সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

শমিত সান্যাল




আত্মহননের সুচারু পথ
শমিত সান্যাল

এই পথে কেন এলে
আয়না ভেঙে সশরীরে একা,
রক্ত আর কান্নার আলো জ্বেলে
বাদুড়ের ছায়া অনুগামী তুমি জন্ম ভিখারী?

পথে পথে কারা যেন নিয়মের ইতিহাস
লিখে রেখে গেছে তুমি ব্যর্থ পড়ুয়া মূঢ় হাবা
শিখেছ শুধু কিছু শর্তহীন গুঢ় মন্ত্রপাঠ
ভালবাস শূন্যতা, অতীন্দ্রিয় প্রিয় চারুভাষ৷

এ পথে তুমি আর এসো না বিস্মরণপ্রণত আকাশ
এ পথে নদী নেই, মেঘ নেই, গা ভেজানো বৃষ্টি নামে না
এই পথে রাখা হবে তোমারই ছায়াহীন এপিটাফ৷





সাদা ক্যালেন্ডার
শমিত সান্যাল
কাল দেখা হবে
এই বলে আমরা দুজনেই
সময়ের ঊর্ণনাভ জালে
জড়িয়ে পড়েছি মহাকালে৷
ক্রমশ দূর থেকে অতিদূরে
হারিয়ে গিয়েছি এক অলীক দুপুরে,
বিকেলে উড়াল পথে সন্ধে নামে ছায়ার অভাবে
অরূপকথার ঢেউয়ে বন্দরের তীব্র আসবে৷

তারপর শুধু অন্ধকার৷

তারপর শুধু বন্ধ দ্বার৷

ভুবন ভোলানো ঝড়ে উড়ে যায়
দিন ক্ষণ মহোৎসব, আলোক মালায়
ব্যক্তিগত ক্যালেন্ডার বেদনাবাহিত৷





এই অবেলায়
শমিত সান্যাল

এই অবেলায় আমি বার বার ফিরে যেতে চাই
তোমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছের আপন যাপনে
স্নানঘাটে রোদে জলে গা ভিজিয়ে ঝড়ের আহ্বানে
ডুব সাঁতারের টানে নদী ভেবে যদি যেতে হয়
তবে যাই
অতলে দোলাচলে ভেসে যেতে থাকি অস্তাচলে৷

এই অবেলায় আমি আবার এসেছি হাতে অকৃপণ যা কিছু সঞ্চয়
দরজা খুলে দ্যাখো
হাত রাখো হাতের ওপরে ওই অনামিকা দেখি আজো সবুজ পাথরে
উল্লসিত জেগে আছে অচেনা এ বিপর্যস্ত শরীরের আগুনে ও স্রাবে,
পা রাখো নদি ভেবে ঘূর্ণাবর্তে
ভেসে চলো শরীরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে সিক্ততায় অতল আহ্বানে
গানে গানে ছায়া সঙ্গমে৷
আজ এই বিকেলের শেষে দ্যাখো রেখেছি তোমার কাছে অসুখের স্মৃতি
তাই এই অবেলায় বার বার ফিরে যেতে চাই আমি বাহিরে অন্তরে
হারানো জন্মান্তরে৷





শয়ন ভঙ্গিমা
শমিত সান্যাল

এই সব শব্দগুলি কোনোদিন স্পর্শ করে নি
তোমার ভালবাসা, বাধাহীন উছল ফুসফুস
এই সব শব্দগুলি অধীনতা চায় নি কখনো
খোলা মাঠে লাগামহীন ছুটে গেছে চিত্রকল্প ছিঁড়ে
অনিবার্য সূর্যের দিকে
রেখে গেছে অর্থহীন পরম্পরা, ভাঙা আলমারি
ফেলে দিয়ে গেছে যুগ যুগান্তের ধর্ম কর্ম, অন্তর্বাস
খোলা জানলা, পরিত্যক্ত বিছানা ও ধ্রুপদী কামনা
অন্ধকার নেমে এলে তবু তুমি এলে এই সম্ভাবনাহীন
ঢেউয়ে ঢেউয়ে সমুদ্রের ব্যর্থকাম রিক্ত প্রান্তরে খুশির আবহে

যদিও এই সব শব্দগুলি কোনোদিন দেখে নি আড়াল থেকে
আমার এই পুজো পাঠ, বিপর্যস্ত শয়ন ভঙ্গিমা





কেউ নই
শমিত সান্যাল

কবি তো আসলে কেউ নয়
শব্দের ভনিতা ও অক্ষরে দোলাচলে
কবি খুব মিথ্যে কথা বলে
খিদে পেলে কবিরাই কবির মাংস রেঁধে খায়৷
কবিরা মরণশীল, বেঁচে থেকে সোনার থালায়
কবিতার শাঁস জল শুষে নেয় আলোকমালায়
সত্যের ছায়া দেখে ভয় পায়,
কবি তো আসলে কেউ নয়৷