রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

রাবেয়া রাহীম



রাবেয়া রাহীম

অবাঞ্চিত - বাঞ্ছিত
গোধূলির রেশ তখনও ছড়িয়ে আছে চারপাশ
দাঁড়িয়ে আছি খোলা জানালায়, পরনে  ঢাকাই শাড়ি
সতেজ হাসনাহেনার ঘ্রাণে পুলকিত মন
মনে হোল তুমি চেয়ে আছো অপলক!
চুলে স্বর্ণ চাঁপা গুঁজে দিতে চেয়েছিলে কি? তাই যেন মনে হোল
দেখে যাচ্ছিলাম দুচোখ ভরে তোমাকে।
কত কথা বলেছি মনে মনে,
পেয়েছিলে কী শুনতে?

মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছিলে কি?
নইলে  ঐ চোখের গভীরে রোজ ডুবে যাই কি করে!
পাগল ছিলে তুমি একটা ঠিক যেন বর্ষার মেঘের মতো
কিছুক্ষণ গুমোট ভাবের পর  ঝুম বর্ষণ। 
তোমার সরল নিষ্পাপ  অভিব্যাক্তিগুলো কখন যে ছাড়িয়ে গেলো
আমার বিশ্বাসের চরম মাত্রা, সেই থেকে  নিজেকে
তোমারই একটি অংশ ভাবাতে থাকলাম
কিন্তু মেলা শেষে নৌকা ঠিকই ঘাট ছেড়ে যায়
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে  শুধু হাটুরিয়ার অবাঞ্ছিত কিছু তৈজস
আর আমি--বসে থাকি অবাঞ্চিত কে বাঞ্ছিত ভেবে।



এই বরষায় ডাকছি তোমার নামটি ধরে
বরষার প্রথম দিনে এখনো বৃষ্টি নামেনি এই শহরে,
কালো মেঘের আনাগোনায় মন খারাপ আমি ঘুরে বেড়াই,
বাদল ঘন শ্রাবণে ঝাপসা হয়ে ওঠা শহর
হয়ত আচম্বিতে ঝরঝরিয়ে ঝরাবে প্রপাত!
ইচ্ছে গুলো আজ কারণে অকারণে উড়ে যায় নির্জন কোন অরণ্যে
বুকের জমিনে জমানো আবেগ গুলো নিয়ে রিমঝিম সুরে
বেশুমার বৃষ্টিতে ভিজে যাবো একাই।

একান্ত ভাবনায় আবেগ প্রবণ আমি
কাঙ্ক্ষিত মুখটি তীব্র থেকে তীব্রতরই হয়!
তোমার ওখানে কি এখন বৃষ্টি হচ্ছে খুব?
শ্রাবনের বৃষ্টি! সহজে থামবার নয়--
জানালাটা খোলা কি শোবার ঘরের?
হয়ত তুমি গভীর মগ্ন খসড়া পাতার সাজে;
মনে কি পড়ে, বৃষ্টি ভেজা স্মৃতিময় সেই রাতে--
কিছু বলতে গিয়েও চোখ বুজলে,
আর আমি ছিলাম আহা! আলিঙ্গনে শিউরে ওঠা শিহরিত,
নিরমিলিত চোখ, দেহজুড়ে অবসাদ,
বৃষ্টিভেজা গোলাপ যেন!

বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করি,
অপেক্ষায় তোমার আজ বৃষ্টি হয়েছে ঝিরিঝিরি....
ভিজে যায় পথঘাট, আলোকিত শহর,
কিন্তু তুমি আর আমি ভিজতে পারি কই!!

শ্রাবণ ধারার বর্ষণে একাকার হয়েছে দুচোখ
বুকের ভেতর মেঘ গুড়গুড়
দামাল হাওয়া শান্ত হচ্ছে না যে,
ভিজে যাচ্ছে, ভেঙ্গে যাই, ভাসছি বিলাপে হায়!
ঝরছি আমি ব্যথার তুমুল বরিষণে।

এই শ্রাবণ ধারায় ডুবতে চাই, ভাসতে চাই ভাঙতে চাই,
কি আশ্চর্য তুমি!
চুপ করে আছ প্রচন্ড খরা ধারন করে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আকাশের দিকে মুখ করে
ভাবনার গভীরে ডুবে ডাকছি তোমার নামটি ধরে
শুনতে কি পাও? আমার সকরুণ সুর !



দুরের মানুষ কাছের মানুষ
আজকাল তুমি বড় বেশী রাত জাগো !

---কেমন করে বুঝলে?

অনুভব করি যে,
আমি এত দূর থেকেও ঠিক দেখতে পাই
তোমার না ঘুমানো লাল ফুলে উঠা দুচোখ।।

----বাহ রে ! ঘুম কেমন করে আসে বল?
চোখ জুড়ে যে তুমি থাক, বন্ধ করলে যদি পালিয়ে যাও-
ঘুম লেগে থাকা নিদ্রাহীন দুচোখে এক অপার আদিম তৃষ্ণা
ঘিরে থাকে সারাক্ষণ তোমায় নিয়ে !

তুমি বড় অবুঝ, শিশুর শিশু, আমার বাবুই পাখি।।

----অবুঝ বল, শিশু বল, আরও বল বাবুই পাখী
 মধ্যরাতের উষ্ণতায় ভষ্ম হওয়ার ইচ্ছেতে জানোয়ার প্রায় আমি
তোমার নরম বুকে আমার নাক ও ওস্ঠের ছোঁয়া দিতে
আদিমতার উত্তাপ ছড়াতে চাই--আমার এই আকুলতা বুঝ কি?
বাবুই পাখীর ডানা ঝাপটান টের পাও কি?

অবুঝ পাখি আমার, তোমার অনুভুতির ছোঁয়া  হৃদয়ে  জমিয়ে  কষ্টের
পাহাড় গড়েছি, হৃদয় আমার আকুল হয়ে ভালবাসার
রঙে রাঙিয়ে বড্ড বেশী ব্যাকুল নেশায় মাতিয়ে রাখে।।

----নেশাগ্রস্থ হও তুমি, সোনার মেয়ে আমার?

বাবুই পাখি আমার, তোমার উষ্ণতম শ্বাসে আমি
হয়েছিলাম অগ্নিকন্যা--মাঝরাত পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে,
কোথাও জেগে নেই কেউ, আমি শুধু জেগে জড়িয়ে
আছ তুমি সারাক্ষণ সিক্ত করে হৃদয় আমার একান্ত হৃদয়ে,
তোমার নেশা প্রেমে হয়েছি পূর্ণ।।

----সোনার মেয়ে আমার, পূর্ণ প্রেম আমাকেও করেছে
কানায় কানায় পরিপূর্ণ-নিশুতি রাতের অজুহাতে
ভালবেসে শান্ত হয়ে, গভীর ঘুমে জড়িয়ে তোমায় 
কাছে ডাকবো আরও বেশী করে।।

বাবুই পাখি আমার, যে গভীর মমতা-ভালবাসায়
আমায়  সিক্ত করেছিলে, তাতেই আমি হারিয়েছিলাম
তোমারই অসীম গভীরে-সেই মমতা জড়ানো আদর  
অনন্তকাল তোমাকে আমার ভেতরেই বিলিন করে রাখবে...
এসো জেগে থাকি, আমাদের পরিপূর্ণ ভালবাসা হয়ে।।



ভীষণ রকম একলা লাগে
আমার কবিতার পাতায়,ছন্দে,পংতিতে--
কি নিদারুন বিষণ্ণতায়,
সেই যে তুমি জুড়ে গেলে
এখন আমার--
সারাটা দিন ভীষণ রকম একলা লাগে।।

আমার ল্যাপটপ, সেল ফোন,
ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ-
হৃদয়ের কুঠরিতে অসহ্য কষ্ট গুলো  
থরে থরে গুঁজে দিলে,
এখন আমার--
সব কিছুতেই ভীষণ রকম নীরব লাগে।।

ভোরের আলো মলিন লাগে,
ডুবসাঁতার-অবগাহন নিয়ে-
রাতের কালো তোমায় খোঁজে ;
আমার নিঃসঙ্গ দিনে
অবেলার বৃষ্টি হয়ে, ভিজিয়ে দিয়ে
হাসালে-কাঁদালে, জাগালে--
এখন আমি শূন্যতায় ডুবে থাকি
মাঝরাতের শেষ প্রহরে।।
চোখের জল একলা বয়ে ক্লান্ত হয়ে তোমায় খোঁজে!!



উত্তর চিঠির অপেক্ষায়
খুব চেনা স্মৃতিগুলো আজো বড় বেশী
মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভালোলাগাগুলো !
পেঁজা তুলোর মত নরম ঘাসে শান্ত পায়ে
অনেক দুরে একলা হেঁটে আপন মনে
ক্ষণে ক্ষণে মন উদাসি বাউল সুরে
লিখে যাই না বলা কথা গুলো কবিতার ছন্দে
উত্তর পাওয়ার আশা এখন আর করি না
নিরুত্তর তুমি---অভ্যাস হয়ে গেল যে !!
চিঠির উত্তর করবেনা আর কখনো কি?

পড়ন্ত বিকেলে নদীর স্বচ্ছ জলের দিকে চেয়ে
তোমার মুখচ্ছবি আঁকবার আপ্রাণ চেষ্টা
আর আশায় বাঁচি---হয়ত আজ উত্তর করবে
নির্বাসনে পাঠিয়েও নিজেকে ফিরিয়ে আনি বার বার,
ভুলে থাকার আশায় ব্যস্ততা পান করি আকণ্ঠ
অবচেতন মনেতে ঠিক ভেসে থাকো তুমি
অনুনয় করি ! উত্তর চিঠি একবার লিখো।।
কবিতার পাতারা ভারি হয়ে উঠে তোমার কারনে
রাত পাখির ডাক---ভোরের শিশির বলে দেয়
হৃদয়ের গভীর স্তরে খোদাই হয়ে আছে তোমার ছাপ
তুমি আছো আমার কাছেই...
ভুলতে চেয়ে তোমার মায়ার বৃত্তে জড়াই বার বার
তোমার মোহের ইন্দ্রজালে বন্দী হয়েছি অনেক আগেই
ভালোবাসি কতটা এখন আর সেটা বলিনা
নিজেকে বেঁধেছি তোমার গভীরে
কই, আমার চিঠির উত্তর তো দিলে না?
তোমাকে কি এতোটাই ভালোবাসি !

কি কারন! জানিনা!!