বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

শাহানারা ঝরনা



শাহানারা ঝরনা

পথ কী জানে

পথ কী জানে! পথের রেখা কোথায় কখন শেষ!
পথ তো নিজেই নীরব চলে, একলা নিরুদ্দেশ
নিবিড় নিয়ম মানতে গিয়েই হারিয়ে ফেলি সব
মন- শহরে নিত্য শুনি কিসের কলরব?
এই যে আছি, এই বুঝি নেই, শুধুই নিরীক্ষণ
সম্মোহনের ঘোরে মেতেই চাই তবু বন্ধন
সবুজ পাতায় দিনকে রাখি, বালির ভেতর মন
আয়ুষ্মতীর খবর আনে সখের গ্রামীণফোন
সিন্দুকে নেই সোনার মোহর আকাশ কেনার সাধ
অবহেলায় যায় মহাকাল হয়না প্রতিবাদ
পূর্ণিমা রাত বলবে কী আর, সেইতো ব্যথায় নীল
রঙ মাখানো দেহের ভাঁজেই খুঁজি অন্ত্যমিল
রোদ ঝলোমল আকাশ দেখেই দিন যে বয়ে যায়
পথ কী জানে! পথে বসেই ভাবি আশংকায়!!





চিঠি

প্রিয় সুহৃদ, তোমার স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখি বারবার
তুমি তো নও কোন নদী, ফুল পাখি কিংবা কোন ব্রতচারী সাধক,
কি করে রাখবে ঢেকে শুচিময় সত্যকে!
ইতিমধ্যে মেঘেরাও জেনে গেছে তোমার মন খারাপের গল্প
আগন্তুক ঋতু এসে মনের দেওয়ালি সাজায়,
পৈঠা জুড়ে দোসুতি কার্পেট বোনে লীলাময়ী স্মৃতি বালিকা
তুমি বনচারি হয়ে বধূৎসবে যাও, মাধ্যাহ্নিক সময়ে বসে
ভালবাসার জ্যামিতিক রেখা আঁকো, আবার বুঝেও যেন বোঝনা কিছুই
তুমি হৃদয়ের ওমে ঢেকে মন পদাবলি,
ছুঁয়ে দাও পথিক বধূর অনুভুতির দেউল
অথচ কখনো পুড়তে দেখোনা আঙুরবালার স্বপ্নের কুঁড়েঘর!!
কী লাভ বলো ভাবনাকে মনবন্দী করে, গৃহচারী হয়ে!
দেখবে, নিরাপত্তার বৈধ দাবি নিয়ে একদিন বিবেক ও বোধেরা করবে
আসহযোগ আন্দোলন
সবিনয় আকুতি জানাবে মায়াবি বনপাখি
আর কতদিন তুমি ঐশ্বর্যের ঝুলন বেঁধে একাকি দুলবে
কিংবা মায়া সভ্যতার ইতিহাস লিখে জীবনকে সমৃদ্ধ
করার বৃথা চেষ্টায় মেতে থাকবে?
এবার না হয় পাল্টে ফেলো বিধিবদ্ধ সকল নীতিমালা!
নিসর্গে ভেজা মন নিয়ে চারুশীল হৃদয়ের বন্দনা করো
কেউ একজন এসে বলবে,
এসো -- উটপাখি ও সুধীন দত্তের মতো আমরাও কিছু বিনিময় করি,
''তুমি নিয়ে চলো আমাকে লোকোত্তরে
তোমাকে বন্ধু আমি লোকায়তে বাঁধি!!''





কেউ কেউ ভুলে যায়

বয়সী সূর্য আঁকে বৃক্ষদের জীবনচিত্র
নায়রির বিরহ চিনে ছুটে যায় নদী
ফলবতী সময় পথ চিনে চলে যায় আগামির দেশে
ক্ষরণের আর্তি নিয়ে বসে থাকা বালিহাঁস কিংবা
সন্ধ্যার কাকও কখনো সমন্বয় করে এলোমেলো কিছু স্মৃতি
যখন অভিমানী মুদ্রায় নাচে সকালের দোয়েল,
বিভ্রান্তির মিথস্ক্রিয়ায় আয়ুজীবী হয় মনস্তত্বের ঘরবাড়ি
ত্রিতাল আবহে এগোয় চলমান প্রযুক্তি
ফ্যাসিবাদ নীতি নিয়ে কেউ বসে থাকেনা!
সবাই সবকিছু মনে রাখেনা, কেউ কেউ মনে রাখে
সবাই ভোলেনা, কেউ কেউ ভুলে যায়
মানবতা পোড়ানো সেইসব দিনের গল্প!!





নন্দিত সবুজের ভেতর

কিছুটা সম্পর্ক নিয়ে বড় বেশি ভাবলেই
 মাঝপথে ঝরে পড়ে বিপর্যয়ের পাতা
শিশিরকণা মুছে দেয় ঘাসেদের ধুলোমাটির শরীর
লোকালয়ে বসে শুনি বেলা অবেলার গান
শিল্পিত জীবন ভেঙে যাওয়া যায় কতদূর!
বেতসলতানো মনঘর,
আকন্দগন্ধ ভরা কৈশোর প্রীতির বাতাস,
আমাকে নিয়ে যায়
ফুলশিশুদের স্বর্গীয় কোলাহলে আমিও শিশু হই
শিখে নিই প্রকৃতির
কোমল পাঠ নিমগ্নতায় মিশে যাই শাশ্বত সবুজে
দীর্ঘ শূন্যতার ভেতর মখমলি রোদের আবেশ
বনমালি নিশ্চুপ ঘুমোয়
ঘাসের বিছানায়
বনদেবীর ট্রাফিক আইন সহজে নেয়না মেনে কোন
প্রকৃতিপ্রেমী ডাকপিয়ন
ঝরাপাতা কাঁদে, বসে থাকে অপয়া দিন
শুচিতার মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ফুল শিল্পের বন্দনা করি
উদ্বিগ্ন হই
পাতাদের কান্নায়
বিশ্বায়নের তাপদহে পুড়েই্
কখনো হেমস্টীচে হৃদয় গাঁথি
দ্রুত পাঠ করি নিসর্গের ত্রিপিটক!





নকল কিছু পেলে

রাত বয়ে যায় আদরগুলি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে
কেউ বুঝি দেয় মন পাহারা বৃক্ষলতার ফাঁকে
ও কলাবউ, বনস্পতি ও দেউলের দেবী
সম্মোহনে হোসনে তোরা ভোগের মানবসেবী
জনশ্রুতির বার্তা নিয়ে যায় উড়ে দূর পাখি
ও কিশোরী তুই কিরে তার খবর রাখিস নাকি?
রাত বেড়ে যায় দানবদলে যায় পড়ে যায় সাড়া
মনের জমিন লিজ নিতে হয় বিশ্ব মাতোয়ারা
পুঁজিপতি বণিকদেরও মুখে জাগে হাসি
হলদে পাখি কষ্টে শোনে চৌরাশিয়ার বাঁশি!
রাত শেষে হায় থমকে দাঁড়ায় আকুল নিশিচারি
নিশ্বাসে বিষ ছড়িয়ে পড়ে বাতাস যে হয় ভারি
ও কুঁড়িফুল, বলনারে তুই ফুটবি কেমন ক'রে?
বিবর্তনের চলছে খেলা কাল- মহাকাল ধরে!
রাত থেমে যায় সাক্ষী যে ওই সবুজ বৃক্ষলতা
আমার ' আমি ' হই সার্থক, পুড়িয়ে মানবতা
দেখি, বুঝি, সবই করি লোভের আগুন জ্বেলে
আসল ফেলে হই যে খুশি নকল কিছু পেলে