সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়




THE NIGHT OF THE SCORPION
BY NISSIM EZEKIEL

I remember the night
my mother was stung by a scorpion.
Ten hours of steady rain
Had driven him to crawl beneath a sack of rice.
Parting with his poison
Flash of diabolic tail in the dark room....
He risked the rain again.
The peasants came like swarms of flies
And buzzed the name of God
A hundred times...
To paralyse the evil one.
With candles and with lanterns
Throwing giant scorpion shadows
On the mud baked walls
They searched for him;
he was not found.
They clicked their tongues
With every movement the scorpion made
His poison moved in mother's blood, they said.
May he sit still, they said.
May the sins of your previous birth
be burned away tonight....they said.
May your sufferings Decrease the misfortunes of your next birth, they said.
May the sum of all evil
Balanced in this unreal world
Against the sum of good,
Become diminished by your pain.
May the poison purify your flesh
of desire, and your spirit of ambition, they said.
And they sat around the floor
With my mother in the centre,
The peace of understanding on each face....
More candles, more lanterns
More neighbours, more insects,
And the endless rain.
My mother twisted through and through
Groaning on a mat.
My father,sceptic, rationalist,
Trying every curse and blessing
Powder, mixture, herb and hybrid
He even poured a little paraffin on the bitten toe
And put a match to it.
I watched the flame feeding on my mother
I watched the holy man perform his rites
To tame the poison with an incantation.
After twenty hours
It lost its sting.
My mother only said
Thank God, the scorpion picked on me
And spared my children.


বাংলায় অনুবাদ

বিষহরি রাত
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

সেই কবেকার ছোট্টবেলার কথা,
মনে পড়ে,
কোনো এক বর্ষামুখর রাতে,
অবিশ্রান্ত জলের তোড়ে
চালের থলের পিছে
লুকিয়েছিল, কালো কাঁকড়াবিছে--
মায়ের পায়ে সবটুকু বিষ ঢেলে,
অন্ধকারের শয়তান তার হুলের ঝলক তুলে,
হারিয়ে গেল অঝোর ধারার মাঝে।
খবর পেয়ে পড়শি কিষাণ যত
দলে দলে পঙ্গপালের মত
এলো--------
হাতে নিয়ে মোমের বাতি,
হ্যারিকেনের আলো--
মাটির ঘরের মেটে দেওয়াল,
পড়ল তাতে বৃশ্চিকেরই ছায়া, কালো কালো।
ভগবানের নাম,
কাঁপা গলায় জপলো শতবার,
দূর করতে অমঙ্গলের মার।
ব্যর্থ হয়ে খুঁজলো তারা তাকে,
অদ্ভুত এক আওয়াজ তুলে মুখে--
কাঁকড়াবিছের প্রতি পদক্ষেপে,
বিষ ছড়াবে মায়ের শিরায় শিরায়-
বলল তারা, বাক্য মেপে মেপে--
''পূর্বজন্মে পাপ করেছ যত,
পুড়িয়ে দেবে আজকে রাতের ক্ষত।
আজকে রাতের কষ্ট জ্বালা তোমার,
জুড়িয়ে দেবে
পরজন্মের দুঃখ শত শত।''
বলল তারা--''এ সংসারে মন্দ ভালোর নিক্তি মাপা আছে,
ভালোর পাল্লা ভারি হবে,
মন্দ তখন হার মানবে
কষ্ট সওয়ার কাছে।''
বসল তারা মায়ের শয্যা ঘিরে।
বলল আবার,'' বিষের দহন,
শুদ্ধ করুক এই দেহ মন,
অন্তরেরই কাম কামনা
পুড়িয়ে করুক খাঁটি সোনা''---
বলল তারা, শান্ত মুখে,
মায়ের শয্যা ঘিরে।
রাত বেড়েছে, ভিড় বেড়েছে,
পাল্লা দিয়ে জল বেড়েছে--
মোমের বাতি, হ্যাজাক আলো,
জলজ পোকার ধুম লেগেছে।
মেঝেয় পাতা শীতলপাটি,
ব্যথায় মায়ের উথালপাথাল,
অবিশ্বাসী যুক্তিবাদী বাবার চেষ্টা---সবই বিফল।
মন্ত্র তন্ত্র জড়িবুটি, ওষুধপত্র হরেকরকম,
তেল পুড়িয়ে আঙুল গোড়ায়,
আগুন দিলো বাবা যখন---
লকলকিয়ে, মায়ের পায়ে,
জ্বলছে আগুন, দেখছি ভয়ে---
ওঝার জাদু, বশীকরণ,
বিষ নামাবার নানান ধরণ--
অবশেষে,
একটি দিনের পরে, মা-কে রেহাই দিলো বিষের জ্বালা।
এত ব্যথার পরেও,
মায়ের মুখে একটি কথাই শুনি---
''ঠাকুর, তোমায় গড় করি গো আমি,
বিছের নজর আমার ওপর ছিল,
ছেলে মেয়ে রক্ষা পেল, ঠাকুর,
বাঁচিয়েছিলে তুমি, অন্তর্যামী!''







ঝঞ্ঝাবতীর গল্প
**************
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঊর্মিমুখর কিশোরবেলায়
স্বপ্নজগৎ কুহকময়
ঝঞ্ঝাবতীর দিন কেটে যায়
অনাগতের আশংকায়।

সবুজ মনের ঈশান কোণে
নর্মসখার পদক্ষেপ
ঝঞ্ঝাবতীর মর্ম কাঁপে,
স্বপ্ন ভাঙার আলেখ্য---

কুজ্ঝটিকার অন্ধ আলোয়
অন্তবিহীন পথ চলা
সঙ্গে কে গো, ঝঞ্ঝাবতী?
আপন ভাগ্য, চঞ্চলা।

ঝঞ্ঝাবতীর কুঞ্জবনে
অলীক আশার গুঞ্জরণে
অশ্রুদীঘল পল্লবে তার
নূপুর বাজে, অনুষ্টুপ

ছন্দে নাচে ইচ্ছেময়ূর,
অচিন বাঁশির অশ্রুত সুর
দিগন্তলীন হিরণ্ময়ী,
চোখের তারায় বিশ্বরূপ।

ঝঞ্ঝাবতীর হৃদফোয়ারা
বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে-
চিরন্তনী হিরণ্ময়ীর
অলোককিরণ উদ্ভাসে।

ঝঞ্ঝাবতীর ব্যথার তরী
আলোর দেশে নিরুদ্দেশ,
সুখেই আছে ঝঞ্ঝাবতী-
এবার আমার গল্প শেষ।






বেঁচে থাকা
**********
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

চাঁদের রক্ত দেখেছ তোমরা কখনো?
গলানো রুপোর মত নেমে এসে
ভিজিয়েছে পৃথিবী-শরীর?
আগের দিনের পোড়া সূর্যের বুক থেকে,
ফিনিক্স পাখির মত ওঠে নতুন সূর্য----
আবার পুড়ে ছাই হবে বলে----
দেখেছ তোমরা?
স্বপ্নহীন স্যাঁতসেতে দিনগুলো যায়----
যত বলি, অগস্ত্যযাত্রায় যা না---
আর ফিরিসনা তোরা আমার কাছে----
তবু,
ক্লান্ত কেরানির মত,
বিকেল গড়ালে, গুটি গুটি পায়ে
আমার আস্তানাতেই ফিরে আসে--
উঃ, অসহ্য!!!!
একচক্ষু হরিণের ভীরুতা নিয়ে
উঁকি মারে মাহেন্দ্রক্ষণ---
ইচ্ছে হয় ঠাস করে এক চড় মারি
অসময়ের কারবারি যত----
সেই আঁচলধরা ন্যাকাবোকা ভিজে সপসপে দিনগুলো,
তীব্র শোকের আগুনে পুড়িয়ে,
খটখটে করে শুকিয়ে নিয়েছি।
চাঁদের রক্ত আর সূর্য পোড়া ছাই-এর চিহ্ন নেই কোথ্থাও-----
পড়ে আছে শুধু আমার মাঝজীবনের দোসর----
আমার বেঁচে থাকার অভ্যাস।







বেলা যায়
*********
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

যাচ্ছে বেলা
ভ্রষ্ট খেলায়,
নষ্ট বাঁশি
রথের মেলায়।

আড়াল থেকে
কে যায় ডেকে,
''সময় গেল''--
নিভছে আলো।

চেতনপারে
নামছে ছায়া,
হাঁকছে মাঝি
''শেষের খেয়া''---

কাজের ঝোঁকে,
মায়ার শোকে,
দিন যে গেল--
মেঘ ঘনালো।

প্রলয় ঝড়ে
হুহু স্বরে,
থির বিজুরি
মন্ত্র পড়ে।

শূন্য ঘাটে
দাঁড়িয়ে একা,
তোমার সঙ্গে
হঠাৎ দেখা।

কৃষ্ণপাতাল,
অতলহারা--
বাঁধনছেঁড়া
সৃষ্টিছাড়া।

আপন মনের
ঈশ্বরী সে,
তোমায় ছুঁয়ে
যাচ্ছে মিশে---

সূর্য পাড়ি
দিচ্ছে হেলায়,
সেই বেহুলার
ইচ্ছে ভেলা।







কলকাতা, উনিশশো পঁচাত্তর
**************************
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রথাগত পথে কিছুতেই হাঁটেনি সে
পুঁথিগত জ্ঞানে বিস্তর বেনোজল--
ক্ষমতার হাতে সুবিধাবাদের গন্ধ,
এই বিশ্বাসে জ্বলছিল দিনকাল।
একশো বারোর উর্দি-চাকর যত,
বড়, মেজো, সেজো ভেতো আমলার দল-
মাইনে-পোষ্য মাস্টার কেরানিরা
শ্রেণীশত্রু তো--- খতম করবি চল!!
রাষ্ট্র তখন সাবালক হয়ে গেছে
রাষ্ট্রপিতার স্মৃতি হয়ে গেছে ক্ষীণ-
ঘরের ছেলেরা বিপ্লব করবে কি?
সবক্ শেখাবে রাষ্ট্রের গিলোটিন।
ঊরুতে লুকোনো বাসি বুলেটের ক্ষত,
চোখের আগুনে প্রতিস্পর্ধী ভাষা--
দিনবদলের আঁচে সেঁকা স্বপ্নেরা
মরে গেছে কবে---তবুও মরেনি আশা।
সময়ের বয়ে চলা থামল না তবু--
সূর্য ডুবলো মেঘলা তেপান্তরে,
দূরের গ্রামের তীক্ষ্ণ ছেলেটা শুধু,
নম্বরী লাশ হয়ে লাশকাটা ঘরে---
ট্রামলাইনের লোহায় মর্চে ধরেনি
খিদিরপুরের ডকে মাল ওঠে রোজ,
রেলইয়ার্ডের স্মাগলারেরাও আছে--
রোজ রাতে আছে নেড়িদের মহাভোজ।
প্রেসিডেন্সির ঠান্ডা বারান্দায়,
একফালি ছায়া রোজ নেমে আসে একা,
দিনবদলের ডাক দিলো কে যে কাকে--
জ্বলজ্বল করে এখনো দেওয়ালে লেখা।







গণতান্ত্রিক
**********
সুকন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

বসন্ত শেষ। রুক্ষ প্রহর সাজছে
হরেক রং লিখনে,
মুখোশ খোঁজে ঝলমলে সাজ
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

সমাজসেবার সাতকাহনে
পর্দা ফাটে বসার ঘরে,
লালপাহাড়ির বন্ধ্যা মাটির
দুঃখী ভিটে গুমরে মরে।

উড়ছে টাকা--- যে ধরবে তার-
বিবেক গেছে চাঁদের বাড়ি---
দুবাই? নাকি সুইটজারল্যান্ড?
নোট-বিমানে লম্বা পাড়ি।

দোরের গোড়ায় রাজপেয়াদা,
আশ্বাসে তার হৃদয় নাচে--
সঙ্গে আছেন সমাজসেবী,
মধুর পিছে হুলও আছে।

ইস্তাহারে কাজের বহর,
কোথাও রঙিন প্রতিশ্রুতি
শহর গাঁয়ের রাস্তা জুড়ে
ভোটভিখারির আত্মরতি।

কালও যারা শত্রু ছিল
আজকে দেখি গলায় গলায়--
মুখ আর মুখোশ গুলিয়ে গেছে,
অর্জুন? না বৃহন্নলা?

লগ্ন যত এগোয় তত
কাঁপন লাগে শিরদাঁড়াতে,
লাশের মাথায় প্রতীক আঁকা
ভাত ফোটে রাজনীতির তাতে।

ব্যাপার দেখে পুলক জাগে
চিত্ত ভোলে ক্ষুধার জ্বালা
সর্বজনীন উৎসবে আজ

বঙ্গভূমি রঙ্গশালা