রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

অনিন্দিতা মণ্ডল



অনিন্দিতা মণ্ডল
পাগলামি
সে আমাকে গোপনে
অজস্র বার বলেছে
আসলে সে নিজেই জানেনা
কেন দিন রাত এক করে
কার জন্যে কেঁদেছে

আমার অবিশ্বাসী ঠোঁটে
তাচ্ছিল্যের হাসি
দেখে তাই মুখ ফিরিয়েছিল
মুখেতে চোখ রেখে দেখে
বলেছিল- তুমি নয়, ঠিক আমি

মুহূর্তের মায়ায় তাই
প্রশ্ন করি- কে তোমার প্রেমিক
তুমি কার জন্যে কাঁদো?
জানেনা কেন কাঁদে, শুধু বুক ফেটে
কান্না আসে, এমনি পাগলামি  




যাওয়া
আঙ্গিনায় কে এসে দাঁড়ায়
উবু হয়ে বসে কল পাড়ে
দুই হাতে এলো চুল তুলে
খোঁপা বাঁধে, ফিরে ফিরে চায়

কে যেন দুহাত বাড়ায়
অকালে রঙিন হল হাওয়া,
এমন দিনেতে চলে যাওয়া
মন কেন শূন্য হয়, হায়

আঙ্গিনায় কে এসে দাঁড়ায়
তারে বকুলতলায় ফিরে খুঁজি
জোছনার আলো মেখে বুঝি
চলে গেছে তারাদের ভিড়ে

আজো বকুলের গন্ধ মাখে হাওয়া
বলে, এমন দিনেতে চলে যাওয়া-
আহা, এমন দিনেতে চলে যাওয়া,
তারে আজো ফিরে ফিরে খুঁজি




মৃতের কৈফিয়ত
একটু ও জানতে পারিনি
বিশ্বাস কর!
কিন্তু কি যে হল হঠাৎ-
রাতের আঁধার আমায় ঘিরে ধরে
আপাদমস্তক
দুহাতে সরাতে যত যাই
দুর্ভেদ্য চাদর কেন
সরেনা একটুও কিছুতেই
হাতের আঙুল খুঁজে স্তব্ধতা
গ্রাস করে মন ,
কোথায় হারিয়ে গেল
আমার একান্ত প্রিয় জন
আমি যে চক্ষু হীন
তবুও হিয়ার প্রকট
উপস্থিতি
তুমি না জানিলে কিছু
নতুন এ দেহের আকৃতি,
আছে সব- তবু সেই
দুর্ভেদ্য চাদর
আমাদের করিয়াছে
এই জনমের মত পর।




মার্গ
অনুক্ত কথার কুঠার দিয়ে
অবিরত আঘাত হানি মর্মে যথাযথ
স্বরূপত আলো যার উৎসে আছে
তাকে অন্ধকারে কি করে বা ঢাকিl
একদা নির্মোহ হয়ে ত্যক্ত পথে
পদ চিন্হ রেখে, গিয়েছিলে অসামান্য অধরাকে ছুঁতেপেরেছিলে
নাকি সেই পরম ব্যর্থতা ঢাকা দিতে এত কথাকথার ওপরে কথা
কথার চালাকিযতি যাকে শাস্ত্র বলে কবিতা বলে
সে যে শুধু শব্দ নয় অনুভবে জানে
কী সেই পরম ক্ষণ কী তার প্রতিমা?
কাকে কর দয়া আর কাকেই বা ক্ষমা?
সে শুধু আমারি ছায়াতোমার অজানাহে অনন্ত পথচারী,
পথে নেই লেখা, পথের শেষের ক্ষান্তি
তথাগত সে স্থবির ক্ষণ, সেই শান্তি, হোক চিরচেনাl




জন্মান্তর
এমন করে আবার ফিরে
আসতে গিয়ে যদি
প্রিয় নদীটির তীরে না ভেড়ে তোমার জাহাজ
তবে আর ফিরে কি বা কাজ!
বরং হারাব আমি
সভ্যতার ফেলে আসা গাঁয়ে
নরম মাটির খাদে
ডুবে যাব আমূল গভীর ,
যেখানে নিরঞ্জনা দুই হাতে
রেখেছে সাজিয়ে
বুদ্ধ এক ভিক্ষুর
অমূল্য শরণ
কিম্বা হারাব সেই দূর সিন্ধু দেশে হেঁটে যাব
 নবীন পান্থ এর বেশে হিন্দু কুশ করে নেব জয়
অথবা গন্তব্য হবে
পূত তপোবন
সন্ধ্যার মহান ক্ষণে
মন্দ্র স্বরে গভীর গহন
গাইব বৈদিক কাব্য।
কোথাও বিচিত্র এই ক্লেদাক্ত জীবন
পড়বেনা মনে আরl
আহা, সেই পথ
গড়ে দিক আন্তরিক
মরণ মহৎ।