শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

উদয় শংকর দুর্জয়




উদয় শংকর দুর্জয়

সমুদ্র এবং শহরিকা  -১

এ শহর কবিতাহীন ইস্পাত আর কাঁচের। হিম আর বরফের। ভীষণ একলা
টেমসের ঢেউয়ে ঢেউয়ে হারায়ে কুল। বার্চ পাইন উইলোদের সংসার। এবেলা
কেড়ে নিয়েছে ঘুম বারটেন্ডারের। অস্তরাগের কোলাহল ডুবতেই ঝাঁক সীগাল
ভুলে গিয়ে তুষার-ওম, দীঘল গ্রহপথ পাড়ি দিতে দিতে পৌছে যায় ক্রান্তিকাল
তবু কবিতার উপাদান নাগরিক হাওয়ায় ওড়ে অনিঃশেষ। সে যে বালিকার শর্ট
স্কাটের ন্যায় ছান্দসিক, পালকবিহীন ইষ্টিমারের খুলে দেয়া বোতাম। লুটপাট





সমুদ্র এবং শহরিকা  -২

উড়ছে মেঘ ধূলি, মুঠো মুঠো; লেপ্টে যাচ্ছে শরীর। অনিরুদ্ধ মেঘের ঠাস ছায়া
মেখে নেমেছে সমুদ্রবতী। ডানায় ছড়িয়ে বালি, রোদ্দুর ছোঁবে বলে তুমুল মায়া
ফেলে বৃক্ষবিভাস থেকে উড়ছে ধোয়া। রুপোলি বন্যায় আরো কিছু ধুলিজাল
সাইরেনে যাচ্ছে বেজে। সমুদ্র-ফেনায় নিশিকালের সঙ্গমে পড়ে থাকা অনাদিকাল
শঙ্খের গহবরে আদীম চুম্বন খুঁজতে। অজাত অশ্রুপাত। অঙ্গার ও আগুণের
আত্মিক ঘ্রাণ ভুলে জলজ ভ্রমণে তুলে নিয়ে যাচ্ছে গুহ্যসূত্র নিষ্প্রভ ঢেউয়ের





সমুদ্র এবং শহরিকা -৩

নিসর্গের ডানা বেয়ে কুয়াশা নামলে, লিরিল বালিকা ড্যাফোডিল পেরুতে পেরুতে
ফেলে যায় তারাগুচ্ছ। বিনির্মিত পথ রেখে শিলাখণ্ডের জমানো খনিজ পেয়ালাতে
পান করে সবুজ আপেলের জন্মান্তরবাদ। দূরে। বহুদূরে ঘাসের সমুদ্রে বেড়ে ওঠা
বাকলহীন বৃক্ষ ঠিক যেন প্রতীক্ষিত যুবক। খুলে যায় গিট। জটিল সমাধানের রিমোট
শহরের আন্তর্জালিক চিঠির বলাকা ফেলে গেলে দীর্ঘশ্বাস, দাঁড়িয়ে ল্যাম্পপোস্ট
ঠিক এক শতাব্দীর পর সমুদ্রের কংক্রিট ঢেউ উড়বে অরন্যার ঝুল বারান্দায়





সমুদ্র এবং শহরিকা  -৪

ক্ল্যাকটন সৈকতের গ্রীবা থেকে মুছে যায় ধুলোপাহাড় বালির প্রাসাদ; বেলাশেষে। আলোছায়া
নেমে যায় উজ্জ্বল নীল গহনে। বৃষ্টি হ্রদ পেরিয়ে যেতে, থোকা থোকা ঝুমকো আলোর ফুল
অন্ধকার গ্রহণকালে মুছে ফ্যালে তীব্র দহন। ব্যাথিত প্রতিধ্বনি খুঁজতে আজো কলরবের দুকুল
অপেক্ষায়, স্থির জলরাশির কাছে। হ্যারিস পাখির বাদামী চোখেই বিষাদ কলতান; মোহ-মায়া
এক শুক্লপক্ষের কাছে গুহ্য চিত্রলিপি জমা রেখে অন্য দিগন্তে লেখাতে চায় নাম। এরপর
রাত্রিদেবীর সব বাতি ঝলসে উঠলে মায়া ভুলে যায় সব ফিনিক্সরা। নিস্তব্ধতা অতঃপর





সমুদ্র এবং শহরিকা  -৫

আরও একটি অগ্নি তুষার অপেক্ষার কাল। এ শহর ভিজবে বলে আড়িপাতা গুহাতেই
বুনেছিল প্রার্থনার নকশি করা শিশির। রিজেন্ট লেকের শীতল জলগুচ্ছ প্রত্যাশারই
শেকল বেয়ে উড়োহাওয়ায় ছড়িয়েছে ডানা। সমুদ্র-পথ জেগে ওঠে। বিরাম চিহ্ন এঁকে
স্টারলিংক উষ্ণ-গিরি-পর্বত পেরিয়ে দাঁড়িয়েছে নগর কার্নিভালে। ধুলোস্নাত এ শহর
ভিজবে বলে ডুবসাঁতার নেমছে পথে। পাললিক তটে রকবাঁধা সমুদ্র কল্লোল
সন্তর্পণে সয়ে যাচ্ছে অগ্নিরথের বিরহ বেহালা; কান পেতে শুনছে জলমহল





সমুদ্র এবং শহরিকা  - ৬

জাগ্রত রক যেন শৈবালিক পাহাড়, অনাবৃত জলসমগ্র আহ্লাদে আচ্ছাদিত
শঙ্খ-গহ্বরে কান পাতলেই সমুদ্র গর্জন উঠে আসে; স্বাপ্নিক নিরবধিত
ঢেউয়ের প্রপাত তাড়িয়ে দিয়ে যায়, নুড়ি পাথরের মৃত আকাঙ্ক্ষাগুলো
আর কিছু ক্লান্ত আকাশ একে একে পেরিয়ে যায় ফেরার গুঞ্জন শুনে। আলো -
আন্ধকারে এ নগর গুছিয়ে নেয় গণিতের পৃষ্ঠাশীল্প। আর আমরাও বিদায়ীপাঠ
লিখতে লিখতে মায়ার লবণাক্ত ক্লেদ লুকিয়ে রাখি দ্বিপ্রহর। ফেলে যাই হারভেস্টার-মাঠ