সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়


সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

আমাদেরই লোক

একটি লম্বা সফর সেরে একদম ঠিক তোর মতো
ফিরে এলো হাওয়া,
তারপর মৃদু শব্দে দরজার লোহার কড়া নাড়লো
পাছে অন্যের ঘুম ভাঙে।
চেনা শব্দের তর্জমা করতে করতে দুঃসাহসী হয়ে
আমি দরোজা খুললাম,
অবাক কাণ্ড!কাছে পিঠে নাঃ কেউ কোথাও নেই
কেবল কটা চড়াই ছানা-
আপন মনে চৈতন্যের চরা থেকে
নীরবে শস্য খুঁটছে খাবে।   ঠোঁটে নিয়ে যাবে।

শূন্যের ভিতর জন্ম নেওয়া উচ্ছ্বল আশার টুকরোরা
শামুক হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে,
গিরগিটির মতো রঙ বদলানো মানুষের মধ্যে
তীব্র অসূয়া লতিয়ে উঠছে।
তোকে 'পরিযায়ী' উপাধি দিয়ে দূরে সরানো হল
আর আমি রইলাম অপেক্ষায়,
এবার একবার মুখোমুখি হলে নিজ মুখে বলবো
-তুই আর ফিরিস না রে!
তোর শ্রম সফর আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক
আমরা তোকে আপন ভাবি না।

তারপর  লম্বা সফর সারা হাওয়া কোয়ারানটাইন
থেকে দুঃখি মুখ বাড়ালো,
অবিকল তোর মতো দৃপ্ত চোখ,শক্ত চিবুক,পেশী
সজল চোখে ভিখিরি হয়ে গেল,
আর-ঘন-গাঢ় কৃষ্ণকালো অন্ধধকারকে
আমরা বলতে পারি না-তুই আমাদেরই লোক।








কাঁদলে কাঁদে

এই যে তুমি কাঁদলে, জানলেই না জলফোঁটা
বাষ্প হবার আগে নদীতে মিশেছে।
আর বিভাজিত কষ্ট সকল
সারাদিন ভিজিয়েছে বৃষ্টির জলের ধারা ।
তুমি জানতেই পারলে না
তোমার ফটো ফ্রেমের ভিতর থেকে
বেরিয়ে আসা হারানো অতীত
বিবর্ণ ফুলদানি জুড়ে ফুটিয়েছে সুখের ফুল।

এবার ভাবো সময়ের গুটিপোকা ভেঙে
তুমি শুঁয়োপোকা না প্রজাপতি হবে।
কারণ তোমার চোখ বরাবর কেউ একজন
আজ বর্ষার প্রথম কদম ফুল ফোটাবেই।

তাকে তুমি ক্রাশ বলে
আত্মপ্রবঞ্চনায় নিজেকে নিঃশেষ কোর না,
জানবে তুমি কাঁদলে,
তারও ভিতরে কাঁদে অন্য দুটি চোখ...
সে কান্না বৃষ্টি হলে তোমাকেও ভিজিয়ে দিতে পারে
তখন একটু উষ্ণতার খোঁজে তাকেই তো চাই,
তুমিও প্রথম কদম ফুলের মতো স্নিগ্ধ হয়ে ওঠো।।








সেতু

সেতু
চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে এক
                    অদৃশ্য বন্ধনে  থাকে
সেতুর বাঁধন আলগা হলে
           পদচারণা স্তব্ধ হয়ে আসে।
নীল নীরবতার নিরাভরণ রূপ
          নির্নিমেষ চোখে দেখে সেতু,
তার পাঁজরের খাম খুলে
           কষ্টের চিঠিগুলি বার করে
সজল চোখে পড়তে থাকে
          আমরা জানতেও পারি না!

সেতু
রাতের অন্ধকারে একা
                 মেঘের সাথে গল্প করে,
হাওয়াদের বলে-দাঁড়াও
                তোমার সর্বদা চঞ্চলতা,
দু'দণ্ড বোসো কথা কই।
                       সে সময় তার কই!

সেতু
মধ্যযামে চুপচাপ নদীর
              কবিতা শুনে শুনে ঘুমায়।
মাছেদের ঘরকন্না নিয়ে
              কত রূপকথাই না শোনে।
দুই পাড়ের হিম নির্জনতা
              অদৃশ্য ছুঁচে সেলাই ক'রে
স্বপ্নের মালা গাঁথতে থাকে।

চাওয়া পাওয়ার এ গুলতানি
        ভুলিয়ে দেয় নিরাপত্তার কথা,
খোঁচা খেয়ে বাঘ জেগে ওঠে
        বুকের ভিতর লাফাতে থাকে।
সেতু তখন দুলতে থাকে
        দোলনা ঘড়ির মতো অবিরাম।

সেতু
ধন্য-ধুলি বুকে চেপে একা হয়
          তখন তারারা পরী হয়ে নামে,
সেতু
বান্ধব বোধে হাসতেই থাকে 
কংক্রিট ভাঙে মাইকেল জ্যাকসন !