রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

আশরাফুল মোসাদ্দেক




আশরাফুল মোসাদ্দেক

একবিন্দু ব্যথা

অসুস্থ সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে
সাইরেন বাজিয়ে চলে যায়
একটি এম্বুলেন্স

পুষ্পের পতনে কি হিল্লোল জেগে ওঠে
আমাদের মৃত্তিকায়

বারান্দায় ছলাৎ ছলাৎ করে
কিলো-কিলোগ্র্যাম অন্ধকার 

একবিন্দু ব্যথা মালতি লতার মতো
গজায় লকলকিয়ে 
তারপর ভেঙ্গে যায় চুপচাপ




খরচ হয়েছে দিনগুলো 

গ্রিল করা রোস্টকৃত বা স্মোক করা মুরগি
আকাঙ্খা অথবা অর্থ- কোনটি অধিক অর্থপূর্ণ
ওটা জরুরি নয়- যদি চাহিদা কাম্য হয়
কল্পনায় জিহ্বার উপর খাদ্য ফেলে
শক্তি ও মাত্রার চিত্রলেখ এঁকে
সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যাচিতভাবে

না ছিলো না থাকবে কোনো বিতর্ক
বিতর্ক কখনো হয় না জাগ্রত
দৈহিক-মানসিক বায়বীয় আনন্দে

খরচ হয়েছে দিনগুলো রিফু করে নিরানন্দ সময়
নতুন কিংবা পুরনো চাদরে শয়ন করে
বৃক্ষগুলোর মূলোৎপাটিত হয়েছে নিস্ফল ঝাঁকাঝাঁকিতে
সেল ফোনের বোতামগুলো ক্ষয়ে গেছে
জুতোর সুখতলার মতো ক্রমাগত
পথ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে পথহীন বুনো চিহ্ন-রেখায়
একা একা হাঁটার সময়ে

প্যাঁচার মতো রক্তচক্ষুর গোধূলি
নেংটি ইঁদুরের তীক্ষ্ণ দাঁত
কাঠমিস্ত্রির খাঁজ কাটা উখারের মতো
মাঝরাত চিৎকার করে কর্কশভাবে
কুমিরপ্রতিম টিকটিকির মতন
ধ্রুপদ লয়ে নাচে তেলাপোকারা
আলো ও আঁধারের অন্যোন্যক্রিয়ায়
তবু অঙ্কুরিত হয় না দ্বিধা কখনো





জীবনের ঢালপথে 

রাতের পর দিবস নয়
অট্টহেসে উপস্থিত হয়েছে রজনি
গভীর তমসাচ্ছন্ন থেকে গাঢ় অন্ধকারে
কৃষ্ণপক্ষের শেষ দিবসের পর
চাঁদ নয়- গাঢ় কালো মেঘমালা
আকাশে পেতেছে গুচ্ছ গুচ্ছ তাঁবু

প্রতারক সময়ের বেলুন ফুটো করেছে
নিশাচর প্রাণিকুল
দ্রুত মার্চ করে নীরবে চলে গেছে সময়
বিদ্যুৎ চমকানির ঝলকানির মুহূর্তে যুক্ত হয়েছে লবণ
বিশৃঙ্খল মনে এবং নিক্ষেপ করেছে
ঢেউ খেলানো টিনের চালে
মধ্যগ্রীষ্মের ছটফট করা দুপুরে

কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছি এখন আমি
ডুবোচরের হাঁটুজলের মধ্যে
অথবা ভেসে গেছি শনিবারের রাত্রির ঢেউয়ে
শ্মশানের পাশের নদীতে

ভূগর্ভস্থ উচ্চন্ড কক্ষে শুয়ে থেকে বিজনে
মণিমুক্তার কোষাগারে মমির মতো
অনুজ্জ্বল চাহিদা রেখা অতিক্রম করেছে
বিবর্ণ প্রান্তিক উপযোগ রেখা
জীবনের ঢালপথে
এবং ঢুকে পড়েছে অন্ধকার চোরাবালিতে





এদিক ওদিক

ক্লান্তিকর আকাঙ্খা নতজানু হয়েছে
ঘন নীল এক মূল্যবান পাথরের কাছে
দ্বিতীয় আর কোনো পাথর নেই সেখানে
অস্তিত্ব-কে জানান দেয়ার আগুন জ্বালাতে

ভুলে গিয়ে দৈনন্দিন ব্যাকরণ
অনটনের বহুভুজের ভারকেন্দ্র হতে
মৌল উপযোগের বৃত্তের কেন্দ্রে অনুমানে
এগিয়ে যাই কিছুটা ধীরে
সহসা পিছলে পড়ি চুপিচাপি

নিরুত্তাপ গন্তব্যের চারপাশে ঘুরঘুর করছে শ্বেত ভল্লুক
কম্পাস লুকিয়ে পড়েছে- পালিয়ে গেছে লক্ষ্য
বান্ধববিহীন দৈনিক অভিযাত্রায়
পশ্চাৎকালিক অনুভবে

বাবড়ি চুলের বন্ধ্যা অনুভবে
উকুন তুলছে সান্ত্বনায়
মিলিয়ন মিলিয়ন কোষগুলোকে নিয়ে প্রত্যহ
ঘুরপাক খেয়ে আবর্তিত হচ্ছি
সংকীর্ণ পরিধির ভিতরে
কোনো বৃক্ষ বুকে এঁটে নেই কালো ব্যাজ
মহাজাগতিক কোনো কম্পন হয়নি লিপিবদ্ধ

শান্ত গোধূলিতে
প্রকৃতি পরিধান করে আলোর অলঙ্কার
যেনো এক গুচ্ছ পোনা মাছ
স্রোতের বিপরীতে উজিয়ে যাচ্ছে শিকার ফাঁদের দিকে
আলোকসজ্জার মোমবাতিগুলো একে একে নিবে যায়
আত্মায় এক বিশাল পরজীবি
অদৃশ্য বৈনাশিক বন্যপ্রাণীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত দেহ
সকল সম্ভাব্য দিকগুলো ভুলে
সন্ধান করছি পথ এদিক ওদিক






হামাগুড়ি দিয়ে

পথগুলো খেয়ে গেছে অবকাঠামোরা
ছেনাল ছায়ারা বিস্তৃত করেছে পাখাগুলো
বিশৃঙ্খল মগজের কোষের উপর

অস্পষ্ট দৃষ্টির বোবা এবং কালা আমি
যেনো অতিশয় এক প্রবীণ ব্যক্তির মতো

অনতিক্রমনীয় দুর্ভাগ্যের গ্রহণ লেগেছে
কপালে এঁটে গেছে গ্লু হয়ে
পাঠ করেছি আমি মহাশূন্যের করতল
মধ্যরাতে চন্দ্রালোকে
পিচ্ছিল শেওলায় ফেটে গেছে মেরুদন্ড
দিবসগুলো চলে যায় ভাটির স্রোতে
ভেসে থাকি সংগ্রামী পুলকে

পরিশেষে উড়িয়েছি ছিন্ন সার্ট একাকীত্বের চূড়ায়
দুর্ভাগ্যের হিম লিপিকলা
স্থাপন করেছে অসহায় চিলেকোঠায়

সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্তে
সিদ্ধান্ত নিজেই একটি রশি নিয়ে ঝুলে পড়েছে
কর্তিত বটবৃক্ষের ডালে
তদন্তকারীরা রয়েছে গভীর জলে নিমজ্জিত
ময়নাতদন্ত অনুষ্ঠানে

তথাপি হাতছানি দেয় ললিত স্বপ্নগুলো
আত্মার সাথে সাপ-লুডু খেলে বিশ্বাস
সাপের ছোবল খেয়ে-  শুরু করি পুণরায়
আমি হারিয়েছি উভয় পা- তবুও হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাই