শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

জাফর পাঠান



জাফর পাঠান

অশ্রুপাত
দুঃখকে নিংড়িয়ে- বের করে নেই যত সুখ
দুখের যদি লজ্জাই থাকতো দেখাতনা মুখ,
ভয় দূরে ঠেলে, দুখের উপর চালাই ছড়ি
হৃত সুখস্রোতের- বিপরীত পথকেই ধরি।

কলুষিত সুখ- স্বপ্ন এড়িয়ে- ভিন্নপথে চলি
আকাশ বাতাস- নিসর্গের সাথেই কথা বলি,
দুঃখ পুড়িয়ে, খাইদ ছাড়া সুখ সন্ধানে ঘুরি
আগ্নেয়গিরির লাভা নয়- সূর্যগোলকে পুড়ি।

মনকে নিয়ে সাথে মাটির দেহটি দেই ছাড়ি
ভাব ডানায় ভর করে দেই- গ্রহান্তরে পাড়ি,
সংঘাত-  প্রতিঘাত- করছে আমায় বিতৃষ্ণ
ধরার সব পানি করেও পান থাকি যে তৃষ্ণ।




কেমন সন্তান তুই
যাদের শরীরের রক্ত দিয়ে
তোর দেহটি হয়েছে গড়া,
যাদের ত্যাগ তিক্ষিায়
রূপে গুণে হয়েছিস বড়
ধরেছিস শক্ত মুষ্টিতে ধরা।

জানিস ওরা কারা ?
ওরা তোর বাবা ও মা।

ওরাই ব্যথায় নীলকন্ঠ হতেন
যখন তুই পেতিস ব্যথা,
ওরাই রাতের পর রাত জেগে
লুকিয়ে রাখতো যত মর্মব্যথা।
জানিস ওরা কারা ?
ওরা তোর বাবা ও মা।

এ কেমন সন্তান তুই !
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে ছেড়ে দিস পথে
ফেলে রাখিস নিঃসঙ্গ কুঠরিতে,
অথবা দিয়ে আসিস দূর বৃদ্ধাশ্রমে
যেখানে ধুকে ধুকে মরে নির্ঘুমে।

মৃত্যুর সময় চেয়ে থাকে ফ্যাল ফ্যালিয়ে
দেখতে চায় সন্তানের মুখ,
অথচ সন্তান মহাব্যস্ত পেতে সুখ।

ওরে অমানুষ কুলাঙ্গার
একটি প্রশ্নের উত্তর দে শুধু আমায়
এ কেমন সন্তান হলি তুই ।




জীবন্তিকা
কন্টকাকীর্ণ জীবন মার্গে-  জীবন যুদ্ধের এই ভিড়ে
ধৈর্যের অর্ণব বেয়ে ভিড়ে কেউ স্বপ্নীল প্রাপ্তীর তীরে
অঢেল পেয়েও কেউবা ঘুমিয়ে থাকে হুতাসের নীড়ে
 জীবন বেদ যেন আমাদের- নিজের পাওয়াকে ঘিরে।

মোহ গন্ডিতে ভাব থাকে আবদ্ধ
চোখ অন্ধ- সদা বিকৃত আনন্দ।

ইচ্ছার ইচ্ছায় অবগাহন করে- নিজের করি শ্রাদ্ধ
জীবনকে জীবনবল্লভ বানিয়ে করে যাই আরাধ্য।

নিজকে আঁকি-নিজকে দিয়ে ফাঁকি
ভাবিনা একাকি- খাচ্ছি শুধু বাকি।

ঘাটেনা কেউ সৃষ্টি তত্ত্বের পঞ্জিকা- সরল জীবন্তিকা
ক্ষণ জীবন জীবিকার - আমরা মঞ্চ নায়ক নায়িকা !
ভাবিনা জীবনাবধি রবোনা আমি- রবেনা নীহারিকা
চলে গেছে দাদা-গেছে বাবা-আমাকেও যেতে হবে একা।

সাথি হবে শুধু- সত্য মিথ্যার বিভাজনী কর্মতালিকা।




দোষ দিবো কার
পেটে নাই সামান্য দুধ, গায়েও নাই জামা
জন্ম থেকেই পরা তার- দারিদ্রের আমামা,
অবলা শিশু করেনি পাপ- দেখেনি চাঁদিমা
বিনা দোষে শাস্তির- আজগুবী আমলনামা।

পাপির পাপে পরম্পরা শাস্তি বলি কেমনে
সেও থাকেন ভুখা, পাপ নাই যার জীবনে,
অপুষ্টিতে মরে শিশু- বিধাতার নাই হাত
ধনীদেরও নেই ধ্বনি, এগিয়ে দিবে ভাত।

দোষ সবার, যারা উদ্বৃত্ত টাকার পাহাড়
মুঠি মুঠি অপচয় দেখে, হাসে অবতার,
সৃষ্টির সৃষ্টিতত্ত্বেই - লুকিয়ে থাকে উত্তর
বলে রব তপস্বীরা, কথা নয় অবান্তর।

মানুষতো মানুষের জন্য, দোষ দিবো কার
সামর্থ থেকে সামর্থ নেই যার, দোষ তার।





বিজ্ঞানের দায়
বিজ্ঞান তুমি-  তোমার মত স্বার্থপর
দিচ্ছো মানুষকে-নিচ্ছো তুমি পরস্পর,
ঝড়-ভূমিকম্পনকে পারোনা থামাতে
নিরীহ নিসর্গকে মারছো নিজ হাতে।

ভোগ সম্ভোগে ভাসিয়েছ মানুষের গা
নিসর্গকে চুষে খেয়ে- করছো দুর্ভাগা,
তুমি বানাচ্ছো মারনাস্ত্র, সহস্র শত
নিসর্গ বিলিয়ে দিচ্ছে-তার আছে যত।

বিজ্ঞান তুমি ধরাকে দিচ্ছো যত ভালো
ধ্বংস ইতিহাস তোমার- ততটা কালো,
পারমানবিক যুদ্ধেধ্বসে যদি ধরা
বিজ্ঞানের হাতেই, পরবে হাতকড়া ।

হে বিজ্ঞান পাবে তুমি সেদিন আস্বাদ
প্রযুক্তি গুটাবে যেদিন- তিক্ত বিষাদ,
যেদিন থেকে দিবে তুমি ক্ষতিকে বাদ

সেদিন-ই বলবো, বিজ্ঞান জিন্দাবাদ।