মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়


পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়

যখন তুমি ছিলে

দ্যাখো কেমন মরুভূমির মতো শহর!
জনহীন প্রান্তর জুড়ে
ল্যাম্প পোস্টের আলোয়
অদ্ভুতুড়ে শিনশিনে বাতাস!

ঘরে ঘরে শৃঙ্খল বন্দী মানুষ
রুদ্ধশ্বাস বন্ধনমুক্তির প্রতীক্ষায়!
জুলজুলে আতঙ্কিত চোখ
শেষ বসন্তের চঞ্চল সন্ধ্যায়
চাঁদের সাথে অযাচিত
ভালো না লাগার প্রহর কাটায়।
অথচ চাঁদ মানেই এলোমেলো শিহরণ!

দখিনের টালমাটাল হাওয়ায়
বিপর্যস্ত চুল আর
প্রান্তিক ওড়নায় অসহ্য
জ্যোৎস্না ছুঁয়ে মৈথুনে
নিবিড় হতে চায়
রাতের নীলপানা পৃথিবী!

যেমন করে তুমি থাকলেই
এই প্লাবিত চরাচর
জুড়ে বৃষ্টি আর বিদ্যুতের
মাতন জাগত রক্তে শিরায়!

তুমি নেই বলে আজ
এত হাহাকার
চিন্তার ভাঁজ জুড়ে
আতঙ্কিত ভবিষ্যতের ছবি!

অথচ তুমি থাকলেই কি
জেগে উঠত তোমার আমার সেই আদিম পৃথিবী?

অন্ততঃ তুমি থাকলে
আবার আমি খেলতে যেতাম
এই লকডাউনের পৃথিবী ভুলে
খাতা-কলমের মাঠে
অথবা আড়াইতলার নিরিবিলিতে
যেখানে শব্দের খোঁজে
প্রতিদিন মালা গাঁথা হত আগে যখন তুমি ছিলে!







ক্যানভাস

সুযোগ এসেছে মেলানোর
দুরে সরে যাওয়া যত টান
ক্যানভাসে সুখী পরিবার
তুলিতে আঁকেন ভগবান।

ফিকে হয়ে যাওয়া যত রঙ পৃথিবীর ক্লান্ত অবকাশে
অস্ত্রহীন যুদ্ধ থেমে যাবে
সুযোগের নয়া ক্যানভাসে।

সব ঝড় থেমে যাবে ঠিক
ষড়ঋতু মেলে দেবে সাঁকো
সবুজে সবুজ গাছপাতা
ক্যানভাসে জীবনকে আঁকো।

ক্যানভাস জুড়ে নীলাকাশ
মধুর আগামী হবে আঁকা
এ জীবন ভালবেসে থাকো
কেন ভাবো বন্দী হয়ে থাকা?

এ লড়াই জীবনে- মরণে
মানুষে ও করোনা ভাইরাসে
ক্যানভাসে লিখে রাখি জয়
অলক্ষ্যে ভগবান হাসে।।






এ হল অমৃত

তোমার কাছেই শিখেছিলাম
শরাবের পাত্রে কতটা তরল ঢাললে
সহজে স্বর্গবাসী হওয়া যায়!
তুমিই প্রথম বলেছিলে
"এ হল অমৃত
যা সমুদ্র মন্থন কালে
দেবতারা পান করে অমর হয়েছিল... আমি তো সামান্য মানুষ আর ছাপোষা কেরাণী
বৈ কিছুই না
তার চে এসো বরং অমর হই
জড়িয়ে ধরো সবার অলক্ষ্যে
একটু মাতাল হাওয়া গায়ে লাগুক
দ্যাখো চারিদিকে কেমন বসন্ত নেমেছে
গাছে গাছে রঙবেরঙের ফুল
"
তারপরেই ফিকফিক করে অসভ্যতা করে বলতে _ওরা কেমন প্রেমে মেতেছে
এসো না একটু....
এখানেই আমাদের অন্তিম মুহূর্ত হোক"
অন্দরের নরম মাংসপেশি চটকাতে চটকাতে
ঘেঁটে ঘ করতে রাত্রির নির্মলতা!

ধীরে ধীরে আরো ধীরে মাতাল হতে শিখছি!
প্রতিটি চুমুই একটু একটু করে
শিথিলতা এনে দেয় যুবতীর রাতজাগা শিরদাঁড়ায়
অসহায় বোধ হয় আজকাল
হাত বাড়িয়েও পাই না কোনো কার্নিসের কুল!

তোমার মত উন্মাদ আজও পাইনি
যে কিনা ফুলের গন্ধ চটকাতে চটকাতে স্বর্গের পথ খুঁজতে চেয়েছিলে নিঃশব্দে!

রাত্রির নির্জনতায় অনুকরণ করি সমীকরণের অঙ্ক__
শরাব প্লাস জলের গ্লাস ইকিয়ালটু একটু নেশা রাতভর ঘুম
আর তোমাকেই ছুঁয়ে যাওয়া
স্মৃতির আনাচে কানাচে ।
কে বলে তোমায় ভালবাসতে পারিনি কখনো?





উলঙ্গ ভারতবর্ষ

এইমাত্র পৈশাচিক উল্লাসে ফেটে পড়ছিল অন্ধকার
আর নীরবে লেখা হচ্ছিল একটি কবিতা
যার নাম__ উলঙ্গ ভারতবর্ষ!

ওরা ছিল অমানবিক নৃশংস নিষ্ঠুর পিশাচদল!
একের পর এক কুৎসিত কামনায়
ক্রমাগত গিঁথে ফেলছিল
চিরে ফেলছিল রক্তাক্ত করছিল
মেলে ধরা শুষ্ক নরম লজ্জাদ্বার!

যারা শোনেনি কোনো অনুনয়
শোনেনি কোনো অনুরোধ
ক্রমান্বয়ে ভাইরাল ভিডিওর উন্মাদনার
ইঙ্গিত চলছিল হাতে হাতে ধরা সেলফোনে
সেটাই ছিল একমাত্র কান্না
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসবার উপায়

এখনো নরম নদীর মুখ থেকে
লাভাস্রোত গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে
মিশে যাচ্ছে ঘাসে মাটির গর্ভ অন্ধকারে
যে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
বস্ত্রহীন যুবতীর লাঞ্ছিত ভবিষ্যত
যার সারা শরীরে চাবুকের ক্ষতের মতো স্বপ্ন
আর ঝুরঝুরে পলেস্তরা খসে পড়া নোনা যন্ত্রণার বিষ!

সকাল হবার আগেই আকাশের তারারা
আগলে রেখেছিল তার খোলাপিঠ
আর খোলাচুল ঢেকে রেখেছিল
সাধ্যমত নির্মম লজ্জা !

তারপর ভাইরাল ভিডিও
ভাইরাসের সংক্রমণের মতোই গ্রাস করছিল
চেটেপুটে লুটে খাচ্ছিল ভারতবর্ষের সম্ভ্রম!
আর সাংবাদিক চোখ
রক্তে বসা মাছির নমুনা সংগ্রহ করে
বাড়ি বাড়ি আর অনলাইনে
সাপ্লাই করছিল রসময় খবর।
যার শিরোনাম __ উলঙ্গ ভারতবর্ষ!