মখচোরা পাখি ডানায় ঝটপট,
মাথার উপর এক হাত খোলা আকাশ তোমার মুক্তি,
পক্ষ সঞ্চালনে ঝাঁপিয়ে বুকে আটকে যেতে আগ্রহী।