শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭

শাশ্বতী সরকার



শাশ্বতী সরকার

পলাতক

যখনই কোন নারীলোভী দেবতার গল্প শুনি
তখনই আমার মানবরূপী অসুরদের
ধরে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করে
ভীষণ ইচ্ছে করে মানবাসুরদের
মাথা থেকে পা অবধি
আদরে আদরে ভরিয়ে দিই,
ভীষণ ইচ্ছে করে তাঁদের সমস্ত ব্যথার
জলকণাগুলো ওষ্ঠে শুষে নিয়ে
নদী হয়ে উঠি,
ভীষণ ইচ্ছে করে তাঁদের পবিত্র বীজগুলোকে
ধারণ করে সারা পৃথিবী ফুলে ফলে
ভরিয়ে দিই,
ভীষণ ইচ্ছে করে তাঁদের জড়িয়ে ধরে
সারাজীবন বাঁচি।
কিন্তু যত তাঁদের কাছে যেতে চাই
ততই তাঁরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান,
তত তাঁরা ক্রমাগত ঠেলে দিতে থাকেন
সেই নারীলোভীদের দিকেই।
আদরপিপাসু শরীরগুলো সারাজীবন
লাঞ্ছিত হতে হতে
একসময় ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
মানবরূপী অসুরেরা পালিয়ে যান,
পলাতক অসুরেরা সারাজীবন
নারীর বিষাদ বয়ে বয়ে বেঁচে থাকেন।





মন্দ উপাখ্যান
                        
যে তীর্থের পথে পথে কবিতা ছড়ানো আছে
সেখান থেকে কোন পারাবত এসে
আমাকে কোন কবিতা শুনিয়ে যায়নি
অথচ আমি অপার অতল নোনা জলে
ভিজে ভিজে, জলের মধ্যে ডুবে ও জলের
বাইরে থেকে তোমার জন্য অসংখ্য কবিতা
কুড়িয়ে এনেছি।যদি কখনও ইচ্ছে হয় বোলো,
আমার পারাবত উড়িয়ে দেব তোমার ঠিকানায়।
যদি মনে হয় তোমার অঞ্চলে এ আমার
অনধিকার প্রবেশ তবে চুপই থেকো,
কুড়োনো কবিতাগুলি আবার না হয়
ভাসিয়ে দেব জলে।তবে চুক্তিবদ্ধ এ অশ্লীল
সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে
একবার তোমার ঠোঁটে আমার
গভীর দাগ রেখে আসবোই।
আর তোমার শার্টের বোতাম ছিঁড়েখুঁড়ে
দেখে নেব কি আছে সেখানে?
আদুরে বিড়ালের মত মুখ ঘষে ঘষে
সেখানে লিখে আসব আমার নাম
তারপর তুমি জাহান্নমে যেও
আমি আর দেখতে যাব না কিছুই
তোমার শরীরী গন্ধ বয়ে বয়ে
কেটে যাবে বাকীটা জীবন।
কালের খাতায় রচিত হয়ে যাবে
আরও এক মন্দ মেয়ের মন্দ উপাখ্যান।





অসম্পূর্ণ এক ভাস্কর্য

নেশায় মাতাল দিনরাত শুধু পাথর কেটে চলেছি
পৃথিবীর সুন্দরতম পুরুষটিকে রূপ দেব বলে
কিন্তু কিছুতেই সম্পূর্ণ গড়তে পারছি না তাকে
ছলনাময়ীদের ভিড়ে সে মিশে আছে
মিশে আছে পরম ব্যস্ততায়
তার হৃদয়কে সে লুকিয়ে রেখেছে
তাই কিছুতেই তার মুখটুকু গড়তে পারছি না
গড়তে পারছি না আরও এক নারী
যে কিনা তারই কন্ঠলগ্না হয়ে চুম্বনরত
মুখোশের ভীড়ে হারিয়ে গিয়েছে সে মুখ
আর ক্রমাগত গড়তে গড়তে ও ভাঙতে ভাঙতে
ক্লান্ত আমার হাত দুটি অবশ হয়ে আসছে ব্যথায়
স্কন্ধকাটা আলিঙ্গনাবদ্ধ দুই নারী ও পুরুষ
কিছুতেই মিলিত হতে পারছে না
স্বর্গীয় এক চুম্বন আশ্লেষে
কারণ পুরুষটির মুখ মুখোশে ঢাকা
সে কি কখনও ওই মুখোশ ছিঁড়ে
বেরিয়ে আসতে পারবে!






ভালবাসাকে
        
তোমার কাছে পৌঁছতে পারব না কোনদিন
শুধু আমার স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়ে গড়ে গড়ে
তোমাকে অমর করে যাব কাব্য ও কথায়।
ও আমার কৃপণ নিষ্ঠুর ভালবাসা,
আলোকবর্ষ দূর থেকে বসে বসে দেখো
তোমার কবিতা কেমন
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরছে তোমায়
আর ক্রমশঃ টেনে আনছে
এই মায়াময় পৃথিবীর দিকে।






বিশ্বাসঘাতককে...

মানুষের মধ্যে আমি দেবতা খুঁজিনি কখনও
এমনকি অবতারের মধ্যেও না
সমস্ত দোষ-গুণ নিয়েই ভালবেসেছি মানুষকে।
শুধুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতা ও ঈর্ষাজনিত ক্ষুদ্রতাকে
ক্ষমা করিনি কখনও
কিন্তু কিছু মানুষ সবসময় দেবতা হতে চেয়েছে
তাই নিজের চাওয়াপাওয়াগুলোকে ঢাকতে গিয়ে
মিথ্যের পর মিথ্যে সাজিয়ে পাহাড় গড়ে
তার চূড়ায় বসিয়েছে নিজেকে
যখনই ঝড় এসেছে সে মিথ্যের পাহাড়
ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে
অথবা পুজো শেষে বিসর্জিত হয়েছে জলে
অথবা পথপার্শ্বে পড়ে থেকেছে
রোদে জলে একান্ত অবহেলায়
আমি তাই পুজো চাইনি কখনোই
ক্লান্ত হয়েছি শুধুমাত্র ভালবাসা চেয়ে
আর ততোধিক ক্লান্ত হয়েছি

তোমাদের বিশ্বাসঘাতকতায়।