বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সিকতা কাজল



সিকতা কাজল

বোধ-৩

রোদের ঢেউ বাতাসে রোমন্থন করে চোখের ওঠানামা।
বালক বৃক্ষ স্মৃতির উঠোন থেকে
কুড়িয়ে আনে কিছু অর্থবোধক শব্দমালা।
প্রার্থনার দরজায় ধন্বন্তরী ভিটার জায়নামাজ।
প্রত্নস্মৃতি বেহুলার কাহিনী...
বৈধব্যের দেবালয়ে সমুদ্র,
নক্ষত্র অবিরত লখিন্দরের প্রাণবীজ আহরণ করে।
সারারাত জেগে থেকে বেহুলা জোসনায় ভিজে দৃষ্টির প্রদীপ দেখো।
লখিন্দরের জীবন সাইরেন বেজে ওঠে বসন্ত দিনে।
চাঁদের শরীর অস্পৃশ্য রমনীর মত পেীরাণিক সংকেত দেয়।
প্রত্নলিপির পাঠ দিনক্ষণহীন মৃত্তিকার ফসল।
জাগ্রত সত্তা থেকে বেড়িয়ে আসে বেহুলার ভেলায় কাটানো কিছু সময়।
এসবই বোধের আঙ্গিনায় লুটোপুটি খায়।




মহাকালের মিছিল

বালিশে আক্ষরিক আকাশ-সবুজ বাতাসে বাংলাদেশের মানচিত্র দীর্ঘায়িত হয়।
চিন্তার চোরাবালিতে উন্নাসিক কোলাহল।
চাঁদের প্রহসন; বৃষ্টির আকাশে আলতা রাঙা চোখ দেখে।
অভিধান ও ব্যাকরণের পথ বেয়ে যারা বসবাস করে প্রগতিশীলতার বাস্তভিটায়-
তারা কোটি দৃশ্যের প্রজাতির নিয়ে বসে থাকে।
মহামায়া খেলার সামগ্রী; রক্তের ভিতর জেগে থাকে নিউটনের সূত্র: ৭১ এর প্রচ্ছদ।
ইতিহাসের বোতাম খুলে দেখো- পৃথিবী আজন্ম মহাশূণ্যের কোলে রক্তাক্ত পরে থাকে।
রাজপথে রৌদ্র- আঁচলে পরিকল্পিত গল্প।
সমগ্র বাংলা আজ অনুবাদ করা কবিতার মত।
রাজসভার রহস্যগুলো পুঁজিবাদি হাওয়ায় শ্রেণি চেতনার ক্যানভাস।
গনতন্ত্র নক্ষত্রের আলোয় বসে বিচ্ছিন্নতা বোধের চাষাবাদ করে।
সভ্যতা লজ্জায় সাতচল্লিশ বায়ান্ন; উনসত্তর; একাত্তরের পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে দেয়।
ভুবন ডাঙার সংবিধানে লেখা থাকবে অসংখ্য ফেলানীর ঘাসফুল শরীরের গল্প।
এলিয়েন ভেবে; নিজেকে কেবল ডিজিটাল ক্যামেরা হিসাবে বিনির্মাণ করি।
যেখানে মহাকাশ; সভ্যতা; মহাকালের মিছিল ধেয়ে আসে নিরন্তর...






বোধ-১০

ছুঁলেইতো বেশ! শরীর নিজেই এক স্পর্শ বিদ্যা।
হুমমম। অথচ- তোমাকে ছুঁতে চাইলেই পৃথিবী গর্জে ওঠে।
উঠুকনঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে-ভিজতে সিক্ত বসনা এক মানবী হয়ে উঠলাম।
দারুণভাবে মিশে থাকলাম তোমার নিঃশ্বাসের জাগ্রত ভিসুভিয়াসে।
তোমার বুকের পাটাতনে;
ঘাসের চাদরে অনুভুতির লাভা উদগীরণ হতে থাকে।
সেই উদগীরণ আমায় ভাসাতে থাকে মহাশূণ্যে...
ঐ দেখো কত মেঘ।
আমার ইচ্ছেয় পাখাগুলো মেলে দিয়ে অদ্ভুদ ভালোলাগায় মোহনীয়তা আনছে।
তোমার চোখের কর্ণিয়ায় ভেসে ওঠে একটি উদোম;
আদিম; শৈল্পিক হৃদয়।
যা অনবরত তোমাকে ডুবিয়ে দেয় মহাসমুদ্রে; সভ্যতার পাদপিঠে।
অবশেষে তুমি আর মহাকাল পরে থাকে নিঃশ^াসের সীমাহীন শুদ্ধতায়।





বোধ-১১

বৃষ্টির রুমাল ছুঁয়ে দিলো বৈশাখের আঁচল।
চুমুর পাহাড় টপকে মেঘের দেয়ালে ছবি আঁকছে স্বপ্নবাজ যুবক।
বৃষ্টির উঠোন কানায়-কানায় ভরে গেছে।
নক্ষত্রের জলে ভেসে যায় প্রেমিক মন।
ঠোঁটের বারান্দায় মৃত্যুর কফিন। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত শকুন।
মেঘের গর্জনে জমা হয় ক্রোধের আগুন।
শোকের চাদর গায়ে জড়িয়ে মন খারাপের অসুখগুলো যুবককে বলেনি
চলো বৃষ্টির জলে পা ডুবিয়ে আদিম খেলায় মেতে উঠি।
যুবক মানব হয়ে ওঠে সহসা।
বৃষ্টিতে ভিজে প্রজাপতি;
চাঁদ অবশেষে বরফ পাহাড় হয়ে বিশুদ্ধ প্রেমের জয়গান করে।
অন্ধকারের স্নিগ্ধজলে আগুনের মানচিত্র হয় প্রেমিক হৃদয়।
আর রাত্রির গল্পগুলো জেগে ওঠে ঘুমের ভিতরে।





বোধ-৪

জন্মের কষ্ট জল জন্মের হাওয়ায় ভর করে
জীবনের মহার্য্য  দান করে ছিলো। জন্মের
রহস্য পুনর্জন্মের দিনক্ষণ ঠিক করে ছিলো।
জন্মের এই কাহিনী থেকে বেড়িয়ে মাকে
আবিষ্কার করলাম। মাটির উদর থেকে, গর্ভমুল
থেকে উন্মুক্ত হওয়া এই আমি জরায় হলাম।
মাকে ঈশ^র করে বকের উৎসমুখ খুলে দিয়ে
নক্ষত্রের চাষ করেছিলাম বোনির ভিতর আকাশে।
আকণ্ঠ পান করেছিলাম, মায়ের দুধ।
মায়ের স্পর্শে জেগে উঠেছি সহস্রবার। দেহের
ভিতর প্রাণবীজ রেখে লক্ষ কোটিবার অদৃশ্য ঈশ্বরের ধ্যাণে মগ্ন থেকেছি।
রুপ দেখেছি সিক্ত বসনা নারীর কাশফুল, জলন্তচুল্লী,
মমতাময়ী মায়ের...