সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

ইন্দ্রাণী সরকার



ইন্দ্রাণী সরকার

রাতের রাজধানী

রাতের রাজধানী অপূর্ব সাজে সেজেছে |
পথে পথে আলোক তোরণ, নক্ষত্রমালা
স্বচ্ছ জল ফোয়ারায় বর্ণিল রঙের ছটা
বাজছে ভেরী বাজছে নিনাদ; ধর্মচক্ররাজ
এ পথে পুষ্পমাল্য আলোক শোভিত রথে
চলে যাবেন আর দু হাতে বিলিয়ে দেবেন
তাঁর শেষ কড়িটুকু, এ তাঁর এক ব্রতপালন |
দরিদ্র জনসাধারণ বৎরের এই একটি বিশেষ
দিনের অপেক্ষায় থাকে, সেই শুভ মুহুর্তটি |
ঐ তিনি আসেন, মুখে কি অদ্ভুত প্রশান্তি |
দাও দাও, চারিদিক থেকে ওঠে কোলাহল |
তিনি ধীর স্থির অবিচল, পার্শ্ববর্তী বিশ্বস্ত 
রক্ষীরা এক একটি দানসামগ্রী তাঁর হাতে
তুলে দেয় অত্যন্ত সযত্নে, অবনত মস্তকে |
চারিদিক থেকে প্রপাতের ন্যায় শব্দ জাগে
জয় জয় মহারাজের জয়, আজ এই পবিত্র
রজনীতে রাজধানী পরম পরিতৃপ্ত, আশস্ত্ব |
ক্রমে ঐ দেখা যায় দিকচক্রবালে তাঁর দৃপ্ত
পুন্যাবয়ব ক্রমশঃ দীর্ঘকায় হতে হতে দূরে
আকাশ ছুঁয়ে নেয় সপ্তর্ষিমন্ডলের বিন্যাসে |





গাভীজন্ম ও আমি

গাভীজন্মের ইচ্ছে কখনই ছিল না
কিন্তু যখন দেখলাম তোর এতগুলো ভালবাসার লোক
আমার ভাগ্যে শুধুই বীতশোক
তখন নাকের নথটা নাড়িয়ে, চশমার পাওয়ার বাড়িয়ে
তোকে কামড়ে দিই, শিং দিয়ে তোকে গুঁতোও মারি
দোষ তোর কিছুই নেই, লেখার বিষয়ের অভাবে
তোর ঘাড়ে হেগে দিই বেশি নয় মাত্র পাঁচ বছর যাবত
জানি তোর সেচন ব্যবস্থা খুবই উন্নত, তাই ভীত হই না
নিজের প্রেমিকদের শালপাতায় রেখে তোর প্রেমিকদের নিয়ে
ড্যাংগুলি খেলি আর কতশত পত্রিকার শান শহরত
আর আমার দেওয়াল খ্যাতিনামায় ভরে ওঠে |






এক বিন্দু ভালবাসা

ভালবাসা
শুধুই চারটি অক্ষর
ছবিতে মূর্ত হয় চোখের তারা
কাছে থাকলে
এমন কোনো শর্ত হারায় না
শুধু গোলাপের পাপড়ি
খসে খসে পড়ে
ঠোঁটের তিলটি ধার করা ছিল
যদিও ওরা তা মানে না
মেনেও মানে না
ওই কোণায় তাকে
মানায় যে বড়
এক বিন্দু চোখের জল
জমে থাকে চোখের পাশে
বড় বেমানান
কোথায় যে রাখি তারে
কি করে হারাই
ভাবনারা পাখির ডানায়
বেওয়ারিশ ভেসে যায়
এক ফোঁটা জল
এক সমুদ্র মনে হয় |






বৃষ্টি

বৃষ্টি নামে চোখে, ঠোঁটে
পরতে পরতে বক্ষ হতে
বাহুমূলে
নাভিতে গিয়ে জন্ম নেয়
একটা ছোট্ট দিঘী
বড় শান্ত টলমলে জল
আমি দুচোখ ধুয়ে নিই
সমস্ত ক্লেদ মুছে যায়
কি করে বোঝাই
কি করে বলি
সে না এলে ভোরের আলো
ফোটে কি ফোটে না
ফুলেরা লুকিয়ে রাখে মুখ
তার জল জ্যোত্স্না ছুঁয়ে
ভোরের আলোতে মিশে যায় |







বিদেশী ভ্রম

তোমায় ভেবে ভেবে
আমি যখন ক্লান্ত অবসন্ন,
তখন নীল আকাশে এক
নীল পায়রা উড়ে যায়,
ঠোঁটে তার নীল চিঠি |
শেফালীর ঘ্রাণে তোমার
বুকের মায়াবী স্বপ্ন-নদী 
আমি কান পেতে শুনি |
সবুজের ক্লোরোফিল
মমতায় ঢেকে রাখা
চেতনা জীবন খোঁজে |
কোথাও কিছু পোড়ে না
শুধু অলীক কল্পনাজালে
গাঁথা এক বিদেশী ভ্রম |