মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

সুমনা পাল ভট্টাচার্য


সুমনা পাল ভট্টাচার্য

জলে ভেজা খাম

এক

বৃষ্টির পর ঝকঝকে ক্যানভাস।
ওপারের দৃশ্যেরা একে একে ধুলো মুছে দাঁড়ায়..
আজকাল চোখে ঝাপসা লাগে সব,
চশমা মুছে দেখি কাচের গায়ে
আঁকিবুঁকি সময়ের দাগ লেগে আছে।
অনেকদিন মাটির গন্ধ পাই না আর,
এতো যে বৃষ্টি হয় তবু মাটির বুক ভেজে না কি তবে?
যেমন করে স্পর্শ করলে অনুরণিত হয় বুকের সমস্ত তার,
মাদলের উন্মাদনা শিরায় শিরায় তোলপাড় ডেকে আনে,
তেমন করে ছুঁয়ে দেবে কেউ কি এই শ্রাবণে!!...
:
মাটির গায়ে আদুল হয়ে নিবিড় হও প্রকৃতি,
তারপর, কিছুটা অনুভব, কিছুটা স্বপ্ন।।





দুই

জলরঙা শাড়ি পড়া মেয়ে,

আর মেঘের মত গহীন মনের ছেলের দেখা হয়েছে আজ...
বারান্দায় সবুজ কচি পাতার গায়ে জল ছৈ ছৈ নূপুর,
বাতাসের মল্লারী তরঙ্গ ঘরের দেওয়াল ফুঁড়ে
উদভ্রান্তের মত ছেয়ে যাচ্ছে বিছানা-বালিশে।
:
স্নানঘরে আমার শরীর জুড়ে
বড্ড চেনা নি:শ্বাসের দাপট..
ঠোঁটের উঠোন দুরন্ত দাঁতাল ডাকাতেরা
কামড়ে মারছে বারবার...
:
দরজার বাইরে ও কাদের পায়ের শব্দ!!
তবে কি ওরা চলে এলো,
একবুক জলে সাঁতার কেটে,
চুপচুপে ভিজে..
:
আগুন দেবো, আড়াল দেবো,
এক আঁচল ছায়া দেবো...
এসো প্রেম,  বেহিসেবী মাতাল হও..
মনের আঙুলে মনের জট খুলে যাক আজ।








তিন

এমন বৃষ্টির সন্ধ্যেতে 
ঝুপ করে একদলা কান্না মেঝে জুড়ে নদী আঁকে...
তারপর নানা রঙের কাগজের নৌকোগুলো
ওই জলে ভাসিয়ে দিই একে একে
কোনোটা ভাসে, কোনোটা ডোবে,
কোনোটা উল্টেপাল্টে একাকার হয়ে মরে।
আমি দেখি চেয়ে চেয়ে,
বনবন করে বায়োস্কোপের রিল ঘোরে মাথার চাকায়..
কতো দৃশ্য অসমাপ্ত থেকে গেছে,
কতো দৃশ্যে অকারণ এডিটিং,
কোথাও বা অতিনাটকীয় সংলাপ
আবার কোথাও থমথমে মৌনতা।
:
চোখের খাঁচা খুলে সেইসব বন্দী পাখিদের
মুক্ত করি নিপুণ যত্নে...
শুধু  হারিয়ে ফেলা রুমালের ভাঁজে
লুকিয়ে রাখি একফালি ডাকনাম।
ঘুমের অতলে তোমার গলার স্বর,
আর বৃষ্টির শব্দ একাকার হয়ে মিশে যায়...
:
তারপর?
শুধু, এতো এতো জলছবি..........
আমি, তুমি আর আমাদের গোপন ডাকনাম।।