রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

ফারহানা খানম




ফারহানা খানম

প্রত্যাবর্তন অনিবার্য নয়

প্রত্যাবর্তন অনিবার্য নয়
চলে যাওটাই সত্য
এই বিশ্বাসে চলে গিয়েছিলাম পাহাড়ের দেশে
বিভক্তিতে বিশ্বাস ছিলনা
তবু রোধ করা যায়না ভাঙ্গন রোজ দেখি
প্রকৃতিও ভাঙ্গে
পাহাড় ভেঙ্গে ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়ে সমতলে
টুকরো পাতার ছায়ারা নকশা আঁকে মাঠে
দীর্ঘ বৃক্ষের ছায়াও মিশে যায় অনেক ছায়ার সাথে
এভাবেই একটা জীবন মিশে যায় অনেক জীবনে
এখানে সত্য ভাঙ্গে, সত্য গড়ে আপন নিয়মে
আর মিথ্যেরা ব্যাঞ্জনা পায় গতানুগতিক পথে।
ক্ষণস্থায়ী বিকেলর রোদে বৈরাগ্য ছিল
প্রকট এভিনিউ ধরে হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়
কারো কারো মনে সন্ন্যাস থাকে
আর তার চলে যাওয়াটাই ধ্রুব।





মেঘচর্চা

আমরা নির্দোষ খেলায় মেতেছিলাম
ঝর্ণা যেভাবে পাহাড়ের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
নেমে আসে সমতলে ঠিক সেভাবে।
আমরা পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে
মেঘের স্পর্শ চেয়েছিলাম
পাহাড়ের ঘুম ভাঙানোর কোন অভিপ্রায়
আমাদের ছিল না ওটা রোদের কাজ
দেখতে চেয়েছি রাশি রাশি মেঘ
মাথার চিমনি দিয়ে যেন পৌছে যায়
হৃদয়ের গিরিখাঁদে।
আমি পাহাড়ের কেউ নই সমতলের বাসিন্দা
তবুও আমার সাধ হয়েছিল
ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ ভিজিয়ে যাক আমার আঁচল
তোমার ডানপিটে রোদ।
আমরা নির্দোষ খেলায় মেতেছিলাম
সবাইতো রোদেরই ভক্ত
আমরা নাহয় একটাদিন মেঘেরই বন্ধু হলাম।






কারাবাস

কাটাকুটি খেলায় আমার তেমন আগ্রহ ছিলনা কখনো
তবুও প্রায় দেখতাম বন্ধুদের কাটাকুটি খেলা
স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওরা খাতার পেছনে
ছক কেটে কেটে চিহ্নের পর চিহ্ন বসাতো
বোর্ডে যখন স্যার লিখতেন ত্রিভূজের তিন কোণের সমষ্টি...
তখন ছকের ঘরে কেউ শূণ্য বসাচ্ছে
আর একজন জয়ের আনন্দে চাপা উল্লাসে ফেঁটে পড়ছে
দেখতে দেখতে একসময় আমিও হয়ে উঠি মস্ত খেলোয়ার
ছক দেখলেই বলে দিতে পারি হারজিৎ।

আজ জীবন সাজাতে সাজাতে
আমিও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি কালো ছোপ ছোপ ছকে
ঠিক বলে দিতে পারি কখন ঘোর লাগে






পুরাণের পঙ্ক্তির মতই ধ্রুব

আসক্তিটা পুরাণের পঙ্ক্তির মতই ধ্রুব!
অরন্যের মত চঞ্চল, শুধু দস্যিপনা নেই।

দিনগুলো নির্বাসন নিয়েছে অচেনা সময়ে
রামধনুর মত।

অজস্র অভিসারের প্রশস্তিগীত গায় রাত
অথচ সে রাতে, --
আমাদের দাপুটে অভিসার দেখে
তারাদের নিরুত্তাপ চোখে ছিল বিস্ময়
যেন জলাভূমির কুয়াশা।

রূপান্তরের সিদ্ধসুত্রে ভালোবাসা বেঁচে থাকে
বসন্তবাতাসে আর
কার্তিকের ভোরে শিউলির বুকে
এখন
বদলে যাওয়া দৃশ্যপট

প্রতিরাতে সৌরঝড়
শত শত পদ্মপাপড়ি ছড়িয়ে দেয়
বিবরের অন্ধকারে          
           ফসিল মানব-মানবীর বুকে।






অসমাপ্ত

পেইন্টিংটার একাংশে পাতাহীন বৃক্ষ আর
ধূসর হ্রদে রোদের খেলা
ঝকঝকে নীলাকাশে শরতের তুলোট মেঘ
বাকি ক্যানভাসে অদ্ভুত সাদা আঁচর
বোঝা যাচ্ছে অসমাপ্ত চিত্র;
হয়তোবা ইচ্ছে করেই চিত্রকর শেষ করেন নি,
পথের শেষে না পৌঁছূলে যে উপসংহার টানা যায়না
তা তিনি ভালই জানেন
ছবিটা স্বপ্ন আনে যে কারো চোখেই
জন্ম দেয় হাজারো রুপকথা
আমিও অলস দুপুরে ইচ্ছেসুখে গল্প সাজাই
মনে মনে ...
অনেকবার তুলে নিয়েছি রঙ তুলি
তবুও ছবিটা শেষ করা হয়নি ...
কখনো মনে হয়েছে আপাতত থাক ওটা
কিংবদন্তি হয়েই
কখনো ভেবেছি আমিত সেই চিত্রকর নই,
আমারো জানা নেই হ্রদের ওপারে কি আছে; কিই বা আঁকার ছিল
সাদা বরফের বুকে কিংবা বৃক্ষের পাশে? .