মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

তৈমুর খান



তৈমুর খান

  হৃদয়েরা পাথর হয়ে পড়ে আছে
      
               ___________________________
নির্জন রাস্তার বাঁকে কার কথা মনে পড়ে  ?
কার ঘ্রাণ আসে ?
কোথাও ফোটেনি ফুল
হৃদয়েরা পাথর হয়ে পড়ে আছে

স্মৃতির চোখে জল শুকিয়ে গেছে
রঙিন হাতের স্পর্শে উৎসুক সকাল আর নেই
শুধু একা অনন্ত হাসে বৈরাগ্যের আলোয়

কার ঘ্রাণ  ?
নৈঃশব্দ্য সরাই আমি
উপলব্ধির তরঙ্গ তুলে তুলে
সেই রঙিন জাদুর কল্পস্রোতে
ভেসে যাওয়া শৌখিন তরণি
মোহিনী চুমুর ভারে টলোমলো

দেখতে দেখতে ঝাপসা দিন
গোপন কোকিল উড়ে যায়




অস্পৃশ্য
               _________
প্রতিটি মধ্যরাতে আমাকে অস্পৃশ্য মনে হয়
আলো জ্বালি
আয়নার সামনে দাঁড়াই

শব্দগুলি কাছে আসে না
উপমা হি হি হাসে
ব্যঞ্জনা লুকিয়ে যায়

যতদূর হাত বাড়াই
কোথাও স্বপ্ন নেই
এক ভিখিরির ক্ষুধার্ত জাগরণ পড়ে আছে

রাত্রির নোনা স্তন আর পরকালের অলৌকিক চাবুক
শূন্যতা বিস্তার করে শুধু
নক্ষত্রখচিত শাড়ি পরে
কোনও যুবতী দূরে হেঁটে যায়

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লান্ত হতে থাকি
কান্নারাও এখন আর কাঁদাতে পারে না




আমার কোনও বৃংহণ নেই
              ______________________
কার কে বিকল্প পুরুষ ?
এইরাতে অনবদ্য হয়ে ওঠে
কেউ ডানাওয়ালা ঘোড়া
কেউ দ্রুত হরিণ
কেউ অসম্ভব মৃগরাজ

আমি অরণ্যের ভেতর নিজেকেই চিনি না
আমিও কি বিকল্প পুরুষ  ?
ছুটতে পারি না
আমার কোনও বৃংহণ নেই
মাথার উপর সিঁদুর রঙের মেঘ

গোধূলির চাদরে আগুন লেগেছে
শুধু ভয় , ফিসফিস কথা
পোড়া ক্ষত সমস্ত পিঠ জুড়ে

দুটো শিং শূন্যতা স্পর্শ করে
লেজের তাড়নায় লজ্জানত পরিচয়




দুলতে দুলতে দ্বিফলা বেণী চলে গেল
           ________________________________
গাড়িটি পৌঁছয়নি এসে
প্রত্যাশা অপেক্ষায় থেকে থেকে বৃদ্ধ হয়ে গেছে
মাটির বাড়িটিও আর নেই
লাল মোরামের রাস্তার ধারে বৃদ্ধ টিউবওয়েল যে রোজ জল দিত হাতমুখ ধুতে
তারপর কাঠের চৌকিতে বসে পা দোলানো....
কত ইচ্ছেগুলি পায়রা হত

অঙ্ক ও ব্যাকরণ ঠিকঠাক বোঝা হয়ে গেলে
কিছুক্ষণ চোখে চোখে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকা
বিকেল হাসত আমাদের, পাখিরা শূন্যে পাক খেত

গাড়িটি পৌঁছয়নি আর আবছা আঁধারে
বিবাহের নিমন্ত্রণ কার্ড দিতে দিতে হাত কেঁপেছিল
আকাশে চৈত্রের মেঘে গর্জন উঠেছিল
দুলতে দুলতে দ্বিফলা বেণী চলে গেল
গণিত আর ব্যাকরণে ঢাকা গেল স্বর
দুফোঁটা অশ্রুর দাগ এখনও চোখের কোণে চিকচিক করে




উন্মুখ ডাকছে আমাকে
          ___________________
উন্মুখ ডাকছে আমাকে
স্কুল বারান্দার নীচে কৃষ্ণচূড়া গাছ
এক আঁচল রোদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
কয়েকটি শালিক নেমেছে সকাল সকাল
ঠাণ্ডা বাতাসে উন্মুখ ডাকছে আমাকে

স্মৃতির কৌটা খুলে পেন্সিল বের করি
শূন্যে একটা মুখ এঁকে নিই
হলুদ জামায় সাদা সাদা ফুল
চুলগুলি এলোমেলো উড়ছে বাতাসে
ত্রয়োদশী, কী নাম তোমার   ?

চেনা চেনা মুখ , মুখের ভাষাও
আমরা পঁচিশে বৈশাখের মঞ্চের দিকে হাঁটছি

উন্মুখ ডাকছে আমাকে
সাদা সাদা ফুলগুলি কথা বলছে আজ




একটা ধূসর পৃথিবী ঘুরছে
         ________________________
কপালে চোখ উঠে গেল
আর কপাল থেকে চোখ নামল
চোখের কী দোষ  ?
কখনো কখনো হাতি এসে উঠোনে দাঁড়ায়
কখনো কখনো চাঁদ নিয়ে ফুটবল খেলে পাড়ার ছেলেরা

আমরা আঁকশি বেঁধে মেঘ পাড়ি গ্রীষ্ম দুপুরে
আর নাটকে ময়ূর সাজাই নিজেদের রঙিন পালকে
যদি ভাবো দূর মাঠে একটি পালকি চলে যাচ্ছে
ওই প্রাচীন পালকিটিতে আমরাই ছিলাম
আর আমাদের কাদম্বরী অকালেই যে চলে গেছে বহুদূরে

এইসব দৃশ্যের ভেতর ইতিহাসের চলমান পা টের পাবে
বর্তমানের ক্রিয়ায় তাদেরই অভিযোজন

নরবলি দিয়ে কাপালিক রক্ত মুছে নিচ্ছে
অথবা ডুবে যাচ্ছে জাহাজ
সেইসব সময়ের ফুলকির ভেতর
মহাসমারোহ প্রজ্জ্বলন দেখতে দেখতে
চোখ কপালে উঠে গেল
এবং চোখ কপাল থেকে নেমে গেল
শুধু চোখের ওঠানামার মাঝখানে
একটি ধূসর পৃথিবী ঘুরছে টের পাই