সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

গৌতম দত্ত


এমন করেই যদি -
*********************
গৌতম দত্ত

এমনই সেদিন ঝোড়ো-বাদল রাতে
কদম রেণুর গন্ধে বাতাস ভরা
চুলের ডগায় জলচুমকীর ছটা
মনের মাঝে বাজছিল একতারা।

তোমার অমন ডাগর ডাগর চোখে
বৃষ্টি-ছাঁটে জলের রেনুর ছোঁওয়া
একখানি হাত রেলিঙপরে রাখা
খোলা চুলের গন্ধে তোমায় পাওয়া।

বাদল রাতের বুক চেরা সেই আলো
তোমার মুখেই রুপোর ঝলক হানে
দিনের সে মুখ রাতের আলোয় ভরা
মাঝ রাতে চাঁদ, আলোর কোটাল আনে।

এমন করেই রাতের ঝোড়ো হাওয়া
থামবে এসে তোমার  মুখের পরে
হঠাৎ করেই সকাল ফোটার আগে
চলোই না যাই, অনেক, অনেক দূরে -।

ধলেশ্বরীর পারেই না হয় যাবো
একটু দূরেই থাকবে পিসির বাড়ি
কুঁড়েঘরের খড় ছাওয়া ছাদ পরে
লাউ ডগাটা দুলবে হাওয়ায় তারি।

ঘরের দাওয়ায় ভরা চাঁদের আলো
তোমার চোখে দেখবো ঝুলন খেলা
তোমার কোলেই রাখবো আমার মাথা
স্পর্শ দিয়েই গাঁথবে তারার মালা।

আমার দুচোখ আধেক আবেশে বুঁজে
আস্বাদে মাখে সে অনুভূতির ক্ষণ
তখন তোমার আঙুল দ্বিধায় কাঁপা
ভাবি মনে মনে, এই দিলে চুম্বন !

তোমার চুলেও আমার আঙুল খেলা
উন্মন মন তোমার গন্ধ মাখে
তারাভরা সেই রাতের আকাশ ঘিরে
তুমি আমি ছাড়া পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে।

তোমার দুঠোঁটে উদগ্রীব গান আসে
সলাজে কেন যে এত শুধু ভেবে যাও
মাথা নীচু করে আরেকটু কাছে এসে
তোমার ঠোঁটের অস্ফুট  ছোঁয়া দাও।

তারপরে নয়, সারা রাত হবে খেলা
কবিতায় গানে রাত যাবে শুধু ভেসে
তোমার কোমল শরীরের ঘ্রাণে ঘ্রাণে
ডুবে যাবো আমি বাকি রাত, অক্লেশে।

এমন করেই প্রতি রাতে ভোর হবে
হাল্কা আলোয় তারাগুলো মিশে যাবে
স্বপ্ন নিয়েই কাটাবো সারাটা দিন
কবে যে আবার ফিরে পাবো এই ভাবে।

২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬





*********************
অচিনপুর -
*********************
গৌতম দত্ত

পাহাড় ছিল দূরে
ছিল পাঁচিল ঘেরা বাড়ি
সামনেতে লালপথ
বিস্তৃত আড়াআড়ি।

দূরে ঘোমটা খসা মেঘ
নীচে সবুজ গাছের মায়া
ছাদে উড়ছিল লাল শাড়ি
নিচে বইছিল সেই হাওয়া।

আমার মনের কোনে আলো
যেন লজ্জা পাওয়া দিন
চোখের তারায় খোঁজা
স্বপ্নে পাওয়া ঋণ।

ঋণ মুকুবের তালে
যদি শরীর ছুঁতে পারি
তোমার কাজল কালো চোখ
অবাক হবে ভারী !

সময় যদি থাকে
রাত কাটানোর ছলে
তোমার ছাদে একা
চাঁদ উঠবে জ্বলে।

তখন নিশুত রাতে
তোমার আমার ছায়া
দূরে গাছের সারি,
মনে ছবির মায়া।

এমন করেই যাবো
হয়তো কোনোদিন
তৈরী থেকো তুমি
আমার সে নন্দিন !

৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬






*********************
তুই এলি -
*********************
গৌতম দত্ত

এই ছিলো তোর মনে ?
সেদিন আমের বনে
বর্ষা যখন উথাল পাথাল
ডাক পাঠালি তুই।
কেমন করে যাই – ?
তোর কাছে তো বৃষ্টি ছিল
সবুজ সবুজ পাতার ফাঁকে,
রোদ যেন সে, লজ্জা ঢাকে,
শ্রাবণ মেঘের উতল ঝড়ে
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।
টুপ টুপ টুপ আওয়াজ নিয়ে
ঘরকন্না ছেড়ে দিয়ে
হঠাত কেন ডাক দিলি তুই,
সেদিন অমন করে ?
ভেসে আসা ডাকের সুরে
মনটাকে তুই, নিজের করে
আনলি আমের বনে।
তোর সে ডাকে, মাতাল হাওয়া
বলল আমার কানে
এক্ষুনি যা, এক্ষুনি যা
নইলে যাবে বৃষ্টি ধরে
শ্রাবণ মেঘের আকাশ ভরে -
রোদ উঠবে হেসে।
বকুল পারুল কদম গাছে
ভিজে বাতাস থমকে আছে
পাতার মুখে জল টুপটাপ
এই খসল বলে - ।
তোর সে চোখে অবাক চাওয়া
পিঠের ওপর সে কোন মায়া
টানলো আমায় তোর দিকে, তাই
ছুটে গেলাম কাছে।
বৃষ্টি ভেজা সারা শরীর
জল থই থই হলদে নদীর
বাঁকে বাঁকে ফুটে আছে
কত দোলনচাঁপা।
এক এক করে স্পর্শ নিয়ে
চোখের পাতায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বুক ভরানো গন্ধ নিয়ে,
থামল আমার মন।
তোর মনেতে তোর শরীরে
মিশে গেলাম ধীরে ধীরে
বৃষ্টি এল তুফান তোড়ে
অন্ধকারের সাথে।
নাম-না-জানা সে কোন পাখী
শীষের সুরে জমিয়ে দিলো -
মেঘমল্লার রাগ।
তুই তো তখন জাপটে ধরে
চুমোয় চুমোয় আঁজলা ভরে,
নিঙড়ে নিলি আমার মনের
গোপন যত দাগ।

২১ শে জুলাই, ২০১৫






(তুই সিরিজের ১ম কবিতা)
*********************
দেখি মুকুটটা তো পড়ে আছে - রাজাই শুধু নেই” -
*********************
গৌতম দত্ত

আরো কতোকাল নীরবতা মাখা মুখ,
শ্বেত পৃষ্ঠায় আঁকিবুকি মুছে দেবে -
তুলির আঁচড়ও বিলায়িত অক্লেশে ;
কলিযুগ নাকি এভাবেই পথ ছোঁবে।

কতো না সংজ্ঞা, নানারূপে বহমান
যুক্তির জালে ম্রিয়মান নানা প্রথা,
উটপাখী শুধু লুপ্তই নয় আজ
স্মৃতির পাতায়ও অরাজক দৈনতা।

ক্রান্তির চাকা দ্রুত রসাতলগামী,
এমন কথা তো, ছিল নাকো ব্যাকরণে।
কতো না যুগের সভ্যতা ছুঁয়ে এসে
বৈদিক মন, হারালো কোথায় ? কে জানে !

সারা পৃথিবীটা ছন্দে গাঁথবে মালা
সব সীমারেখা উপড়োবে একটানে ;
একটি গ্রামের একটি মোড়ল দেবে
যত কিছু আশা, বেঁচে থাকবার মানে।

এমন স্বপ্ন দূরাগত কোনো দিনে
দেখা যেতে পারে বলেছিলে এক জন,
সব মানুষেরে এক গ্রহ এক জাত - !
কি জানি কিভাবে জুড়ে যাবে এত মন।

সুজাতা বানানো পরমান্নের স্বাদে
জাতক এসেছে ফিরে ফিরে বার বার ;
নিমাই-চরিত হয়নি তো তবু শেষ,
কেউ তো বাঁধেনি তাঁর স্বপ্নের তার।

হাজারো প্রাণের সংবেদ ধ্বজা তুলে
একীভূত হয়ে কিভাবে গাইবে গান।
বহুমুখী যতো হীনমতি সংবেশ ও,
যদি মেশে, তবে বিনাশিত বীজধান।

সৃষ্টি ব্যহত নব নব ধারাপাতে,
অশুচি হয়েছে প্রাকপুরানিক”-বাদ ;
পথ যে এখনো গোলোকধাঁধায় ঘোরে
ছদ্মতাপসে বিকশিত সব সাধ।

রাজা চলে গেছে মুকুটটা পিছে ফেলে
জনগনে খোলে মুকুটের মণিরাজি।
বোধহীন পলে মঞ্জিমা দূরীভূত
ফিরবে কি আর ফুলে ভরা সেই সাজি ?

৬ই জানুয়ারী, ২০১৬






*********************
যদি রাত   সারারাত
*********************
গৌতম দত্ত

যদি রাত   সারারাত বৃষ্টি ঝরে যায়
আর  বাগানে বকুল ঝরে হাওয়ায় হাওয়ায়,
তখনো তোমার প্রেমে মগ্ন হতে পারি ;
রাত আর সারারাতে সে তুমি আমারি।

ঝড়ের আওয়াজে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়
জানালার ফাঁক দিয়ে আলোর ঝলক,
তোমার মুখের পর চোখ চলে যায়
তৃপ্তির ঈশারায় বন্ধ দু-চোখ।

কত স্মৃতি কত ছবি ভীড় করে আসে
বৃষ্টির শব্দেতে ভিজে ওঠে মন,
টুপটাপ শব্দের হিন্দোল ভাসে
আমার দুবাহু পরে তোমার জীবন।

যদি রাত সারারাত বৃষ্টি ঝরে যায়
আর বাগানে বকুল ঘ্রাণে হাওয়ায় হাওয়ায়,
মিশে যায় সবকিছু  মিশে যায় সব
সারারাত দু-জনের বোধ অনুভব।।