শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

দেবাশিস ঘোষ


দেবাশিস ঘোষ

লকডাউন

বাতাসে পেট্রোল পোড়া ঝাঁঝ নেই, ধুলো ওড়া নেই
গাছেরা এখন দুরন্ত সবুজ , পাখীদের উৎসব শুরু
কোনো রাস্তাই এখন রোমে যাচ্ছে না,
যে যার ঘরে ফিরছে সব রাস্তারা
আজ সবাই ঘরে সবাই, সবাই
কতদিন পশুরা, পাখীরা পৃথিবীকে পায়নি নিজের করে
এখন পৃথিবীটা তাদের
মানুষের নয়।
মানুষের জন্য আজ সারা পৃথিবীতে পেতে রাখা ভয়
ভয়ের পোশাক পরে নির্জনতার খোঁজে বিপন্ন মানুষ
মানুষেরা মানুষের থেকে দূরে আরো দূরে
কবেই তো দূরে সরে গেছে
মানুষ চেয়েছে ঘর, গাড়ি আর টিভির সোস্যাল
এখন পেয়েছে তাই
অজগর সেজে ঘর গিলেছে ছাগল








লং মার্চ

কিভাবে নগ্ন খিদে টেনে নেয় বাড়ি ছেড়ে দূরে
নির্মাণ শ্রমিক হতে, হোটেলের বয় হতে, কারখানায় ঘুমহীন রাত
কিভাবে খিদের জালে বয়স্ক পিতা মাতা, স্ত্রী, সন্তান রেখে
নক্ষত্রের মতো দূরে, ঘুরে ঘুরে পঞ্চবার্ষিকী
ব্ল্যাক হোলের সন্তানেরা খিদে হয়ে আমাদের পেটে পেটে জ্বলে
খিদের আগুনটাকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে সার্কাসের খেলোয়াড় তুমি
অনন্ত খেলা মেলে রাখো
#
এখন অসুখ কাল, কম্পাস কাঁটার মতো কাঁপছে সন্দেহ
ডানায় ডানায় উড়ে দূর দেশ পার হয়ে করোনা এসেছে এই পোড়া দেশে
শীতল মৃত্যুর কাঁটা নিয়ে
#
পরিযায়ী শ্রমিকের লংমার্চ, দিকে দিকে ক্রিসক্রস, ঘর-বাপোসী
হাজার হাজার মাইল, হেঁটে চলা হাজার বছর,
ফোস্কা ক্লান্ত প্রাণ সব হাজারে হাজারে
কচি শিশু, গর্ভবতী, পোড়া ত্বক রুক্ষ শ্রমিক
সূর্যেরও দয়া নেই, খাদ্য জল খুবই অনিশ্চিত
দুর্ঘটনা ওৎ পেতে, রাস্তায় মৃত্যু খেলা করে
পিঠে  বেঁধে মৃত্যু নিয়ে পরিযায়ী হেঁটে চলা, হেঁটে হেঁটে শূন্যতার দিকে
পুলিশের লাঠি বেয়ে রাজদন্ড নেমে আসে রাস্তায় রাস্তায়
তোমাদের লংমার্চ মাথায় মৃত্যু নিয়ে নির্মাণের দিকে
সিগারেট শেষ হলে চিরকালই প্যাকেটের নাম হয় জঞ্জাল স্তূপ
  






মুহূর্ত

শুধুই মুহূর্ত ঝোলে গাছে গাছে, রাস্তায়, নিভৃত চেয়ারে,
                          ঝুলে থাকা তারায় তারায়
     মুহূর্ত -- হাতের তালুতে লেগে -- গুঁড়ো গুঁড়ো বালি
           মুছে যায়, ঝরে যায় বাতাসে শুকোলে

    কখনো পেনসিল কথা, স্লেট -- মসৃণ -- শীতল, শুষে
       হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসা মুখের মিছিল
         বৃষ্টিদিন -- সারাদিন -- পুকুরের ঘাট
          দূরে ঝুলে চেনা দেশ -- শাদা দেশ
                 অচেনা -- অচেনা ভীষণ
  পেরিয়ে গেলেই যেন থরে থরে স্বর্গ ফুটে আছে

    জলে ভেসে মুহূর্তরা, চঞ্চুতে ডানা ঘষে --
 শাদা, কালো, খয়েরী, নীল, ভাসে সারাদিন
 আকাশে তুলে রাখি প্রিয় জল,
 সেলোটেপে এঁটে রাখি কিছুটা রোদ্দুর আর
  গোপনে জমিয়ে রাখি এক বাক্স ছায়া

দেওয়ালীর তুবড়ীর আলোয় আলোয় তাকে ফের,
হাওয়া এসে তরুণী গাছের ঝুঁটি নাড়িয়ে দিয়ে যায়,
জানালায় শ্যাওলা ধরে, শ্যাওলায় শ্যাওলায় মুখ...

গাছেরা হারিয়ে যায়, মেটে পথ, চায়ের দোকান
অনিবার্য চলে যায় স্পেস স্টেশনের দিকে --

চলে যাওয়া দাগ রাখে, যতক্ষণ আরো আরো
চলে যাওয়াদের দাগ, দাগের ওপর আরো আরো
দাগের ওপর দাগ ফেলে ফেলে চলে যায়, চলে যায় --

মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকে ফুল নিয়ে, অস্ত্র নিয়ে, অপমান নিয়ে
কেননা সেইসব মুহূর্তরা আমাদের, একান্ত নিজস্ব মুহূর্তরা।