বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

আশরাফুল মোসাদ্দেক



আশরাফুল মোসাদ্দেক

লেইস-ফিতা-জরি-রিবন

রক্তের উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে হঠাৎ এসেছে শীতকাল
হড়কাবানের মতো তেমনি ভেসে গেছে হেমন্ত
হলুদ পাতায় গন্ধে ভরে ওঠেছে মর্মরে নাট্যশালা
খোসা ছাড়াতে গিয়ে ছিটকে গেছে বাদামের পুষ্টবীচি
ভ্রষ্ট পথে নষ্ট রথে চলে গেছে উপকথার নেকাব

অনন্তের বার্তা নিয়ে প্রতিদিন পথ চলে ছায়াঘড়ি
পিরামিডের সানুদেশে খিলখিল করে ওঠে ফারাওয়ের মমি
বিপুল ঘূর্ণির রক্তাক্ত চোখকেন্দ্রে দুটো গাল ফুলিয়ে
বসে থাকে মনএপথে দৌড়ে যাবে ম্যারাথন সময়
সিল্কের সেলুলয়েডে বাটিক প্রিন্টের মতো ফুটেছে আকাঙ্ক্ষা

গোলাকার মাঠের পরিধি ধরে যে কোনো দিকে পা ফেললেই
বলা হবে ইমিগ্রেশনের পর চিরায়ত অভিগমণ
এখানে ফেরা বলে কিছু নেই কাঁঠালিচাঁপা
শাহাজাদা গেলে কুকুরের মতো যায় পিছুপিছু উজিরজাদাও
লণ্ডভণ্ড ফুটপাথে একা হেঁটে যায় লেইস-ফিতা-জরি-রিবন




প্রিয়মুখগুলো সুতোকাটা ঘুড়ি

দাদরা দুপুর শুয়েছিলো থির
হাঁসের বালিশে দিঘির শীতলে বেশ চুপিচাপি
কয়েকটি রেখা জলের ভিতর
এঁকেছিলো মুখ খুব চারুময় অসীম অতীতে

সময়ের গাছে ফুল-পাতা ঝরে
স্মৃতিগুলো নড়ে বিজন বাতাসে ভীষণ একাকী
আহা দিনগুলো পাকা করমচা
গোল্লাছুটময় ছুটে চলে যায় মার্বেল সময়

অসীম কাজল বেবিনাজ মালা
রীনা কামরুল শাহেদ দিদার প্রিয়মুখগুলো
সুতোকাটা ঘুড়ি গুগলি-শামুক
সাদা গিমাফুল এপ্লিক ভুল চিনচিনে জীবন




তর্জনী ও মধ্যমার ফাঁক থেকে

কাঁচি দিয়ে সূতলি কাটার মতো ছেঁটে ফেলি পুরোটা অতীত
যাওয়ার সময় পিছন থেকে টেনে ধরবে কক্ষোনো নয়
এসব ভ্রমণ সদলবলে কক্সবাজার নয়শুধুই একার

তর্জনী ও মধ্যমার ফাঁক থেকে পিছলে চলে যাওয়া গ্যাসীয় বেলুন
এডালে ওডালে ঠোক্কর খেয়ে অবশেষে চিরায়ত আকাশে
পাসপোর্টবিহীন এক অভিমানী আই-ফোনে অভিগমন

নবায়নযোগ্য জ্বালানি কখনো অফুরন্ত অসীম নয়
চকচকে লিম্যুজিনের চামড়ায় তুষারের উল্কি হেলান দিলে
ঘুম ভেঙ্গে দেখা যাবে ডুবে গেছে বড়মামা কবি-রবি

হিমালয়ের নাভির সন্নিকটে আকাঙ্ক্ষার লালসবুজ চোখ
অকেজো ফিল্টারগুলো আর ব্লোয়ারে মানছে না পোষ
এই নাও তবে জিহ্বার নিচে সীলমোহরাংকিত শেষ আফসোস



জ্বলুক জ্বলুক

লেজে তারাবাতি বেঁধে দিয়েছি ছেড়েজ্বলুক জ্বলুক জ্বলুকইচ্ছেগুলো এবার ইচ্ছেমতো জ্বলুক। ব্লেড দিয়ে হাত কেটে নাম লেখার দিন শেষম্যচের কাঠি পুড়িয়ে হাতে ভালোবাসা অঙ্কন শেষএখন হেমন্ত কুড়াবার কালহলুদ খামের ভুলো না আমায়

শিশিরভর্তি চোখে শ্মশানের নিবুনিবু আলো উল্কি এঁকে যায়উলুধ্বনি এসে জমা হয় বাঁশঝাড়ে। লেইস-ফিতা-জড়ি-রিবনওয়ালা ঐ চলে যায় চিরতরেভৌতিক ছায়ায় কাঁপে এদিকওদিক। স্থলশামুকের জিহ্বার মতো গুঁটিয়ে আসে অতীতের দিন।

স্মৃতিচিহ্নগুলো গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিয়ে আত্মায় বসে থাকি শিমুলতলায়। তুমুল ভরদুপুরকিছু ঘুড়ি গুঁতো খেতে খেতে ছিঁড়ে চলে যায় দিগন্তের নীচে। লাঠির চূড়ায় হাসে অধরা অতীত। আমার কি বাঁশি ছিলোকৌটাভর্তি ছিলো নাকি রঙ্গিন মার্বেল।

একটি বিশাল তোলপাড় এসে ডুবে যায়বিজন স্টেশনে হিম হয়ে যায় কেতলির গরম চা। যেতে না চাইলেও পদপুটে কেঁদে ওঠে স্তব্ধ সিঁড়িআজো কি করিনি প্রস্থান তবে অদৃশ্য আড়ালেছায়া কাঁপে মায়া কাঁপেজিংলাসাপের মস্তকে বিপুল মেদেনী।



যমুনার আশেপাশে

বক্রতা কী যে মধুরকাজুফলের বক্রলেজটাই কাজুবাদাম। বেণির বাঁকাচুল কিংবা বড়শির মতো বাঁকা ঠোঁটের হাসিকখনো হয় না বাসি। যে বক্র মেরুদণ্ড ধারণ করে নুসনুসে দেহ তার পিরিচে আদর ঢেলে চেটেপুটে তৃপ্তি আহরণ। সেই গন্ধ নাকের ডগায় বসে আর বক্ষ-নিতম্বের বাঁকগুলো পরিপাটি পাহাড়ি নদীর মতো সুবিশাল এক পুঁথি। কাব্যে-ছন্দে পাঠ করা গৃহীত স্বাদ সেঁটে থাকে ওষ্ঠ-কপাটের অন্তরালে।

মোহন বক্র বাঁশিতে শীতকালে শ্যাম ফিরে ফিরে আসে কদম্বতলায় যখন রাঁধা কুঞ্জবনে আই-সিক্স সেলুলারে একযোগে একডজন রাখালের সঙ্গে অনলাইন ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট চালায় রজনি প্রভাত অবধি। মৌল আকাঙ্ক্ষার ক্যানভাসে পত্রে-পুষ্পে দুলে ওঠে জটিল যৌগ ফ্যাশনচলে হৃদয়ের ফালি লেনদেন, কুসুমে প্রভেদ থাকুক মিলিয়ন-ট্রিলিয়ন, পতঙ্গের চাহিদা সনাতন এবং অপরিবর্তিত। বোটল গোর্ড মানেই লাউ অথবা কদু।

সরলঅঙ্কের চেয়েও যতোই জটিল হোক এ জীবনের চাওয়া-পাওয়াবারোমাসী কদম ফোটে যমুনার আশেপাশে।