শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

শাকিলা তুবা



শাকিলা তুবা 
এই হাত আমার নয়

তোমাকে খুন করেছি আমি
নিঝুম রাত্রির পথে
আঁকাবাঁকা হয়ে তুমি চলে যাচ্ছিলে
সাপ ভেবে আমি লাঠি চালিয়েছি
তোমাকে রক্তে স্নান করাচ্ছি
জঠরে কেঁপে উঠেছে ক্ষুধা
তোমাকে না হারাবার ব্যাকুলতা
অথচ আজ রাতেই খুন হচ্ছো তুমি
নিরুপায় আমার হাতে।

এই হাত রক্তমাখা
এই হাত জলের মতো ভেজা
হাতও কাঁদছে ব্যাকুলতায়
সুরমার রঙ লাল হয়ে উঠেছে
তুমি কাঁদছো কোন শোকে?
মৃত্যু তো এমন নয় রিফিউজি হয়ে উঠবে!

পলিগামী তোমাকে আমি ছেড়ে রেখেছি
বারবার মরেও তুমি মরো না
আমিই খুন করে বারবার ফিরে যাই
তোমার নিহত ভাবনারা
আমাকেও খুন করে রেখে যায় অকাতরে।




অতিক্রম

পৃথিবীর শেষ মানুষটা যেদিন বলেছিল
নিশিই সব অন্ধকার শুষে
আস্ত একটা দিন পায়ের কাছে রেখে যায়
সেদিন অবিশ্বাস জেগেছিল
পরে ভেবে দেখেছি কথাগুলো মিথ্যে নয়
এরপরে কত রাত গড়িয়ে গেছে ঊষার দিকে
সেই মানুষকে আর খুঁজে দেখিনি
একটা মানুষ, আস্ত মানুষ
ছায়া হতে হতে
গলে যেতে যেতে
রয়ে গেছে মুর্তি হয়ে
সেই মূর্তিটি প্রতি রাতেই জমা পড়ে রাজকোষে
সকালে আবার চুরিও হয়
আবারো রাত্রি ভালবেসে
তাকেই চুমু খাই পরম মমতায়
সেই মানুষটাই এখন কেবল দিবানিশি কাব্য।




চক্ষু আয়ুষ্মাণ

কে যেন ক্রমশঃ নেমে আসে বিস্মিত আকাশের দিকে
কেউ বললো, ওগুলো উড়ে যাওয়া ধানের ক্ষেত
কারো মতে, ব্রেইল অক্ষর; লিপির আকরিক,
দৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও অবুঝ শব্দের কারিগরী
কতক তার তুমি বোঝো অথবা
কেউ কিচ্ছুটি বোঝে না।

শরীর থেকে স্ফীত মেঘে, মাতাল ঘড়ির যৌবন স্বাক্ষরে
অফুরান সময় নীরব শ্লেষে ঘুমপাড়ানী নির্জনকোণ
মুছে ফেলে যুগের ভ্রমণকাব্য, কথামালার ক্ষত
তবু সভ্য এক বিকেল হাত ধরাধরি ঠিকই
এগিয়ে যেতে থাকে আরেক বিকেলে
সুখপাঠ্য কোনো বইয়ের কাছে।

মেলে ধরলে এক সকালের হ্রদ, ভেঙ্গে যাবে অন্ধচোখ
যেন আসলে যা দেখছি তা না দেখাই ভাল
যেন সময় আসলে খেলা শুধু, বাকীটুকু
চোখের বাইরে লাগ ভেলকি লাগ
বিষ্মিত অন্তরীক্ষও জানতে চায়
দেখি বলেই কি দেখি না!





লুশিয়াস ভ্যানিলা আইসক্রিম

অনেকদিন কেটে গেল রঙহীন ঋতুর সম্ভারে

যেন ফ্রেমের ছবিরা হাঁটছে অথবা শুনছি টুকরো কিছু কথা
তাড়াতাড়ি ফিরিস তুবা, আইসক্রিম জমছে ফ্রিজেবা
ভেজা চুলে ঘুমোতে নেই মা ঠান্ডা বসে যাবে

ধীর পায়ে হেঁটে যায় শীতার্ত রমনী চোখের করিডোরে
একটু হাসি, তীর্যক চাহনী আর বাঁকানো আঙ্গুলে
মুঠো মুঠো অক্ষর গড়িয়ে আসছে কি আমারই দিকে?

ঘরের উপর পোকার বাসা, বুক টান টান ঘাসেরা বাড়ছে
নীচ থেকে রমনী তবু মৃদুস্বরে বলে ওঠে, ‘কেঁদো না মা,
মানুষই এমন ক্রমাগত বিনাশের দিকে যায়

এমনি অনেকটা দিন চলে যাবে শোকের কড়া গুণে
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা অথবা বসন্তে কিই বা যাবে আসবে
প্রতিটি নতুনই তবু ক্লান্তিকর, বিনাশের বার্তাবাহক।

তারপরও যাবে সময় আরো আরো রঙহীন ঋতুর বিরহ নিয়ে।




অরুন উৎসব

কত কথা চলে গেছে কার অতলে
বদলে গেছে সেইদিন, এইদিন
আমাদের দিনরাত্রি।

জ্বরের কিনারে শর্তহীন তার প্রলাপ
এগিয়ে রাখছে বুকভরা ঘুম লিস্ট
নজরের উল্কিকাটা চোখ আর
মজার সব নক্সায়
খুলে গেছে বুঝি কল্যানের স্বরলিপি।

যে চেয়েছিল গোপনে বাঁচতে
মৃত্যু তাকে পুড়িয়ে গেছে শতবার
মিথ্যে তার গ্রীবা সহসা ডুবে যেতেই
কি অসাধারণ শষ্যভারে জেগে উঠছে জ্যোতি
শুরুটা আসলে এখান থেকেই হয়, সবে জেনেছি।

একজন আজ কানামাছি, ছুঁয়ে যাচ্ছে আন্দাজে
বনবিথী তার তাতানো সিগনেচার;
শুক আর সারির জড়োয়া গহীন।

জল তার কবেকার বলে গেছে কথা

মেঘ তার সবেধন এঁকে দিল ছবি।