সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

বনশ্রী রায় দাস


বনশ্রী রায় দাস

ভাষা স্রোতে ভেসে

মায়ের বালুচরি ঘোমটায় আকাশ নেমেছে
চাঁদ- স্রোতে ভেসে গেছে আরণ্যক পাহাড় ।
 বরফ চূড়ায় ধ্যানের নীরবতা দিয়েছেন
আমার পিতা এবং পূর্বপুরুষ।

কতবার মায়ের বুকে সূর্যোদয়ের নম্র সকাল দেখেছি ।
কুয়াশার সংকেত মুছে শক্ত শিরদাঁড়ায়
আগ্নেয়গিরি হয়ে গেলেন আমার বাবা ।
 আদি জননি আমার, এই মায়ের নাম  ভাষা- নদী ।

এ মায়ের দুধের ধারায় ভাসিয়েছি শব্দ- ধ্বনি স্রোত,
ভেসে যাচ্ছে অক্ষর ফুল দেশ থেকে দেশান্তরে ।
আমার মা আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন
অন্য মাকে চিনতে, জানতে ।

            

       




শপথ-পত্র
            
তোমার কাছে কিছু চাইবার নেই
অনন্ত শূন্যতার মুখোমুখি সংঘর্ষে
রক্ত ঝরে বারংবার ।
প্রশ্নের কাছে নিজেকে ফেরাই
উত্তর আসে পারদের ওঠা নামায়।
 কবিতা লিখে ছিঁড়ে ফেলা,
নির্ঘুম রাতের বিষণ্ণতা ,
কিংবা ভগ্ন সেতুর মাঝ বরাবর
চোখের কাজল মোছা।
সমস্ত বন্ধক রেখেছি একটি শব্দের কাছে ।

তৃষ্ণার্ত আড়াল পেতেছে অস্থিরতা
শুধু ধ্বনি-ময় ঘড়ির ঘন্টা
এভাবে নিরলস জানলার রোদ গড়িয়ে পড়ে ।
হৃদয়ে চাষ করি সংসার ,রান্না-বাড়ি
দীপ জ্বালাই পাঁজর দুমড়ে ।
নিবিড় স্নানে তুমি দেখেছো কৃষ্ণবর্ণ মেঘ
 অথচ ভালোবাসার শুশ্রূষায় তুমি
রেখে গেছ  আমৃত্যু শপথ-পত্র।
              








মোহজাল

কলম ও কালির নির্জনতা চুঁইয়ে রক্ত বৃষ্টি ,
না পাওয়ার তরঙ্গ ঢেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে
আছড়ে পড়ছে কালো স্ক্রিনের সিম্ফনিতে।
কালের শকুনি যেন ঘ্যানঘেনে
ক্রমশ মায়াজাল বিস্তার করে চলেছে ।
দুর্যোধনের দাম্ভিক চোখে
আর পৃথিবীর ধ্বংস তরান্বিত করছে
জালের ফাঁসে আটকে নাভিশ্বাস সর্বত্র ।

  






বিষণ্ণ- হাওয়া

কলম ছোঁয়ার আগে বুক খুলে রাখে সাদা পাতা
এদের কোন জাত নেই ,
অভিমান-বন্ধন থেকে  সৃষ্টি করে
মুক্তির আকাশ ,ডানায় লিখে রাখে স্বাধীনতা ।

এই যে খয়েরি ঘাসে ,উন্মুক্ত চাঁদের ঝালর
বেদনা ভাসায় খোলা মেঘের খাতায়
বিপ্রতীপ ভাষা গুমরে গুমরে বৃষ্টি নামায় অঝোর ।
মন ও মায়া সংলাপ আওড়ে চলে বেঘোরে ।

শাপলার বন ঘন হয়ে এলে সাধের পেখমে প্রেম
ধরে ময়ূর ,ময়ূরাক্ষী তরী ভাসায় বুকে ,
আকণ্ঠ নিমজ্জনের পর প্রশ্ন ওঠে চতুরতা ঘিরে ।
একক আমি ,নিবিষ্ট শৈশব আঁকি বুকের খাঁচায়।
   
         
            





সুযোগ সন্ধানী

প্রতি ভোরে এখনও মানুষ খুঁজতে যাই
রূপনারায়ণ পারে  নিম, নিসিন্দা,সর্পগন্ধার পাতা সরিয়ে ,
আঁকড়ে ধরি পরপার বন্ধু তোমায়।
 ভাঙা হৃদয়ে ফিরে আসি জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে ।

সুখ- বাগানের গোলাপ ছুঁয়ে ভাস্কর্যের অনুধ্যান ।
অনেক শামুক উঠে আসে ঘরে,
নিরীহ প্রাণ ভেবে কেউ সুযোগের অপেক্ষায় ,
কেউ নীল বুক ঠোকাঠুকি করে ।