ইন্দ্রাণী সরকার
অস্তিত্ব
শেওলা ধরা দেওয়ালের মত অস্তিত্ব
দৃষ্টি নিম্নগামী
যেন
বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু লেখা
ফুটিয়ে তোলে
সম্পর্ক নেই, পাতাল থেকে সম্পর্ক খুঁড়ে বার করে
আনে তাদের জামা পড়ায়, মোজা পড়ায়,
টুপি পড়ায়
আবার খুলে খুলে নেয়
নগ্ন শরীর চেটে চেটে
খায়
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে আমি চাটি নি
আমরা চাটি না, তারা চাটে। ওদিক থেকে একটা ফড়ে
রোজ নীল আকাশে গল্প
আঁকে ।
এভাবেই তাদের জীবন, এভাবেই পরমার্থ ।
আগমনী
শরতের মেঘে মেঘে মায়ের আগমনী
সোনা সূর্য্য
ঝিকমিকিয়ে যায় পাতায় পাতায়,
কাঁচা হলুদ বরণ যেন
লেগে আছে ঘাসে
কাশের দল মাথা নেড়ে ফিসফিসিয়ে হেসে যায়।
শিশির ভেজানো সকালে কে ঐ বালিকা
খালি পায়ে নূপুর পড়ে
বাগানে শিউলি কুড়ায় ?
দূরে শুরু হয় ঢাকের
আওয়াজ ভোর হল
পূজার ফুল এনে সে ঝুড়িতে উপুড় করে দেয়।
শুরু হয় মন্ত্র, শুরু হয়
আরতি, পুষ্পাঞ্জলি
মায়ের পাশটিতে
দাঁড়িয়ে ছোট মেয়ে মন্ত্রগান গায়,
নানা বস্ত্র, আভরণ সজ্জিত যত পুরুষ ও নারী
পূজাস্থান ভরিয়ে
রাখে হাসি আনন্দের ফোয়ারায়।।
নিরাময়
খুব আদরে ডাকি প্রিয়কে
মধ্যরাতে তার চিবুক
ছুঁয়ে আকাশ দেখি
তাকে আজন্ম শুশ্রূষা করি
নিস্তব্ধ রাতে
গাছেদের সংলাপ শোনা যায়
থোকা থোকা নিরাময় ফুল দিয়ে
তার গায়ে শীতল
চন্দনের প্রলেপ দিই
অরণ্যদেবীর মায়ায় তার চোখে
জোছনার শীতল প্রলেপ
লাগিয়ে ঘুম পাড়াই
ঘুমে সে স্বপ্ন দেখে হেসে ওঠে
হাত বাড়িয়ে আঁচলটা
টেনে চোখ ঢাকে |
শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি
আমি কবিতা কখনো লিখি নি
শুধু তাকে হাত বদল
হতে দেখেছি
যেন এই অন্ধ পৃথিবীতে সে মৃত।
তাকে বাঁচাতে উদ্ভ্রান্ত ছুটে যাই
ধূসর সভ্যতা থেকে
আলোকিত উত্তরণে
নবজাগরণের মত সে একদিন
আমার বিস্মিত চোখ
খুলে দিয়ে যাবে।
সেই আশায় হাতে ভরসার শব্দ মুঠি করে
পাতায় পাতায় লিখি
তার আগমনী
নতুন দিনে নতুন আশার পদধ্বনি।
এই নির্দয় পৃথিবীর বাগিচায় নিয়মিত
কবিতাকে পদদলিত হতে
দেখেছি
ভুলুণ্ঠিত কবিতার চোখে জলের বর্ষা
যতবার তাকে আগলাতে
গেছি
ততবার সে ছিটকে পড়েছে এদিক ওদিক।
এখন সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় আছি
যখন কবিতাকে দেব
শৃঙ্খলতা থেকে মুক্তি
সমস্ত মানুষের মনে খোদিত করে যাব
এক অপূর্ব ঐশ্বর্য ঐশ্বর্যশালী
কবিতা
যার নাম শান্তির দূত বহনকারী “স্বাধীনতা”।
ত্রিশূল
#
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
বরাবর ছিল যারা এখনো
আছে
শুধু যারা নিজের জায়গা নিতে পারে নি
ছলাকলাতে অপরকে
ঠকাতে নিজে ঠকেছে
তারাই কলম্বাস হয়
পরিত্যক্ত উপদেশ
নথিভুক্ত হয়
#
নস্টালজিয়া সর্বক্ষণ পাশে
থাকা
মানুষের জন্য হয় না
যাকে একবার পাশে
পাওয়া গিয়েছিল
এখন আর নেই তার জন্য হয়
জঘন্যতা জঘন্য মানুষদের মানায় বেশি
যে কোনোদিনই
সাফসুতরো হতে পারেনি
তার কাছে এর চেয়ে বেশি কি আসা করা যায় ?
তার কাহিনীতে
দেবত্ত্বের আশা দুরাশা
#
দেবালয় আগেও ছিল এখনো আছে
কারা যেন শকুনের
ডানা থেকে পালক তুলে
বারে বারে দেবালয় চিহ্নিত করে
আর নিত্য তুষের
আগুনে জ্বলে পুড়ে মরে।