মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

ইন্দ্রাণী সরকার



ইন্দ্রাণী সরকার
আলেয়া

মেলানো যায় নি একটি সরবতা ও একটি নৈঃশব্দকে |
নৈঃশব্দটি ছিল নদীর ধারে তার একলা ঘরে সজ্জিত,
হালকা মেঘে ভেসে যেত তার সলাজ চোখের দৃষ্টি |
হঠাৎই ঈশান কোণে একটা ঝোড়ো বাতাসে
ধুলিস্যাত হয়ে সব ভেঙেচুরে ছড়িয়ে গেল |
অনিশ্চিতের ঢেউয়ে দোলে ময়ূরপঙ্খী নাও |
স্বর্ণ শুভ্র ওড়না আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত,
অদূরে ডাহুক পাখিরা ডানা ঝেড়ে নিল |
অন্ধকারে ভেসে যাওয়ার মুহুর্তে
রাতের অন্ধকারে আলেয়া
এক ফুঁয়ে নিভে গেল |





শেষ ইচ্ছা

নিশীথের স্বপ্নে তোমায় খুঁজে ফিরি প্রিয়তমা
বহুদূরে যখন আমি খুব ক্লান্ত,
 বিপর্যস্ত
তখন তোমার মায়ার আঁচল অনুভব করি ।
বাইরে কালো ধোঁয়া, মানুষের কোলাহল,
খুব স্বল্প সময়ের এ বিশ্রাম
 |
এখনি যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে
তবু এইটুকু সময়ে তোমায় ভাবি
 |
সেই যে তোমার বসে থাকা জানলার পাশটিতে
আমার অপেক্ষারত,
 চোখেমুখে অল্প উদ্বেগ,
গাল দুটো উত্তেজনায় লাল,
 অল্প ভ্রূকুটি,
কোঁকড়া চুলে ঢাকা মুখটি যেন ফোটা পদ্ম
 |
কাছে আসতেই তোমার মুখের ভাব বদল
চোখের তারায় হাসির লুটোপুটি,
এগিয়ে এসে আমার হাত দুটি ধরে কাছে বসানো,
আঁচল দিয়ে মুখ মুছে তোমার অবাক তাকিয়ে থাকা;
এ সব কিছুই আমায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেয়
সাথে সাথে না পাওয়ার যন্ত্রনায় গলা বুজে আসে
 |
শোনো এই চিঠি লিখে গেলাম,
কেউ পৌঁছে দেবে তোমায় ।
যদি ফিরে আসতে পারি আবার
নতুন স্বপ্নে জীবন গড়ে নেব
 |
আর যদি না ফিরি কথা দাও কখনো
চোখে জল যেন না আসে আমার ভাবনায়,
মৃত্যুর পরেও আমি ওই মুখে শুধু হাসিটুকু লিখে যেতে চাই ||





ঐশ্বর্য্য
আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র আজও
অপেক্ষায় থাকে সাগরের পারে
যখন রাণীর মুকুট থেকে কোহিনূর
খসে খসে পড়ে পথের ধূলায় মেশে
তার পায়ের নূপুরের মুক্তকণা
উচ্ছ্বল সমুদ্রের ফেনায় ছড়িয়ে যায়
নক্ষত্র এসে ধরে নেয় রাণীর হাত
কিন্তু দূরত্ব শুধু আলোকবর্ষ সমান
আলোক্পথে আঁকা থাকে উপসংহারহীন
গল্পের মত এক বিষাদময় ঐশ্বর্য্য ||




বিস্তীর্ন পথ

ওগো অপূর্ব প্রেমিক, মুখ তুলে দেখো
এক ক্লান্ত উদাসী দুপুরে বিস্তীর্ণ পথ
পেরিয়ে এসেছি আমি তোমারি দুয়ারে ।
তোমার অস্তিত্ব কেবল আমার মনে
গভীর ক্ষতের মত নিয়ত জানান দেয় ।
কি বলে বোঝাই কত চাই আমি তোমারে ।
সঙ্গে বেলা অবেলার ভালবাসার ভ্রুণ,
যা তোমার স্পর্শে অঙ্কুরিত হযে নতুন
প্রজন্মের ভালবাসার উজান বওয়াবে ।
ঘুম ঘুম চোখে পেরিয়ে এসেছি মাইলের
পর মাইল শুধু একা, ভীষণ একা, কেবল
তোমায় পাবার ইচ্ছে আমায় জড়াবে ।
নৈঃশব্দের বুক চেরা আলোর জোয়ারে
তোমায় ভাসিয়ে তোমার বুকে কাঁপা কাঁপা
আঙুলে এঁকে দেব ভালোবাসি ভালোবাসি ।
নিঃশ্বাসের প্রগাঢ়তায় ব্যাকুলতা বাড়তে
থাকা মুহুর্তে সমস্ত সৌন্দর্য্যের নিবন্ধনে
যাপিত আবরণ ছেড়ে ক্রমশ: কাছে আসি ।





তোমার জন্য

স্মৃতিগুলো জমা ছিল মনের গভীরে
প্রেমের সিম্ফনি, ভ্যান গগের চিত্র
সবই জমা রেখেছি তোমার জন্য |
শুধু একবার আমায় স্পর্শ করে দেখো
কতটা ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি |
তুমি একবার ছুঁয়ে দিলেই কবিতাগুলো
অঝোরে ঝরে যায় কাগজে কলমে |
শুধু একবার তোমার ওষ্ঠের অমৃতস্বাদ
দিয়ে আমার কবিতায় অমরত্ত্ব দাও |
আমি আলোর জোনাকি সেজে তোমার
মনের ঘরে তুমুল রোশনাই এনে দেব |
একবার ডেকে দেখো সব কিছু ফেলে রেখে
তোমার মনের আবাদী জমিতে আল্পনা
এঁকে দেবো তোমায় নতুন করে সাজাতে |