সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

ফিরোজ আহমেদ



ফিরোজ আহমেদ
প্রলাপ

কার সাথে কে ঘুমায়, কার সাথে জেগে থাকে রাত
কার সাথে বিবাদ ভীষণ, কে করে ভালোবেসে বাজিমাৎ
সে খবর লেখা থাকে শব্দের সংকেতে, বোঝে কেউ কেউ
মধুমতিতে উঠে এলে ইলিশ ডিমের বেদনায়, বুকে লাগে ঢেউ।

শব্দের প্রতিধ্বনি ফিরে আসে সামনের বাঁধার প্রতিদানে
শুকনো শীতের রাতে মন ভিজে যায় সুমনের মিঠে গানে
আকাশ কী জানে, কখন ভিজতে চায়-- পৃথিবীর মাটি
মানুষ তবুও আজ, এখানে গেড়েছে-- জীবনের ঘাঁটি--
শুধু বেঁচে থেকে পাহারা
পাহারা দিয়ে যায় মৃত্যুর শীতল পাটি।

তারপর বুড়ো সূর্যের দিন ফিরে আসে বার বার
যেখানে আলো সেখানে তুমি কোথাও নেই
ভালো লাগে না রাজনীতির এই চতুর কারবার
তবু ঘুরে ফিরে সেই ঈশ্বর আর নেতাদের খেই--
হারিয়ে যাওয়া মাতাল প্রলাপ,
কার সাথে আমি জেগে থাকি রাত?

নভেম্বর, ২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

ঘোড়া ও একটি মাঠের গল্প

বাড়ির পাশেই এক কালো ঘোড়ার বসতি
এ গাঁয়ে কখনো ময়ূর আসে না
কবে একদিন এক কবি জন্মেছিলেন
ঘোড়ার সাথে তার কীসের সম্পর্ক ছিলো, জানা নেই।
সবুজ ঘাসের দিন আসে জলছোঁয়া পথের একধারে
তবলা শুনি না এ গাঁয়ে কতদিন!
শাজাহান বয়াতি মারা যাবার পর
দোতারাটা পড়ে আছে কলাপাতার টাট্টিখানার পাশে।
একটি পাথুরে চোখে কেউ দেখে চলে ঝালর-সুন্দর
ঘোড়াটির লাগাম হারিয়ে গ্যাছে অর্বাচীন রাখালের দোষে
মাঠের একপাশে গুলি খেয়ে পড়ে আছে কিছু কালা কৈতর
কবির কবরে আজ ফুল দিতে আসবে লাগামবিহীন ঘোড়া।
নভেম্বর,২০১৬
বাংলাদেশ



ছুটি

ছুটি নিলে ফিরে এসে দেখবো অন্য আকাশ
দেখবো সন্তান চিনছে না পিতাকে
ভালোবাসার চাদরে শুয়ে আছে একটি দ্বিমুখী সাপ
ছুটি নিলে মাঝে মাঝে ফিরে না আসাই ভালো।

শিকড়-বিস্তারি বৃক্ষরা চলমান ঘোড়ার পায়ের শব্দ গোণে
ছুটি নিলে মরে যায় চলমান ভাবনার শব্দ-জীবন
মাঝে মাঝে মানুষ তবুও ছুটিতে যায়
মনে পড়ে পাঠশালা ছুটি হলে আকাশটা খুব রঙিন দেখাতো,
আজকের আকাশটা এতো কালো কেন?

১৪/১১/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।

  

কোথায় যেন আগুন লাগে

নয়জন নারীকে এক রাতে জল দান করেও
মহাপুরুষ হওয়া যায়
কে কাকে ঠকালো সেই ইতিহাস খুদাই থাকে না
পাথরের গায়ে, থাকে শুধু
রাবন একদিন সিঁতা কে তুলে নিয়েছিলো,
অন্যায় যুদ্ধে জিতেছিলো রাম, জানে শুধু
মধুসূদন দত্ত অগ্রসর ভাবনায়।

আমাদের ভাবনারা আজকাল বাতে-ধরা বৃদ্ধ
মাথা থেকে ছিঁড়ে নিয়ে তুলে রাখি ট্রাউজারের ছেঁড়া পকেটে
বর্ধিত মাংসের গা ছুঁয়ে সেগুলি পড়ে যায় পথে বিপথে
সন্ধ্যায় পাথর মেশানো চাল কিনে ঘরে ফিরি
হাঁড়ির চালগুলো ভাত হতে কেন যে এতোটা সময় নেয়!

মধ্যরাতে তবু ঘুম আসে অনাহূত অতিথির মতো
শরীর কেঁদে ওঠে শরীরের ক্ষুধাতুর জ্বরে
শব্দকে বেচে দিয়ে কিনে আনা শীতের পোশাক
গায়ে দিয়ে মনে হয় এতো গরম লাগে কেন!
কোথায় যেন লেগে গ্যাছে শুকনো পাতায় আগুন
কোথায় যেন মগজ-পোড়া গন্ধ! আমি খুঁজে পাই না।

আপনি কী জানেন, কোথায় লেগেছে আগুন?

১১/১১/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।


জীবনের পদাবলি [] ৪৮

মাঝে কিছু সময় গেলো
ব্যাখ্যাহীন জড়-মন কোথাও ছিলো না
ভালোবাসা ছিলো গলির মোড়ের ম্যনহোলের মতো
পাশে বসে ছিলো একটি লোম উঠা কুকুর, এক পা ভাঙা
বর্ষার নদীটা শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ; যেমন শুকিয়ে যায় শেকড় কাটা বৃক্ষরা।
হাঁটিনি কোথাও তেমনও নয়
শিশু ধর্ষিত হলে পুরুষ আর পশু শব্দের মিল দেখে কেঁপেছি
পুড়ে গেলে সূত্রধর বাড়ির স্বদেশের ধারণা, খুঁজেছি--
ধর্ম আর রাজনীতির স্বার্থগন্ধি মিলনের ঠিকানা।
তবু মাঝে মাঝে জীবনের চিলেকোঠায়
আঙুল ছোঁয়ালে হেমন্তের নরম মিঠে-শীত
কার যেন গায়ের গন্ধ পাই বালিশের ত্বকে
ঘেমে যাওয়া স্বপ্নরা এইসব বিবাদ মানে না।
কবিতায় ফিরে এলে খুঁজে পাই বাড়ির ঠিকানা
ফিরে আসার ঘর থাকলেই বাহির সুন্দর।

৭/১১/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।


 
শূন্যের দোকান

দীর্ঘ কবিতার মতো জীবন-বিন্যাসে তাল রাখা দায়
মাঝে মাঝে খসে যায় নন্দনের চারুবৃক্ষের কারু ছাল
অজানা সামুদ্রিক নিম্নচাপে ভেসে গেলে বসতি
পূর্বপুরুষের পাপ উঠে এলে বাম কাধের খাতার বাণ্ডিলে
অস্বীকারের সময় থাকে না, ফাঁসিকাঠ শুধু ডাকে।
আগমনের পর জন্মটাকে তবু লাভজনকই ভেবেছি
দুপাতার ভাজে টুনটুনিদের বাসা দেখে শিখেছি প্রেম
নিজের একটি লাশ নিজেই ফেলে এসে দেখি,
পৃথিবীর মাঠে যে আছে-- সেও আমিই
কাঁদছে যে যুদ্ধশিশু সেও আমি
লোভ নিয়ে ভন্ড সেজে যে বসে আছে, সেও পৃথক কেউ নয়
সাপের মণি ও বিষে আমিই বসে থাকি
আমাকে মানুষ ভেবে ভুল করে চলেছে মানুষ।
আসলে একের বেশি কোনো অংক নেই পৃথিবীতে
সমস্ত সংখ্যা একের সন্তান,
আর একের বসতবাড়ি শূন্যের দোকানে ঝুলে থাকে
আমাকে খুঁজতে এলে শূন্যের দোকানে যেও।
আমি ভালোবাসলে পৃথিবী গর্ভবতী হয় দারুণ উচ্ছাসে
আমাকে তবুও দেখতে হয় ভালোবাসাহীন ভাগাড়দ্বীপ।
এইসব খেলা তবু পারদের উর্ধ্বগতির গোপন কারণ
জল ঢেলে দিলে নিভে যায় নিল আগুনের শিখা
বোকা হয়ে বসে থেকেও মনে হয়--
আবার জন্ম নিলে মানুষই যেন হই; এক অথবা
শূন্যের দোকানে ঝুলে থাকবো আর একটি জীবন।

১০/১০/২০১৬