বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মন্ডল


ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মন্ডল

জলছবি

আজ ভোরবেলাটা একটু অন্যরকম লাগছিলো।
দেখলাম কালোর গায়ে লেগেছে নীল রং,
বুঝলাম এ তোমার শয্যাত্যাগের আভাস।
ভারি সুন্দর লাগছিলো সে রূপ ;
তাছাড়া কানের কাছে ফুঁ দিয়ে
তোমার চুল ওড়ানো খেলার মতো ছিল
মৃদু মন্দ হাওয়া।

সামনের ইটরাস্তার পাশেই দুলছে
গাছভরা জুঁইফুল।
টের পেলাম তোমার উপস্থিতি।

শুধু বুঝতে পারিনা
তোমার অদ্ভুত ঘোর লাগা দৃষ্টি,
যখন আমি স্বরলিপি লিখি
আর খাতার পাতা ভর্তি করে
ফোঁড় তুলে রূপ দিই

বিকেলবেলায় পড়া মেঘের চোখের
পদ্মপাতার জলছবি।







কবি সুবোধ সরকারের প্রতি

বাংলা রঙ্গমঞ্চের মুকুটহীন সম্রাট
প্রবল প্রতিপক্ষরাও মানেন,
মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারেন
দেশি বিদেশি সব শ্রোতাকে।

তবু প্রায়ান্ধকারে অস্থিরভাবে পায়চারি করছে
কিছু বেদনা।
স্বপ্ন নিজস্ব ভূমিতে
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন বলে
ক্রমশঃ দেউলিয়া হয়েছেন।

সন্ধ্যার অন্ধকারে নিরাভরণ ঘরটিতে
ধুলো পড়া একরাশ বই,
শেক্সপিয়র-রবীন্দ্রনাথ আর
নির্জন ঘরে ধূপের গন্ধের মতো ভেসে বেড়ায়
কঙ্কাবতীর স্মৃতি।

শুধু শিল্পের কাছে সৎ থাকবেন বলে
রাজকীয় পদচারনা।

নতুনভাবে সাজানো মঞ্চে
জ্বলে উঠেছে আলো,
ভেসে আসছে দর্শকদের উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা, করতালি।

তিনি আসছেন ছাতিম ফুলের গন্ধ মেখে
আলমগীরের মতো
জন্মদিনের এই হৈমন্তী সন্ধ্যায়।







অশান্ত উপত্যকার মাঝেও......

মেঘের আঁচলে উড়িয়ে নিলাজ
ভালোবাসায়
লক্ষ মানিক কঠিন চোখেও
আগুন জ্বালায়
বুটের তলা শত্রুপক্ষের রক্তে ভেজা
অনন্ত রাত পূর্ণিমা চাঁদ
হয়নি দেখা!

প্যারেড- বুলেট- মানচিত্রে
মনটি বাঁধা
অনেক শীতেও পাইনি আগুন
স্বপ্ন দেখার।

দড়ির ব্রিজে পা রেখে সাম্য হাঁটা
নদী-শরীর স্রোত দেখিয়েও
অনেক ভাঁটা।

বোম বাক্সে মাথা দিয়ে
তাকেই খুঁজি,
অনেকদিনের অদেখাতে মনোবিকলন
পূর্ণিমা চাঁদ ঝলসানো এক প্রগাঢ় চুম্বন।







বাবামশাই

জেটি থেকে ডাঙা বহুদূর
গিয়েছিলাম ঢাকার বিক্রমপুর
চোখ বুজলে বাবামশাই-এর চোখ দিয়ে
দেখতে পাই ঢেউগুলো ফেণা তুলে
ভাঙো ভাঙো হয় আবেগের জলে।

মজিদ না গৌরাঙ্গ ঝাপসা স্টিমারঘাটে
ঘোর লাগে শ্রাবণ মেঘের বৃষ্টিভেজা মাঠে।

ঢেউ খেলানো পাটের জমি, কীর্তিনাশা নদী,
নদীরবুকে বিশাল চরে
বিস্তৃত শিলালিপি,
সাদা বকেরপাল উড়ে যায়
রোদ্দুর গায়ে মেখে
ফুটবল আর নৌকো-বাইচ চলতো একে একে।

চোখ ভরা জলে, মিষ্টি হেসে বলতো বাবামশাই!
মা-মরা ছেলে আবার হলাম মাতৃহারাই।

চাঁদপুরের স্টিমারে উঠে নামতে পারিনি।
ভাসতে ভাসতে নতুন দেশে, তবু মা ডাকিনি।

বাবামশাই বলে যেতেন, পাকা দালানকোঠা
কেমন আছে তাও জানিনা, আর হয়নি দেখা।






মুগ্ধ

হাতছানি দেয় আলোয় ভেজা চাঁদ
    একাকী মানুষ
       মুগ্ধ হও।

       সেবার
হেমন্ত এসেছিল
       তাড়াতাড়ি।

       সন্ধ্যের
     হিম স্পর্শে
ঘাসবনে কোজাগরী।

       ভরে নাও
         আঁধার
সবুজ অন্ধকারে পথ হারাও।

       একাকী মানুষ
                মুগ্ধ
                 হও
       কোটরে ভরে নাও
             ক্লান্ত বিভাবরী।