রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কবিতা উৎসব


আমাদের কথা



জীবনকে ভালো না বাসলে কবিতার জন্ম হয় না। আর কবিতার জন্ম না হলে আমাদের বেঁচে থাকাকে সুগভীরস্তরে ব্যাপকভাবে ছুঁয়ে থাকা যায় না। অর্থাৎ কবিতাই পারে আমাদেরকে মহাকাল আর মহাজীবনের সাথে সংলগ্ন করে রাখতে। বর্তমানের অনুভবে অতীতের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত সচেতন উপলব্ধি আর ভবিষ্যতের স্বপ্নিল কল্পনা- এই দুইয়ের সাহিত্যিক মেলবন্ধন ঘটিয়ে আমাদের চেতন অবচেতন মনের আঙিনায় কবিতাই আমাদেরকে উদ্ভাসিত করে জীবনের রামধনুতে। কবিতাই পারে জীবনবোধের গভীরতায় সুস্পষ্ট জীবন প্রশ্নের অভিমুখী করে গড়ে তুলতে আমাদেরকেআর তখনই আমাদের আমিত্বগুলি অর্থবহ হয়ে ওঠে। তাই কবিতা শুধুমাত্র ছন্দের নূপুরনিক্কন নয়, কবিতা নয় কেবলমাত্র কাব্যতত্ত্বের বিস্তার। কিংবা ভাষাশৈলীর সুরবিহার। কবিতা আসলেই আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনেরই গভীরতম সংঘটন।

আর ঠিক সেইখানেই কবিতার উৎসব জীবনের মহাসমারোহে। একজন কবির সেইখানেই আত্মপরিচয়। কিন্তু “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি” জীবনানন্দের এই বহুশ্রুত অমোঘ বাণী শাশ্বত সত্য ধরে নিলে একথাও বলা যায় সব পদ্যই কবিতা নয়, কোন কোনটিই কবিতা। সেইরকম কিছু কবিতা সৃষ্টির তাগিদ থেকেই বহু সংখ্যক সংবেদনশীল সত্ত্বা সারাজীবন নিরলস সাধনা করে চলেন। সাধনা করেন তাঁদের জীবনবোধের আয়নায় কখন প্রতিফলিত হবে সেই স্ফূলিঙ্গের, যার থেকে জন্ম নেবে সার্থক কবিতা। কালের প্রবাহে হয়তো তাদের সযতন প্রয়াসও ডুব দেবে বিস্মৃতির অতলে তবু সে প্রচেষ্টার মর্মবাণী বিধৃত হয়ে থাকে যে সামান্য কয়টি পঙতিতে, তাতেই তাঁরা স্বাক্ষর রেখে যান নিজস্বতার, স্বকীয়তার। যে চিহ্ন থেকেই জন্ম হয় পরবর্তী রথীমহারথীদের। কাব্যচর্চার এই নিহিত সত্যই কাব্যচর্চায় উৎসাহ যোগায় অধিকাংশের মধ্যে। সেই অধিকাংশই হয়তো জীবনানন্দের মতে কবি নন, তবু তাঁদের সাধনাও একেবারে অকিঞ্চিৎকর নয়। বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রবাহমান ধারায় তাই যুগপ্রবর্তক বিশিষ্ট কবিদের সমান্তরাল স্বল্পখ্যাত এমনকি অখ্যাত কবিদেরও বিশেষ ভূমিকা থেকে যায়।

কবিতা উৎসব জীবনের সেই মহাসমারোহে সেই স্বল্পখ্যাত এমনকি অখ্যাত কবিদের সযত্ন সাধনার তীর্থক্ষেত্র। কবিতা উৎসব তাই প্রিয় কবির প্রিয়কবিতার উৎসব প্রাঙ্গণ যেখানে কবিতাপ্রেমী উৎসাহী নাগরিক, জীবনের গভীরতম অনুভবের ছোঁয়ায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠার অবসর পাবেন নিত্যদিনের প্রাত্যহিকতায়। কবিতা উৎসব তাই অন্তর্জালভুবনের দিগন্তে প্রতিদিনের ধূমকেতু নয়। কবিতা উৎসব প্রিয় কবির প্রিয় কবিতার নিত্যদিনের উদযাপন।

২০১৬র একুশে ফেব্রুয়ারীর মাহেন্দ্রক্ষণে কবিতা উৎসবের পথচলা শুরু; প্রতিমাসে এই দিনেই প্রিয় কবির প্রিয় কবিতার ডালি নিয়ে পাঠকের মগ্ন চৈতন্যে শিস দিতে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। কবিতা উৎসব প্রত্যেক কবির পাঁচটি করে কবিতা নিয়েই প্রকাশিত হবে কেননা আমাদের বিশ্বাস একটি মাত্র কবিতায় কবির ভুবনকে ঠিকমত অনুভব হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। তাই একজন কবির সমগ্র ক্যানভাসের একটু বিস্তৃত পরিসরই পাঠকের আগ্রহে উদ্দীপ্ত করে তোলার প্রয়াস আমাদের। আর সেই প্রয়াস থেকেই কবিতা উৎসবের আত্মপ্রকাশ বাংলা সাহিত্যের বারোমাস্যায়।

আর সেই উপলক্ষ্যেই বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও নাট্যব্যক্তিত্ব সর্বজন শ্রদ্ধেয় শ্রী ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের অতিথি সম্পাদনায় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনে, আমরা তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আমরা আন্তরিক আমন্ত্রণ জানাই বাংলা কাব্যসাহিত্যের আঙিনার নিরলস সাধকদের, প্রতিমাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রত্যেকের পাঁচটি করে প্রিয় স্বরচিত কবিতা পাঠিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণকে উৎসবমুখরিত রাখার জন্যে। কবিতা উৎসবে লেখা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmaol.com.  লেখার সাথে কবির একটি প্রফাইল চিত্র পাঠানো আবশ্যক।

কাব্যপ্রেমী সকল বঙ্গজ সুহৃদসুজনকেই কবিতা উৎসবের প্রাঙ্গনে সুস্বাগতম!